বান্দরবানে শিমের বাম্পার ফলন
॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
বান্দরবানে প্রধান সড়কের চার পাশের শিম চাষও যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য। পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও শুধু ঘুরে দেখা যায় শিম চাষ। চাষিরা ক্ষেত থেকে প্রতিদিন দফায় দফায় তুলছেন শিম। শিম গাছগুলোতে আবারও নতুন করে আসছে ফুল। তাতে চাষিরা মহাখুশি। তাছাড়াও ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একই রকম ফলন হবে। শিমের ভালো বাজার মূল্য ও বাম্পার ফলনে কৃষকদের ঘরে ঘরে বইছে খুশির আমেজ।
বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এলাকায় কিংবা রাস্তার পাশে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই সবুজ-বেগুনি রঙের শিম ফুলে প্রকৃতি যেন একাকার। শীত মৌসুমের শুরুতে মনোরম শিমের ফুলে ভরে উঠেছে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল ও ঘের-পুকুরের পাড়। এই মৌসুমে পুরো উপজেলা জুড়েই ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে শীতকালীন এই সবজি। শিমের বাম্পার ফলন ও শিমের ভালো বাজারমূল্য থাকায় উপজেলার শিম চাষিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রেইছা, সুয়ালক, ডুলুপাড়া, জামছড়ি, ও রোয়াংছড়ি সহ বিভিন্ন স্থান জুড়ে শুধু শিম আর শিম। বান্দরবান সদর প্রধান সড়কের চার পাশের শিম চাষও যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য। অন্যন্য সবজি ক্ষেত, ধান ও মাছের ঘেরের আইলেও করা হয়েছে শিম চাষ। চাষীরাও লোকজন নিয়ে বেশ হাসি মুখে ছিড়ছে সিম। আবার কেউ বা বস্তায় কিংবা বেছে বেছে ভরছে। সন্ধ্যায় গাড়ি করে খুচ্রা বিক্রেতার কাছে শুরু হয় বিক্রি। এতে খুচরা বিক্রেতারাও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সিমও মেপে মেপে রাজধানী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা হয় সরবরাহ করছে।
শিম চাষী সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্যন্য বছরের তুলনায় এই বছর শিমের ভালো ফলন হয়েছে। সাথে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দামও বেশি। বাজারে শিমের চাহিদা বেশি থাকায় পাইকারদের শিম দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। তাতেই কচি ও তুলনামূলক ছোট শিমগুলো ছিড়েই ফেলতে হচ্ছে। বর্তমানে খুচরা ও পাইকার বাজারে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা মৌসুমের শুরুতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হত বলে জানায় তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গেল অর্থবছর ২০২০ হতে ২১ সালে পার্বত্য এলাকায় শিম চাষ হয়েছে ২শত৫ হেক্টর। যার উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৪ শত ১০ মেট্রিক টন। এই অর্থবছরে ২০২১-২২ সালে শিম চাষ হয়েছে ২শত ৩৬ হেক্টর। তবে উৎপাদন এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।
রেইছা চাষি নিংমা মারমা, সকাল থেকে ৫জন শ্রমিকদের নিয়ে সিম ছিড়তেসি। আগের বছর চেয়ে এই বছরে দাম মোটামুটি ভালো। এখন ছিড়ে বিকালে বিক্রি করব।
গোয়ালিয়া খোলা চাষী মো. সেলিম বলেন,৮০ শত জুড়ে শিম চাষ করেছি। সকাল থেকে ৭ জন শ্রমিক নিয়ে শিম ছেড়া কাজ শুরু করেছি। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে কোন সহযোগীতা পায়নি।
তিনি আরো বলেন, গত বছর তুলনায় এই বছরে মোটামুটি দাম ভালো। গেল লকডাউনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এই বছরে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আশা করছি।
মাঝের পাড়া চাষি উহ্লামং বলেন, সিম শুরুতেই দাম ভালো পাচ্ছি। শুরুতেই আমরা সাদা সার, লাল সার সহ বিভিন্ন কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করাই ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি কেজিতে ৩০ হতে ৩৫ টাকা বিক্রি করছি।
রেইছা আরবদার সদওদাগর লিটন দাশ ও কামাল সওদাগর বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে সিম সংগ্রহ করি। চাষীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে কিনে থাকি। প্রতিমণে ১হাজার ২শত টাকা করে কিনতেসি। তারপর প্যকেট জাত করে চট্টগ্রাম, নিমিষা ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিক্রি করে থাকি।তবে গেল লকডাউনে ক্ষতিসম্মুক্ষীন হওয়াই এই বছরে বাজারে দাম ভালো। তবে দামের দিক দিয়ে বাজার উপর নির্ভর করে। কিন্তু লাভ ক্ষতি নিশ্চয়তা নাই।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, শিম উৎপাদনে কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় চাষিরা এতে আগ্রহ হচ্ছে। তা ছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস শিম চাষীদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা যাতে শিমের ন্যায্য মূল্য পায়, সে ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি