দুই দিনের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে খেটে খাওয়া মানুষের মুখ মলিন
॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
শরতের নীলকাশ, সাদা মেঘের ভেলায় প্রকৃতি ভেসে যায় টানা বৃষ্টির ছোঁয়ায়। কারও জন্য রোমাঞ্চকর মন মাতানো পরিবেশ, আবার অনেক ভুখা লোকদের দুর্ভোগের নেই শেষ। গতকয়েক দিনে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা টানা বৃষ্টির ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলাতেও নেমেছে প্রবল বৃষ্টি। প্রকৃতির এমন বর্ষণমুখরতায় মলিন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের মুখ।
দেখা যায়, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ার ডাক বাংলা, বাজার এলাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাঙ্গালহালিয়ার বাজারের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা, যান ও মানুষের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া রাজস্থলী সড়কের সেনা বাহিনী ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় জমেছে পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পানি। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছেন না সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বাঙ্গালহালিয়া সড়কে অটো রিকক্সা চালক রতন বলেন, বৃষ্টির কারণে গত তিনদিন ধরে আয়-রোজগার একদম কম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার ও বুধবার রাজস্থলীর দুইটি হাট বাজার মানুষ বাজার ক্রয়বিক্রয়ে বের হয়। কিন্তুমুষলধারে বৃষ্টি হওয়াতে হাটবাজারে তেমন বের হচ্ছে না মানুষ ফলে তাদেরও আয় কমে গেছে। চাইমুচিং মারমা নামে আরও এক রিকশাচালক বলেন, দিন আনি দিন খাই। বাজারে গেলেই সবকিছুর দাম সাধ্যের বাইরে। এর মধ্যে এরকম আবহাওয়ায় বর্তমানে সংসার চালানো বড় দায়।
উপজেলার ঝাল মুরি ও চানাচুর বিক্রেতা এক ব্যক্তি বলেন, টানা বৃষ্টির জন্য আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজস্থলী বাজার হাটের দিন মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের জিনিষ কেনার জন্য বাজারে আসে। সারা সপ্তাহের রুজি বাজারে করা যায়। কিন্তু এই বুধবারে হাটের দিন আমাদের কপালে হাত। বাঙ্গালহালিয়া বাজারের ফুটপাতে তরকারি বিক্রেতা বলেন, সকাল বিকাল তরকারি বিক্রি করি। কিন্তু বৃষ্টির কারনে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে না। তবে অনেকে এসব উপেক্ষা করেই বের হয়েছে জীবিকার তাগিদে।
রাজস্থলী বাজার এলাকার চা দোকানি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে সারাদিন ধরে ক্রেতা একদম কম। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ কাপ চা বিক্রি করি। আর আজকে ৫০ কাপ চা বিক্রি হয়েছে। একজন সরকারি চাকুরিজীবী বলেন, বৃষ্টির জন্য অফিসের ছুটি শেষে ঘরে বসে কাটাতে হচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখা যায় উপজেলার পথঘাটে জনশূণ্যতা।
অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, রবিবার (৬জুলাই) সারাদিন থেমে-থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কারণ সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্মচাপ এবং এখনো মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার প্রভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে কিছুটা কমে আসতে পারে বৃষ্টি।
এ বিষয়ে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, প্রবল বৃষ্টির কারণে জনজীবন বিপন্ন, ফলে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যে কোন মুহুর্তে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছি।