রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শুরু
॥ মোঃ নুরুল আমিন ॥
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলন্বীদের ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০অক্টোবর) বিকালে বেইন ঘর এবং চরকায় সূতা কেটে কঠিন চীবর (কাপড়) তৈরী কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় পূর্ণ্যার্থীদের সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ। শুক্রবার বিকালে ভিক্ষু সংঘের কাছে এই চীবর দান করার পর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে। এ উৎসবকে ঘিরে বসেছে গ্রামাীন মেলা।
রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা জানান, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ৪ শতাধিক চরকা ও ২০০ টি বেইন স্থাপন করা হয়। এতে হাজারো মহিলা-পুরুষ এই চীবর প্রস্তুত কাজে অংশ গ্রহণ করে। তিনি আরো বলেন, উৎসবকে ঘিরে যথাযথ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিরুপা দেওয়ান জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছরও দেশের বাইরে থেকে কিছু সংখ্যক বিদেশী পূর্ণ্যার্থী এসেছেন। তিনি আরও জানান, ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান সকালের প্রথম পর্বের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ করার পর বিকালে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সকল প্রাণীর সুখ ও শান্তি কামনায় ধর্মীয় সমবেত সুত্রপাঠ সহ মঙ্গলাচারণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাজ বন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মাহস্থবীর সহ ভিক্ষু সংঘকে চীবর দানের মধ্য দিয়ে মহৎ এ দান অনুষ্ঠান শেষ হয়।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান। বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরীর প্রচলন করেছিলেন। প্রতি বছর আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ১৯৭৩ সাল থেকে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার ৪৯ তম কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরমতে, জগতে যত প্রকার দান রয়েছে তার মধ্যে এ চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান। ২৪ ঘন্টার পরিশ্রমে তৈরী করা এ চীবর চাক্মা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বনভান্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শুক্রবার ভিক্ষু সংঘের নিকট এ চীবর দান করবেন। পরে সন্ধ্যায় রাজবন বিহারে ফানুষ উড়িয়ে শেষ হবে এ কঠিন চীবর দান উৎসব।
 
			 
				