রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি পালন
ধৈর্য্য না থাকলে জীবনে সফলতাও আসে না: দীপংকর তালুকদার
॥ মিলটন বড়ুয়া ॥
সরকারের খাদ্যমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, এমপি বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তজার্তিক চেষ্টা করলেও হবে না যতক্ষন না নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা সৃষ্টি করবেন না, পরনির্ভরশীলতাও মন থেকে বাদ দিতে। ২৪ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমাদের মনেও হতাশা কাজ করে। শান্তির জন্য বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেও এ ধরনের চুক্তি হয়েছে তাদেরও সবকিছুর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। অথচ জনসংহতি সমিতি চুক্তি করে এক বছরের মধ্যেই হতাশা প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তিত পালন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের আয়োজনে চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী এর সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে দশটায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কামান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান, পিএসসি, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক, কর্ণেল সলমন ইবনে এ রউফ, পিএসসি, শাখা অধিনায়ক, ডিজিএফআই, মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন, পুলিশ সুপার, রাঙ্গামাটি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোহাঃ আশরাফুল ইসলাম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ধৈর্য্য না থাকলে জীবনে সফলতাও আসে না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ করতে অনেকে মরিয়া। জনসংহতি সমিতি আওয়ামীলীগকে রাখা যাবে না ভেবেই একের পর এক আমাদের নেতার উপর হামলা ও হত্যা করে আসছে। তিনি বলেন, যদি আওয়ামলীলগেই নিশ্চিন্ন করতে চান তাহলে চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কে। বিএনপি শুরু থেকেই চুক্তির বিরোধীতা করে এসেছে অথচ জনসংহতি সমিতি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন। স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা না করলে ভোটার হবেন না, নির্বাচনে যাবেন না বলেছিলেন, কিন্তু এখন সন্তু লারমাও ভোটার তালিকায় নামও লিখিয়েছেন।
তিনি বলেন, চুক্তি নিয়ে তাঁরা মানুষের মাঝে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছেন। তিনি জেএসএস এর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা খুনখারাবী করবেন তার জন্য কেন মামলা হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা, বিজিবি, পুলিশ আছে বলে অনেকে নিঃস্বাস নিতে পারছেন। পার্বত্য জনগনের পক্ষে আপনারা চুক্তি করেছেন, কিন্তু আপনারা বলছেন পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবো এটি বলতে বলতে আপনারাই পূর্বের দিকে ফিরে যাচ্ছেন। শান্তির জন্য বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেও এ ধরনের চুক্তি হয়েছে তাদেরও সবকিছুর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। আসলে সবকিছু বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান, পিএসসি, বলেছেন, সেদিন আমিও খাগড়াছড়ির পূজগাং ক্যাম্পে দায়িত্বে ছিলাম। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে মনে আনন্দও ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের ২১ বছরের সংঘাত নিরসনে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বের চুক্তি করেছেন। তিনি বলেন, আমার বাবাও কৃষি বিভাগে চাকুরী করতেন। ১৯৬২ সালে বাবা রাঙ্গামাটিতে কর্মরত ছিলেন। তাই রাঙ্গামাটির প্রতি আমার বিশেষ টানও রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে যে কোন কাজে সেনাবাহিনী জনস্বার্থে কাজ করে যাবে। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে, দুষ্টের দমন করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তা বিশ্বের দরবারেও প্রশংসনীয়। পার্বত্য চুক্তির কারনে এখানে সার্বিক উন্নয়নের পথ সুগম হয়েছে। সীমান্ত সড়ক গুলো হয়ে গেলে উন্নয়নে আরো এগিয়ে যাবে এখানকার মানুষ। অন্ধকার যুগে আর নয় আমরা আলোকিতই করতে চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন, পুলিশ সুপার বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি বিশ্বের কাছে একটি বিষ্ময়। সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসুন। জনগনের শান্তির জন্য যা দরকার আমরাও তাই করবো। আমাদের কোন দ্বিধাও নেই। তিনি বলেন, এমন দিন গিয়েছে মানুষের মাঝে একটি ভয় ছিল, এখন সেটি নেই। শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নে আমরা বিশ্বাসী। তাই জুঝুর ভয়ও মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
পরে সভাপতির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, বলেছেন পার্বত্য জনগনের বৃহৎ স্বার্থে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিগুলো বন্ধ করতে হবে। হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি, হানাহানি অস্ত্রে মহড়া বন্ধ করতে হবে। উন্নয়নে যারা নের্তৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অবশ্যই সম্প্রীতির মনোভাব নিয়েই এগুতে হবে।