[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
বান্দরবানের থানচিতে ১৩মাস পর পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহারজিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে কাপ্তাইয়ে দুস্থদের মাঝে চাল বিতরণবান্দরবানে খুলে দেয়া হয়েছে লামা উপজেলার সকল রিসোর্টসীমান্তে পুশইন ও চোরাচালান ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বাঘাইহাট বিজিবিলংগদু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবির টহল জোরদার: লে. কর্ণেল নাহিদ হাসানরাঙ্গামাটিতে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক আটকপুশইন ও চামড়া পাচার রোধে রামগড় ৪৩ বিজিবির নিরাপত্তা জোরদাররাজস্থলীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালনচামড়া পাচার ও সীমান্ত দিয়ে পুশইন ঠেকাতে বিজিবি টহল বাড়িয়েছেমাটিরাঙ্গা সেনা জোন কর্তৃক ঈদ উপহার ও মানবিক সহায়তা প্রদান
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

পার্বত্য চট্টগ্রামের গুটি কয়েকে এ শিল্পকে আঁকড়ে রেখেছেন

আধুনিকতার প্লাস্টিকের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসীদের বাঁশ ও বেত শিল্প

১১৮

॥ চাইথোয়াই মারমা, খাগড়াছড়ি ॥

আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কারুকাজ সম্বলিত বাঁশ ও বেত শিল্প। কারুকাজে ব্যবহৃত বনরাজি ও গ্রাম বাংলার আশপাশের বনজ সম্পদগুলো হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া এবং বিলুপ্ত হওয়ার পথে আর সহজ লভ্যতার অভাবেও বাঁশ ও বেত নির্ভর হস্ত শিল্প এর অধিকাংশ সংকুচিত হয়ে এসেছে। তারপরও তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলার গুটি কয়েক আদিবাসী মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাঁশ আর বেতের শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

পুরনো ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপুর্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। ক্রমবর্ধমান বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় কিংবা বেতবনের ঐতিহ্য গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ জাতীয় গাছপালা। এক সময় এ দেশেরই বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেতে তৈরি হতো হাজারো পণ্য। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের জিনিস। এক সময় কারুকাজ শিল্প ব্যবহার ছাড়া একটি পরিবার বা সামাজিকতা মোটেই চলা সম্ভব ছিলনা। এখন কালের বিবর্তনে এখন সেই বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর সমাজ থেকে অনেকটা মুছে বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। মানুষের নুনতম চাহিদা না মিটিয়ে নিমিষে পাড়ার প্রধানদের (হেডম্যান) রাখা রিজার্ভ মৌজা বনও এখন হারাতে বসেছে তিন জেলায়।

এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করত। বাসা-বাড়ি কিংবা অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে সবকিছুই। এর ব্যতিক্রম নয় খাগড়াছড়ি জেলাও। প্রযুক্তির ছোয়া লাগার যুগে বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি মনকারা বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাষ্টিক ও লোহার তৈরি পন্য। তাই বাঁশ ও বেতের তৈরি মনকারা সেই পন্যগুলো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। কদর না থাকায় গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরী বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আকর্ষনীয় আসবাবপত্র। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকেছে। এরপরও শত অভাব অনটনের মাঝে জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এ অঞ্চলের অনেক মানুষ বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ-বেত নেই বললেই চলে। এছাড়া তৈরি পণ্যের ন্যায্য মজুরিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং বাজারে প্লাষ্টিক সামগ্রীর দাপটে চারুশিল্পের চাহিদা দিন-দিন কমে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বেত ও বাঁশের তৈরী চারু-কারুশিল্প। তাই খাগড়াছড়ি প্রসিদ্ধ বাঁশ শিল্পীরা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ের জন্য এবং বাপদাদার আমলে রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশ-বেত শিল্প হয়তো আগামী দিনে এ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে তাদের জন্য বাঁশ-বেত বাগান ও রিজার্ভ বন টিকিয়ে রাখা অত্যান্ত জরুরী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো বাঁশ ও বেতের পণ্যের চাহিদা থাকায় পাহাড়ী এলাকায় ও হাট বাজারসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজারে এর কদর লক্ষ্য করা গেছে। বাজারগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচাং, মই, চাটাই, ঢোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুঁড়ি, ডুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, মাথাল, সোফাসেট, বইপত্র রাখার র‌্যাকসহ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বসে আছেন এ পেশার কারিগররা। সচেতন মহল বলছেন, সরকারী কোন সহায়তা পেলে হয়তো ফিরে পেতে পারে গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যেতে বসা এই চিরচেনা গুরুত্বপুর্ন কারুকাজ শিল্পটি।