[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ’র মধ্যে গুলিবিনিময়-আটক ৩বাঘাইছড়িতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে আশিকার সহায়তা প্রদানখাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড়ের প্রান্তে যেন এক সম্ভাবনাময় জনপদরাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২ জন চিকিৎসক, অসহায় রোগীখাগড়াছড়ির পানছড়িতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মসূচিবান্দরবানের থানচিতে পর্যটন শিল্পে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টামাটিরাঙ্গা আলিম পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিতকাপ্তাইয়ে ৬দফা দাবীতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি পালনব্যবসায়ীর গুদামে মিলল ১৮ মেট্রিক টন সরকারি চাল ও গমতেল উৎপাদনের নিয়ম না জানায় পাম ফল নষ্ট হচ্ছে দীঘিনালায়
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড়ের প্রান্তে যেন এক সম্ভাবনাময় জনপদ

॥ মোঃ মাসুদ রানা, রামগড় ॥
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে, খাগড়াছড়ি জেলার দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোট্ট উপজেলা রামগড়। এখানকার প্রকৃতি পাহাড়ি এলাকা অথচ সমতলের ছোঁয়াও আছে। সীমান্তবর্তী এই জন পদের একদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, অন্য দিকে বাংলাদেশের ফেনী জেলা। পাহাড় আর সীমান্ত ঘেরা এই জনপদের পরিচয় যেন বহু মাত্রিক ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক অনবদ্য মিশেল।

রামগড় উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে, কিন্তু তার ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানকার ভূপ্রকৃতি ও জনজীবন প্রাচীনকাল থেকেই ভিন্ন ধর্মী। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা বং সমতলের বাঙালি বসতি মিলে রামগড়ে তৈরি হয়েছে এক বিচিত্র সামাজিক বিন্যাস। ফেনী নদী রামগড় কে বিভক্ত করে রেখেছে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড ও ত্রিপুরার সঙ্গে, আর সেই নদীর বুকেই এখন গড়ে উঠছে এক আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর।

রামগড়ের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার, এখান কার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। পাহাড়ি জমিতে আনারস, আদা, হলুদ আর জুম চাষ হয় বছরের বড় একটি সময় জুড়ে। অন্যদিকে সমতলের মানুষ ধান চাষ আর হাট বাজার ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত। কিন্তু আশ্চর্য জনকভাবে, এত সম্ভাবনার পরও রামগড়ের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ দুর্বল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ঘাটতি, সড়ক যোগাযোগের সমস্যা এবং সীমান্তবর্তী ঝুঁকি, সব মিলিয়ে রামগড় এক ধরনের উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রামগড়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তার সীমান্ত ঘেঁষা চরিত্র। এখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। দুই দেশের মধ্যে একসময় ছিল মানুষের যাতায়াত, পারস্পরিক বাজার, আত্মীয়তার সম্পর্ক। এখন সীমান্তের কাঁটাতার সবকিছু আলাদা করে দিয়েছে। তবুও এখান থেকে স্থলবন্দর গড়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক দূর এগিয়েছে। ২০১৭ সালে রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটি পুরোপুরি কার্যকর হলে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্যিক দ্বার খুলে যাবে।

রামগড় শুধু সীমান্ত নয়, এটি এক ধরনের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির কেন্দ্র। এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান অনেকটা অনন্য। যদিও অতীতে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বর্তমানে সামাজিক সম্পর্ক স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ‘গরিয়া পূজা’ হোক বা বাঙালি মুসলমানদের ঈদ, কিংবা মারমাদের ‘ওয়াগেইন উৎসব’—সবই রামগড়ে মিলেমিশে উদ্যাপিত হয়। তবে রামগড়ের সবচেয়ে বড় অভাব হলো অবকাঠামো ও সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন। বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, পানীয়জল এবং শিক্ষার অভাবে মানুষ প্রতিনিয়ত কষ্ট করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার বিশেষ চাহিদা থাকলেও জাতীয় নীতিমালায় সেগুলো বারবার উপেক্ষিত। ফলে রামগড়ের মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে—কখন উন্নয়নের ছোঁয়া তাদের পাহাড়ি জনপদে এসে পৌঁছাবে।