মানিকছড়িতে কচুর বাম্পার ফলন
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় চাষীরা
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
ছড়া কচু, গুড়া কচু, দুলি কচু, বন্নি কচু বা মূখী কচু। নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও জিনিস একটাই। দেশের বিভিন্ন স্থানে একেক নামে পরিচিত এটি। তবে পাহাড়ে এটি ছড়া বা মূখী কচু হিসেবেই বেশ পরিচিত। মূলত এই কচু সবজির চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে কেউ কেউ ভর্তা, সবজি ও ডাল হিসেবে রান্না করে খায়। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের ছড়া কচু সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে দেশ জুড়ে। পাহাড়ের মাটি কচু চাষে অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হয়।
খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে বেশি কচু চাষাবাদ হয়ে থাকে মানিকছড়ি, গুইমারা ও লক্ষীছড়ির পাহাড়ি দূর্গম জনপদের শত শত হেক্টের জমিতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যা চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নিমশাও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে পাহাড়ের উৎপাদিত এই ছড়া কচু। গেল প্রায় এক যুগ ধরে বাণিজ্যিক ভাবে পাহাড়ের পতিত জমিতে কচু চাষে বেশ লাভবান হয়েছে অনেক কৃষক। পাশাপাশি চাষাবাদে নিয়োজিত শ্রমিকের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তেমনি মধ্যস্থাকারি ব্যবসায়ীরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন।
তবে এ বছর প্রথম দিকে কিছুটা দাম পেলেও বর্তমানে পুঁজি হারানো আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। যেখানে প্রতি কানি (৪০ শতক) জমিতে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৫০-৭০ হাজার টাকা সেখানে বর্তমানে কানি প্রতি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা! শ্রমিকের বেতন, গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদ দিলে প্রতি কানিতে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবী করছেন কৃষকরা। বাজারে কচুর দাম এমন থাকলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন তারা! এমন কি কচু চাষে নিরুৎসাহিত হবে অনেক কৃষক। কেননা বেশির ভাগ চাষীরাই ব্যাংক, সুদ ও কর্জ করে পুঁজি বিনিয়োগ করছেন কচু চাষে। যদি ভালো দাম না পায় তাহলে সেই ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি ও গুইমারা এ তিন উপজেলার সবচেষে বড় কচুর পাইকারি হাট বসে মানিকছড়ির গচ্ছাবিল বাজারে। সেখানে গিয়ে কথা হয় কৃষক, আরতদার ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সাথে।
এ সময় কৃষক অমল বিকাশ চাকমা জানান, এ বছর তিনি ৭ কানি জমিতে কচু চাষ করেছেন। এতে প্রায় সাড়ে তিন লাক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। এখনও তুলেননি কচু। তবে বর্তমান বাজারে যদি কানি প্রতি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করেন। তাহেলে তার দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে।
খুব হতাশা নিয়ে আরেক কৃষক মোঃ দুলাল জানান, এ বছর তিনি প্রায় ৫০ কানি জমিতে কচু চাষ করেছেন। প্রতি কানি গত বছর এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারলেও এ বছর মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরতদার ফুল মিয়া জানান, গত বছর ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা প্রতি মন বিক্রি হলেও বর্তমানে সাড়ে তিন থেকে চারশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে! দাম ভালো থাকলে কৃষক থেকে শুরু করে আরতদার ও ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হতাম। কিন্তু বর্তমানে উভয়ই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
আরেক আরতদার মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, যেখানে গত বছর ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭-১০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা কৃষকরা লেবার খরচ ও গাড়িভাড়া দিয়ে তাদের আর কিছু থাকে না। বর্তমানে অনেক চাষী পুঁজি হারাতে বসেছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, যথা সময়ে কচু না উঠায় ও বর্তমানে শীত কালিন সবজি বেড়িয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে। যার ফলে চাহিদা কম থাকায় দমও কম। আমরাও কম দামে কিনছি আর কম দামেই বিক্রি করছি।
কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারি ভাবে যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে পুরো পুঁজি হারিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পথে বসতে হবে তাদের। এমতাবস্থায় তাদের একটাই দাবী, সরকারি ভাবে যেন তাদের প্রনোদনার আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ইউপি সদস্য মোঃ মোসারফ হোসেন জানান, শত শত চাষীদের সাথে হাজার হাজার শ্রমিক কচু চাষাবাদে নিয়োজিত রয়েছেন। দাম কম থাকায় এ চাষাবাদ থেকে ফিরে আসতে পারেন বহু কৃষক এমনটাই আশঙ্কা করছে তিনি। পাশাপাশি কৃষদের আর্থিক ক্ষতি পুশিয়ে দিতে কৃষি অফিসসহ সরকারি ভাবে তাদের প্রনোদনারও আওতায় আনার আহব্বান জানান তিনি।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাছিনুর রহমান জানান, উপজেলায় প্রায় ৭৮ হেক্টর জমিতে এবার কচুর চাষাবাদ হয়েছে। তবে লক্ষ মাত্রার তুলনায় অধিক উৎপাদ হয়েছে এই ছড়া কচুর। তাছাড়া শীতকালিন সবজি বাজারে আসার আগেই কচু বাজার আসার কথা থাকলেও কিন্তু একটু দেরি করে রাজারে আসাতে এর চাহিদা কমে গেছে। যার কারণে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়ে পুঁজি হারাতে বসেছে।