[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

হালদা নদীকে ভালোবেসে গবেষণা

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন রাঙ্গামাটির ছেলে শফিকুল ইসলাম

৭৫

॥ মোঃ নুরুল আমিন ॥

প্রত্যেক মানুষই জীবনে সফল হতে চাই। যদিও খুব কম মানুষই শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। তারাই জয়ী হন, যারা জীবন যুদ্ধে হার না মেনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প বাঁধেন। এমনি একজন ব্যক্তি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ শফিকুল ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই তাঁর গবেষণাধর্মী কাজের প্রতি এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতো। ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন ছিলো ‘হালদা নদী’ নিয়ে গবেষণা করে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করবেন। কারণ, হালদা নদী তাঁর অস্তিত্ব এবং স্বপ্ন। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অবশেষে স্বপ্নের পাখিটা তাঁর কাছে ধরা দেয়। ইতিমধ্যে তিনি হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্যকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় গবেষণা করে সফল হন। এতেই অর্জন করেন,পিএইচডি ডিগ্রি।

গবেষক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী সরকারি কলেজে যখন এইচএসসি পড়ছিলেন। তখন সেই সুবাদে হাটহাজারীতে বসবাস করতেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পাশ^বর্তী ছিল দক্ষিণ এশিয়ার বিখ্যাত মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। তখনই ঐ নদীর মায়াজালে আটকা পড়ে তাঁর মন। জন্মে নদীর প্রতি গভীর ভালোবাসা। এ ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্যকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় গবেষণা করার জন্য তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স এ ভর্তি হন এবং সিজিপিএ ৩.৬৩ (৪ স্কেলে) প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক এবং ৩.৯৪ (৪ স্কেল) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী হালদা নদীকে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অনুসারে “বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ” ঘোষণা করেন। এ হেরিটেজর জীববৈচিত্র্যকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হালদা নদী ও এর শাখা বলিয়া খালের উপর তিনি গবেষণা সম্পন্ন করেন। নমুনা সংগ্রহের সময় পানিতে ডুবে যাওয়া, পা কেটে যাওয়া ছিল অনেকটাই নিয়মিত ঘটনা। তবুও এসব বাঁধা কখনোই তাকে গবেষণা থেকে বিচ্যুত হতে দেয়নি। কারণ, তিনি হালদা নদীকে ভালোবেসে গবেষণা করেছেন। তাই কোনো কষ্টই কষ্ট মনে হয়নি। পিএইচডি অর্জনের অভিজ্ঞতা খুবই কষ্টকর ও রোমাঞ্চকর ছিলো। যে কাজে কোনো চ্যাঞ্জেজ নেই, সেই কাজে আনন্দ পাওয়া যায়না। ভালোবেসে যদি কোনো কাজে লেগে থাকা যায়, তাহলে একটা ফলাফল অব্যশই আসবে। সুতরাং,তিনি মনে করেন, কোনো কাজে দ্রুত ফলাফল আশা না করে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই কেবল সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

গবেষক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, বিগত করোনাকালীন সময়ে দেড় বছর ঘরবন্দী থেকে বাসার ল্যাবে গবেষণা কাজ ও থিসিস লিখার কাজ সম্পন্ন করেছেন। সুতরাং করোনা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো এক অশেষ রহমত। যা শতভাগ কাজে লাগিয়েছেন, না হলে ডিগ্রি সম্পন্ন করতে আরো প্রায় দু’বছর সময় লাগতো তাঁর। তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা তাঁর জন্মস্থান। এখানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মনুষ্যসৃষ্ট হ্রদ, যা জীববৈচিত্র্যতে পরিপূর্ণ। এ হ্রদের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার। যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা গবেষণা কাজে এগিয়ে আসে,সেক্ষেত্রে গবেষণা করতে আগ্রহী প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীদের প্রতি ড. শফিকুল ইসলামের পরামর্শ : কোন কিছু করার আগে অবশ্যই স্বপ্ন দেখতে হবে। কারণ একমাত্র স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য এটার পেছনে লেগে থাকতে হবে এবং নিজের সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে দিয়ে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইনশাল্লাহ একদিন বাস্তবায়ন হবে। আর কারো যদি উচ্চতর গবেষণা বা যেকোনা বিষয়ে তাকে প্রয়োজন হলে অবশ্যই তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।

গবেষক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, সবাই যদি নিজের কাজটা সঠিকভাবে করতে পারে তাহলেই আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে; গবেষণা কর্মের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে তিনি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন মনে-প্রাণে ধারণ করেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি বৃহত্তর গবেষণা ক্ষেত্র। যেখানে কাজ করার মাধ্যমে গবেষণার প্রসার ঘটানো ও জাতির উপকার করার সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়। এই সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করে হালদা নদীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বিশ্ববাসীকে আরো বেশি অবগত করতে ও দেশের এই গৌরবকে প্রাণ থেকে প্রাণে ছড়িয়ে দিতে চাই।

পরিচিতি : রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা গর্বিত পিতা মোঃ সিরাজ মিয়া (প্রাক্তন মেম্বার ৪নং ইউপি) ও রত্নগর্ভা মাতা নুরনাহার বেগমের কৃতী সন্তান ডক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি রাঙ্গামাটির বড় মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর হাটহাজারী সরকারি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হাটহাজারী বসবাসের সুবাদে হালদা নদীর প্রতি তার গভীর ভালবাসা জন্ম নেয়। যার জন্য হালদা নদী নিয়ে গবেষণা করার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স এ ভর্তি হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০০৯ সালে ৩ দশমিক ৬৩ সিজিপিএ (প্রথম শ্রেণি) নিয়ে অনার্স শেষ করেন। ২০১০ সালে হালদা ও মাদারি শাখা খালের পানি নিয়ে থিসিসসহ ৩ দশমিক ৯৪ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে মাস্টার্স শেষ করেন। এ গবেষনা কাজে তাঁর শ্রদ্বেয় সুপারভাইজার ও কো-সুপারভাইজার, পিতা, ভাই বোন, সহকর্মী ও বন্ধুদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, সেই সাথে এ ডিগ্রি তাঁর মরহুমা মাতাকে উৎসর্গ করেন।