[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সংলাপের প্রস্তাবখাগড়াছড়ির রামগড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন দায়ে ২ লাখ টাকা জরিমানাবান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুবাঘাইছড়িতে ওয়ার্ড বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিলবান্দরবানে হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৬ লাখ টাকা অনুদান প্রদানরাঙ্গামাটিতে আইএফআইসি ব্যাংকের উদ্যোগে ঈদ বস্ত্র বিতরণঅবশেষে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ, অন্তবর্তীকালীন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ কেন অবৈধ ঘোষনা নয়দীঘিনালায় জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের আলোচনা সভাদীঘিনালায় পর্যটক অপহরণের ঘটনায় একনারীসহ গ্রেফতার ৪খাগড়াছড়ির রামগড়ে এসিল্যান্ডের শূন্যতায় দুর্ভোগে সেবা প্রার্থীরা
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

অবশেষে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ, অন্তবর্তীকালীন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ কেন অবৈধ ঘোষনা নয়

২৩

॥ পাহাড়ের সময় ডেক্স ॥
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অন্তবর্তী পরিষদ এ চরম বৈষম্য এবং সদস্য নিয়োগে সেচ্ছাচার এর অভিযোগ এনে জেলার তিন আইনজীবির করা এক পিটিশনের আদেশে মাহমান্য হাইকোর্ট এর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চ পূনর্গঠিত রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ দেশের সংবিধানের সাথে কেন সাংঘর্ষিক নয় এবং কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছেন। সেই সাথে এক সদস্যের পরিচয় গোপন এবং অপর সদস্য হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্ত না হওয়াতে উক্ত দুই সদস্যকে দায়িত্ব পালনে বিরত থাকারও আদেশ দিয়েছেন। তিন আইনজীবির করা রিটের শুনানীতে রবিবার (৯ মার্চ) মাহামন্য হাইকোর্ট এর বিচারপতির দৈত বেঞ্চ এ আদেশ করেন।

জানা গেছে, তিন আইনজীবির করা রিটের শুনানীতে রাঙ্গামাটি জেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে সদস্য না নিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন দেশের সংবিধানের সাথে কেন সাংঘর্ষিক নয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তিকালীন পরিষদ পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপনটি (২৯,০০,০০০০,০০০,২১৪, ১৮, ০০২২, ২৪, ১১৯, তারিখঃ ০৭ নভেম্বর’২০২৪ খ্রিঃ) কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবেনা এই মর্মে রুল জারী করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। সেই সাথে জেলা পরিষদের সদস্য প্রনতি রঞ্জন খীসা ও রাঙাবী তংচংগাকে তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকারও আদেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। এ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা, জসিম উদ্দিন, পুলিন বিহারী চাকমা ও উথান মারমার মহামান্য হাইকোটে রিটকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবি মোঃ সুলতাল উদ্দিন, নিবোলাস চাকমা, রতন কুমার।

আইনজীবিরা অভিযোগ করেন, অন্তবর্তী পরিষদে জেলার দশটি উপজেলা থেকে প্রতিনিধি না নেয়া, এক সম্প্রদায় থেকে নিয়ে অন্য সম্প্রদায় বলা, হত্যা মামলার আসামীকে সদস্য করা এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে নিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠিত হওয়ায় নানান অভিযোগ ব্যাপকভাবে সমালোচনা হয়। এরই প্রতিবাদে রাঙ্গামাটির জুড়াছড়ি, বরকল, কাউখালী ও রাজস্থলী উপজেলার জনসাধারন মিছিল মিটিং, মানববন্ধন সহ প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেন। পরবর্তীতে বঞ্চিত চার উপজেলাবাসির পক্ষে উচ্চ আদালতে রীট করেন এ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা, জসিম উদ্দিন, পুলিন বিহারী চাকমা ও উথান মারমা।

প্রাপ্ত তথ্য সুত্রে রিটকারিদের পক্ষে হাই কোর্ট এর আইনজীবি এ্যাডভোকেট মোঃ সুলতান উদ্দীন জানিয়েছেন, মহামান্য আদালত রিট আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি উপজেলা থেকে সদস্য নিয়োগ না করে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন কেনো সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় তা জানতে ও এবং প্রজ্ঞাপনটি কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন একই সাথে পরিষদের দুই সদস্য রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যা ও প্রণতি রঞ্জন খীসাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকারও আদেশ দিয়েছেন।

অন্তবর্তী পরিষদের দুই সদস্যকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে তার বিষয়ে জানতে চাইলে এই আইনজীবি বলেন, এদের মধ্যে রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যা বৈবাহিকসূত্রে নিজের পরিচয় পরির্তন করায় নিজ জনগোষ্ঠীর কোটায় বিবেচিত হতে পারেন না এবং প্রণতি রঞ্জন খীসার বিরদ্ধে হত্যা মামলা আছে যা থেকে তিনি দায়মুক্তও নন। তাই মাহামন্য হাইকোর্ট পরিষদের দুই সদস্যকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশও দেন। সুত্রমতে মহামান্য হাইকোর্ট এর এ আদেশের বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তী চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার জানিয়েছেন, আদালতের বিষয়টি তিনি শুনেছেন, বিস্তারিত এখনো জানেন না। কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর সবার সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে সকল জাতি গোষ্ঠী থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে একজন চেয়ারম্যান এবং পরিষদ সদস্য নিয়োগ করে আসছিল দায়িত্বে থাকা বিগত সরকারগুলো। কিন্তু এসব পরিষদে বাঙালি কোটায় সদস্য নিয়োগ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলার অপর ক্ষুদ্র বৌদ্ধ (বড়ুয়া) জনগোষ্ঠী এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েই আসছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এ জনগোষ্ঠীর সন্তান সন্তুতিরা নিজের যোগ্য বলেই দেশের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে স্থান করে নিয়েছেন। বড়ুয়া জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ক্ষুদ্র জাতি হলেও তাঁদেরকে বাঙালি কোটায় চাপিয়ে দিয়ে অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামেও বৈষম্যের মধ্যে পতিত করে রাখা হয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বা নেতৃত্বদানকারীরা বিভিন্ন সময়ে সরকারি উচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে অধিকারের বিষয়ে দাবি জানালেও কখনোই কেউ কর্ণপাত করেনি।

এবারও নির্দলীয়-অন্তবর্তী সরকার গঠন হলেও তিন জেলা পরিষদেও ক্ষুদ্র এ জাতি থেকে যোগ্য কাউকেই সদস্য করা হয়নি অথচ এটি সাংবিধানিক এবং গনতান্তিক অধিকার। এবারও পরিষদগুলো গঠন হওয়ার আগে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ থেকে এবং বড়ুয়া জনগোষ্ঠী থেকে সদস্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রধানদের স্মারকলিপি দেওয়া হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি বলেই মনে করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টির নেতৃবৃন্দরা অনধিক এক হাজার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী থেকে সদস্য দেয়া হলেও কয়েক হাজার বড়ুয়া জনগোষ্ঠী থাকা সত্তেও তারা বঞ্চিত। তাদেরকে যাতে বঞ্চিত না করা হয় তারা সে আশাও প্রকাশ করেন। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বড়ুয়া জনগোষ্ঠীকে বৌদ্ধ ক্ষুদ্র জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে ২০০৭ সালে তাঁর সাথে এক বৈঠকে এ বিষয়টি তিনিও পরিস্কার করেন। এবারও বঞ্চিত থাকার কারনে মর্মাহত এ জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দরা বর্তমানে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের স্বপ্রনোদিত হস্তক্ষেপও প্রত্যাশা করেছেন।

উল্লেখ্য যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারনে গত বছর (২০২৪ সাল) এর ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর অন্তবর্তী সরকার এর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) তিন পার্বত্য জেলা অন্তবর্তী পরিষদ পুনর্গঠন করে। অন্য দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদেও বৈষম্য হয়েছে বলে অভিযোগ থাকলেও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অন্তবর্তী পরিষদে চরম বৈষম্য হয়েছে তারমধ্যে হত্যা মামলার আসামীও সদস্য এমন অভিযোগ এনে প্রতিবাদ সহ মানববন্ধ কর্মসুচী পালন করা হয়েছে বেশ ক’বার। সংবাদমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। পরে বঞ্চিত উপজেলাবাসীর পক্ষে রাঙ্গামাচি জেলা দায়রা জজ আদালতের তিন আইনজীবি মহামান্য হাইকোর্টে এক রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন।