[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

দার্জিলিং গ্রামের পরিবহনে সম্বল একমাত্র ঘোড়া

৪০

॥ আকাশ মারমা মংসিং,বান্দরবান ॥

বান্দরবানে দুর্গম এলাকায় কেওক্রাডং এর পাদদেশে দার্জিলিং পাড়ায় বম সম্প্রদায় লোকেরা জুমে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে মানবের পোষ্য প্রাণী ঘোড়াই একমাত্র সম্বল মনে ধারণা করেন বম সম্প্রদায়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গম এলাকায় যেখানে যানবাহন দিয়ে পণ্য পরিবহন করা সেইখানে চিত্র দেখা যায় ভিন্ন রকমে। জুমের ধান, আদা,হলুদ,মিষ্টি কুমড়া সহ উৎপাদিত ফসলিগুলো ঘোড়া মাধ্যম দিয়ে পরিবহন করে বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছে। একটি ঘোড়া ১০ আড়ি(১০০কেজি) ধান বহন করা ক্ষমতা রাখেন।

জানা যায়, কেউক্রাডং পাহাড়ারের পাদদেশে দার্জিলিং পাড়ার কার্বারী সাকচিং বম (৬৫) নামে একব্যক্তি ২০০৬ সালে একটি ঘোড়া ২০-৪০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অজানা রোগের কারণে চারটি ঘোড়ায় মারা যায়। আবার ২০১৩ সালে দিকে প্রতিটি ঘোড়া ২০ হাজার টাকা করে ৪টি ঘোড়া কিনে নিয়ে এসে লালন পালন শুরু করেন।

শুরু থেকেই ঘোড়া গুলোকে নিজেদের ঐতিহ্য ভাষায় শিখিয়ে দেন মালিকরা। সেই ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় ডাকলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এজ ঘোড়া প্রাণীরা যাকে অপছন্দ করে তাকে কাছে ও যেতে দেইনা এমনকি তার কাছে ঘেষতে দেইনাহ। অতিরিক্ত হলে বিরক্ত প্রকাশ করে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গ্রামের সবাই আগে প্রতি পরিবারে ১শ-২শ মণ আদা চাষ করতেন। আগে আদার দাম ছিল ৩হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার আর এখন দাম কম হওয়াই প্রতিমণ আদা বিক্রি হয় ৮শত থেকে ১২শত টাকা। আদা দাম নায্যমূল্যে না পাওয়ার কারণে এলাকাবাসী এখন আদা চাষ কম করে চাষ করেন। পরে আদা চাষ ছেড়ে জুম চাষ বেড়ের গেলে পাহাড় থেকে উৎপাদিত আদা ঘোড়ার মাধ্যমে পরিবহন করা হয়

এদিকে, ৪টি ঘোড়ার মধ্যে ১টি পুরুষ ৩টি মাদি, লাল ঘোড়াটি নাম রাখ হয় চহ্ লদি অন্যটি নাম রাখা হয় মং নিং। সাদা পুরুষ ঘোড়াটির নাম রাখা হয় ব্লং, এবং অসুস্থ ঘোড়াটির নাম রাখেন চিং লং। ঘোড়াগুলো সুস্থ থাকলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ৫-৬মিনিট চোখ বন্ধ করে ঘুমায়। কিন্তু কোন সময় অসুস্থবোধ হলে দীর্ঘসময় ধরে ঘুম যায়। এসময় রোগটি সাড়াতে গুড় আর চনাবুট মিক্স করে খাওয়ালে সুস্থ হয়ে যায়। তবে পেট ব্যথার জন্য বেশিরভাগ ওষুধ প্রয়োজন পরে।

পাড়াবাসী বেঞ্জামিন বম বলেন, বগালেক হতে দার্জিলিং পাড়া পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে গাড়ী চলাচল করতে পারলেও বর্ষামৌসুমে মোটেই গাড়ী যাতায়াত করতে পারেনা তখন রুমা-বগালেক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, জরুরী পণ্য পরিবহনে সম্পূর্ণ ঘোড়ার উপর নির্ভরশীল হতে হয়। বগালেক থেকে প্রতি কেজি পণ্য বহনে ২০টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয় বলে জানান পাড়ার বাসিন্দা। গ্রামের লোজন সবাই কম বেশী জুম চাষ, আদা চাষ ও ফলদ বাগান করেন। সবাই বম সম্প্রদায়ের । পাড়ায় বর্তমানে ৩৫ পরিবারের বসবাস।

আরেক গ্রামবাসী পাকোল বম(৪৫) বলেন, প্রথমে একটু কষ্ট হয়েছিল। কারন ঘোড়াগুলো বম ভাষা বুঝেনা, ম্রো ভাষা আর মার্মা ভাষা বুঝে, যেহেতু তিনি মার্মা ভাষা জানেন সেজন্য ঘোড়াগুলোকে মার্মা ভাষা আর বম ভাষায় কথা বলতেন এখন ঘোড়াগুলো পুরোপুরি বম ভাষা বুঝে তাই কাজ আদায় করতে এখন আর কোন সমস্যা হয়না।

দার্জিলিং গ্রামবাসী লাল নুর খান বম বলেন, এবছর আদা চাষ কম করেছেন মাত্র ৮০মণ, তা থেকে ৬শত মণ আদা পাওয়ার আশা করছেন,প্রতি মণে ১হাজার করে বিক্রি করলেও ৬লক্ষ টাকা পাবেন বলে আশা করছেন ।

তিনি আরো বলেন, ঘোড়া দিয়ে শুধু আদা নয় জুমে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া,আলু,কচু ধান পরিবহন করে বাড়ীতে আনা হয়। দুরত্ব ভেদে পরিবহন মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। ঘোড়ার মাধ্যমে পাহাড়ী রাস্তায় মালামাল পরিবহনে খুবই সুবিধা হয়। ঘোড়া না থাকলে জুমিয়াদের অনেক কষ্ট হতো আর শ্রমিকের মজুরীও বেশী লাগতো। আর এখন জুমে উৎপাদিত পণ্য বা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অন্যান্য এলাকা থেকে বাড়ীতে আনতে টাকা ও সময় দুটোই কম লাগে।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলামুর রহমান বলেন, ঘোরা পরিচ্ছন্ন যেখানে প্রচুর আলো বাতাস আছে খোলামেলা জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। ঘোড়া যে খাদ্যে খায় তার মধ্য বিভিন্ন সবুজ শাকসবজী, ঘাস, দানাদার খাদ্য যেমন গম ভাঙা,গমের ভুষি,ভুট্টা ভাঙা, ধানের খুড়া, ছোলা ইত্যাদি, ঘোড়ার কি কি রোগ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন স্কীন ডিজিস,কলিক পেইন, মানডে মর্ণিং সিকনেস, লেইমনেস ( খুড়া রোগ), কৃমি রোগ, অপুষ্টি জনিত রোগও হতে পারে।