পার্বত্য চট্টগ্রামে সুফল আসতে পারে মসলা চাষে
রন্ধনশালায় খাবারে তৃপ্ততা আনতে মসলার যেন বিকল্পই নেই। আমাদের রান্নার কাজে সেই আদি থেকেই এর প্রচলন। চাহিদা মেঠাতে দেশের উৎপাদিত মসলার বাইরেও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা হচ্ছ। কিন্তু আমাদের দেশের কোন কোন অঞ্চলের সুনাম রয়েছে মসলা উৎপাদনে। পশ্চাতপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি, এনজিও প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মানুষের চাহিদা পূরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নানান খাতের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অবদান রেখে চলেছে। এবার মানুষের রন্ধনশালার খাবারে তৃপ্ততাকে আরো সহজ করতে পাহাড়ী অঞ্চলে মসলার উৎপাদনে প্রকল্প হাতে নিয়েছে উন্নয়ন বোর্ড।
বাংলাদেশের নানান অঞ্চলের মধ্যে এক-দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় ও মাঝারি ধরনের পাহাড়। সমতল জমির অভাবে এ অঞ্চলে ফসল আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। তাই চাষিরা খাদ্যের চাহিদা মিটাতে পাহাড়ের ঢালে জুমচাষ, আদা ও হলুদ চাষাবাদ করে থাকেন এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে পাহাড়ের ঢালে ঢালে উন্নত জাতের উচ্চ মূল্যের মসলা ফসলাদি যেমন-দারুচিনি, তেজপাতা, আলুবোখারা, গোলমরিচ, জুম মরিচ, ধনিয়া, বিলাতি ধনিয়া ইত্যাদি চাষাবাদ করছেন। এছাড়াও স্বল্প সময়ে আয়ের জন্য সাথী ফসল হিসেবে পেঁপে, উন্নত জাতের পেয়ারা ও জলপাই চারা সহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষাবাদ করছে প্রান্তিক চাষিরা।
পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে চাষাবাদে ভালো অভিজ্ঞতা না থাকায় পাহাড়ের মাটি ক্ষয় হচ্ছে। চাষিরা তাদের পরিশ্রমের ফসল, ফল ফলাদির উৎপাদন করলেও পাশাপাশি ক্ষতিও হচ্ছে এসব পাহাড়ের। পাহাড়ী এলাকার চাষাবাদে পাহাড়ের মাটি ক্ষয় হবে কিন্তু সেটি হতে হবে সহনীয়। তাই পাহাড়ের চাষাবাদে বিজ্ঞান সম্মতকেই বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মোরঘোনা এলাকার মসলা বাগান সৃজনকারী চাষি রতন চাকমা ও যুদ্ধরাম চাকমা জানান, আগে তারা জুমচাষ করতেন। বর্তমানে জুমচাষ ছেড়ে তারা মসলা চাষ করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে মসলা বাগান সৃজনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে সৃজিত মসলা বাগান থেকে ফলন সংগ্রহ করা যাবে। তারা আরো জানান, পাহাড়ের প্রান্তিক চাষিরা আগে বনজ বৃক্ষ রোপনে আগ্রহী ছিল না। বর্তমানে তাদের সৃজিত বাগান দেখে এলাকার অনেকেই মসলা চাষের দিকে ঝুঁকছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এ ধারা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। মসলার আমদানি হ্রাস পাবে এবং মানসম্পন্ন মসলার উৎপাদনের মাধ্যমে দেশর মানুষের চাহিদা পূরণ হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় ‘মসলা চাষ’ কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রায় পাঁচ বছর মেয়াদের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অক্টোবর, ২০১৮ হতে জুন, ২০২২ পর্যন্ত সময় নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ৬০০ জন চাষি নির্বাচনও করা হয়। নির্বাচিত চাষিদের বিনামূল্যে আলুবোখরা, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ ইত্যাদি মসলার চারা-কলম প্রদান করা হয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় সকল কৃষি যন্ত্রপাতি, সার ও রোপন কৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও, স্বল্প সময়ে আয়ের জন্য চাষিদের সাথী ফসল হিসাবে পেঁপে চারা, উন্নত জাতের পেয়ারা ও জলপাই চারা এবং বিভিন্ন প্রজাতির সবজির বীজ প্রদান করা হয়। জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য জৈব সারের পিট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন বোর্ড এর মসলা চাষের এ প্রকল্পটির সুফল আসলে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও সরবরাহ করা যাবে।