॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলা সদরের এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে “মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রী কলেজ”। ঠিক তারই মধ্যখানে আবাসিক প্রকৌশলী( সড়ক ও জনপদ) এর সামনে গেল ৩ বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে মানিকছড়ি পাবলিক কলেজের পাঠদান কার্যক্রম। সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকায় শিক্ষার্থীদের অন্য কলেজে ভর্তি দেখিয়ে তারা এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে একই স্থানের একই টিনসেট ঘরে আরও একটি কলেজ খুলে বসেনে প্রতিষ্ঠানের মালিক! পাশাপাশি টানিয়েছেন ‘মানিকছড়ি পাবলিক কলেজ ও মহিলা কলেজে ভর্তি কার্যক্রমের সাইন বোর্ড ও ব্যানার! যা দেখে রীতিমত অবাক হচ্ছে উপজেলার সচেতনমহলসহ অনেকেই।
এছাড়াও একই মালিকের রয়েছে উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের পার্শে হেডকোয়াটার নামক এলাকায় গড়ে তুলেছেন আরো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেন’। দুটি কলেজ ও একটি কিন্ডারগার্টেরসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন একজনই! তিনি হলেন, মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রী কলেজের সহকারি গ্রন্তাগারিক মোঃ রাশেদুল ইসলাম। শিক্ষানীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে তুলেছেন এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চললেও প্রশাসনের উদাসীনতাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করেছে স্থানীয়দের কাছে!
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রি কলেজের পাশাপাশি একটি বেসরকারি কলেজ রয়েছে। সেটি হলো আইডিয়াল কলেজ। যার অনুমোদন পাঠদান অনুমোদন রয়েছে সরকরি ভাবে। এছাড়াও আটটি মাধ্যমিক ও দুইটি দাখিল মাদরাসা রয়েছে। এর বাইরে সরকারি দপ্তরের নথিপত্রে উপজেলায় আর কোন কলেজ নেই। অথচ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু কর অধ্যবদি মানিকছড়ি পাবলিক নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান করে আসছেন! বর্তমানে আবার সেখানেই মহিলা কলেজে ভর্তি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। এমন অনিয়মকেই নিয়মে পরিনত করে তুলেছেন মানিকছড়ি সরকারি কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক মোঃ রশিদুল ইসলাম!
চলতি বছর উপজেলায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় প্রায় ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের সকলেই এখন বিভিন্ন কলেজে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এমন সময় পাবলিক কলেজে ভর্তি আগ্রহীরাও বিপাকে পরছেন! কেননা পাবলিক কলেছে ভর্তি হতে এসে মহিলা কলেজের ব্যানার দেখছেন! আবার মহিলা কলেছে ভর্তি হতে এসে অনেকেই পাবলিক কলেজ দেখছে! তাদদের মনে প্রশ্ন জেগে উঠছে তাহলে এটা কি পাবলিক কলেজ নাকি মহিলা কলেজ? আসলে একই ভেন্যু ও আধাপাকা টিনসেড ভবনে পাবলিক কলেজের পাশিপাশি একই মালিক মহিলা কলেজও প্রতিষ্ঠা করেছেন তা নিয়ে জনমতে চলছে নানা আলোচনা! শিক্ষার্থীরা যেমনি বিপাকে পড়ছেন তেমনি উদ্বিগ্ন উপজেলার সচেতন মহল!
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, টিনসেটের তৈরি পাবলিক কলেজ যেটি ঠিক সেটিইতেই মহিলা কলেজের ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেখা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ছাত্রী বললেন, সরকারি কলেজের সহকারি গ্রন্থাগারিক মোঃ রশিদুল ইসলাম স্যার, আমাদেরকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। পরক্ষণে জানতে পারলাম আমাদের সকল কাগজপত্র লক্ষীছড়ি সরকারি কলেজের নামে ভর্তি দেখানো হয়েছে। মূলত এখানে কোচিং সেন্টারের মত পড়াচ্ছেন! কলেজের মত না। ভর্তি আগে যদি জানতাম এমন হবে তবে এই কলেজে ভর্তি হতাম না। এখন আবার দেখছি আমাদের পাবলিক কলেজেই মহিলা কলেজের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ভর্তির প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে!
অভিযোগ রয়েছে মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রী কলেজের সহকারি গ্রন্তাগারিক মোঃ রাশেদুল ইসলাম কর্মরত কলেজে সময় না দিয়ে তারই ব্যক্তিমালিকানাধীণ পাবলিক কলেজ, মহিলা কলেজ ও ‘বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেন’ নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। আগের মত কলেজের গ্রন্থাগারে তাকে আর পাওয়া যায় না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক ও দুটি অননুমোদিত কলেজে ও একটি কিন্ডারগার্টেন’র প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রশিদুল ইসলাম জানান, অন্য কলেজের নামে হলেও এখানে অধিক যত্ন ও গুরুত্ব সহকারে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি। পাবলিক কলেজ চলছে। আর যদি মহিলা কলেজে ভর্তি বেশি হয় তাহলে আলাদা ক্যাম্পাসের তাদের পাঠদান করানো হবে! উপজেলা অসংখ্য শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করেই আমি এগিয়ে এসেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী জানান, সরকারি কলেজের এক কিলোমিটারের মধ্যে পাবলিক কলেজের কায্যক্রমের তথ্য অফিসিয়ালি আমাদের কাছে নেই! নতুন করে মহিলা কলেজ হয়েছে যে তাও জানা নেই। তবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো ভিত্তি নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা দূপ্রক সাধারণ সম্পাদক ও মানিকছড়ি প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু করার পূর্বেই সরকারি যেসকল নিয়মনীতি রয়েছে তা মেনেই কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা দরকার। কিন্তু একটি সরকারি কলেজ থাকার পরও কিভাবে এক কিলোমিটারের মধ্যে পাবলিক ও মহিলা কলেজ কিভাবে প্রতিষ্ঠা করে তা মোটে বুঝে আসেনা! তাছাড়া নিজেও একটি সরকারি কলেজে রয়েছেন। সবমিলিয়ে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক একই ব্যক্তি! এটা কি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা নাকি ব্যবসায়ী ভাবে লাভবানের চিন্তা করছেন? প্রশ্ন থেকে যায়! তাই এ ধরণে অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে খুব দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি কলেজের এক কিলোমিটারের মধ্যে পাবলিক কলেজের কার্যক্রমও অবৈধ! তাছাড়া একই স্থানে আরোও একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রশিদুল ইসলাম’কে ডেকে পাঠদান অনুমোদন ছাড়া পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এরপরও যদি সে কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে পরবর্তি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।