বাল্য বিবাহ মেয়েদের জীবন পঙ্গু করে ফেলেঃ মংসুইপ্রু চৌধুরী
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেছেন, “বাল্য বিবাহ একজন মেয়ের জীবনকে পঙ্গু করে দেয়। মেয়েরা শিক্ষিত হলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। তাই কিশোরী ক্লাবগুলোতে দক্ষতামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
বুধবার (০১ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, জাবারাং কল্যাণ সমিতি, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা এবং খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত “আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ” প্রকল্প কার্যক্রমের বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের (স্টেকহোল্ডারদের) অংশগ্রহণে প্রকল্পের বিগত বছরের কার্যক্রমের অগ্রগতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্যসেবা ও যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করলে সেবাগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাল্য বিবাহ মেয়েদের জীবন পঙ্গু করে ফেলে। তাই বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের জন্য সবাইকে আরো বেশি জোর দিয়ে কাজ করার আহবান জানান।
জাবারাং, তৃনমূল ও কেএমকেএস কর্তৃক পরিচালিত ৯০টি কিশোরী ক্লাবে কিশোরীদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য আগামী অর্থ বছরের ৯০টি সেলাই মেশিন দেয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়াও কিশোরী ও নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচিগুলোতে কিশোরী ও নারীরা যেন অংশগ্রহণ করে সেই জন্য প্রচারনার জন্য তিনি এনজিওদের প্রতি আহবান করেন।
খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি দাশ, পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এমরান হোসেন চৌধুরী, উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রজেক্ট ম্যানেজার সঞ্জয় মঞ্জুমদার।
এসময় জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তৃনমুল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা। এরপর প্রকল্পের কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের মাস্টার ট্রেইনার জনাব নবলেশ্বর দেওয়ান।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কৈশোর বান্ধব কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। কিশোরীদের সেবা দেওয়ার জন্য এই কেন্দ্রগুলো সবসময় খোলা রয়েছে এবং সেখানে একজন দায়িত্বরত ভিজিটর রয়েছে। সেখানে কিশোরীদের জন্য সবধরনের উপকরণ দেয়া আছে (প্যাড ও ঔষধ)। সেখানে কিশোরীদের নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিস্ট এনজিওদেরকে অনুরোধ করেন।
এছাড়াও অন্যান্য বক্তারা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য সেবা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং কিশোরীদের শিক্ষার জন্য সবাই যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত প্রকাশ করেন।
সভায় কার্বারী, হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি৷ সাংবাদিক ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দসহ প্রায় ৬০জন উপস্থিত ছিলেন।