চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিকট দাবি
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭০টি পদ শূন্য
॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার মানুষের বসবাস। জনগণের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলো। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭০টি পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে।
তাছাড়া এ উপজেলায় রয়েছে ৩টি ইউনিয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এ উপজেলার পার্শবর্তী রাঙুনিয়া, বান্দরবান, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই উপজেলার লোকজন এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এছাড়া ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতেও এখান থেকে সহজে যাওয়া যায়। পাশর্বতী রাঙ্গুনিয়া, বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন এসব উপজেলার বেশীর ভাগ রোগী ছুটে আসেন রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে রোগীর চাপ ও চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি হওয়ায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ সরকারি হাসপাতালটি গত এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রুপান্তরে অবকাঠামোগত ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবলসহ নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ এখনো সম্পন্ন করা হয়নি।
উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ মধ্য ও নিম্নবিত্তের। কেউ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অথচ জনবল সংকটে এখানে মিলছে না কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ উপজেলা স্বাস্থ্য সেবায় মঞ্জুরীকৃত ২১৮টি পদের মধ্যে ৭০টি শূন্য। বিশেষজ্ঞ ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ থাকলেও কর্মরত আছেন শুধুমাত্র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ১জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ০৯ ডাক্তারের বিপরীতে শুধুমাত্র ৫জন ডাক্তার রয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ সরকারি হাসপাতালে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মঞ্জরীকৃত ২৪টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১২জন। নিরাপত্তা প্রহরী ও ওয়ার্ড বয় মঞ্জরীকৃত ৪টি পদের বিপরীতে আছে ২জন। ঝাড়ুদার ৩ জনের বিপরীতে আছে ২জন।
রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, গাইনি, ইএনটি, অর্থো সার্জারি, কার্ডিও , এ্যানেসথেসিয়া ও চক্ষু বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ শূন্য রয়েছে। আই.এম.ও, ই.এম.ও মেডিকেল অফিসার (হারবাল) নেই। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২৫টি পদের মধ্যে ১৮ টি পদ শূন্য। নেই সহকারী নার্স, হিসাব রক্ষক, পরিসংখ্যানবিদ, জুনিয়ার মেকানিক ও কার্ডিও গ্রাফার। এছাড়া তিনটি মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাব) পদে ১টি শূন্য। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ২০টি পদের মধ্যে ১৫টি খালি। ২টি ফার্মাসিস্ট পদের প্রধান সহকারি নেই। ৫ জন অফিস সহায়কের মধ্যে রয়েছে মাত্র ২জন, তিন জনই খালি। এছাড়া শূন্য রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফিজিও) ও ২টি আয়া, তিনটি পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দুটি নিরাপত্তাকর্মী ও দুটি ওয়ার্ড বয়ের পদ। সর্বমোট ২১৮টি পদের মধ্যে শূন্য ৭০টি। অভিজ্ঞ ট্যাকনিশিয়ান না থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে এক্সরে মেশিন সেই সাথে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাব থাকায় চালু করাও যাচ্ছেনা। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। অসহায় চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শূন্যপদ পূরণ সহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা নিতে আসা চর্ম রোগী কবিরন তনচংগ্যা জানান, তিনি দীর্ঘদিন হাতে চর্ম রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গিয়ে জানতে পারেন চর্ম রোগের ডাক্তার নেই। তাই বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। এভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে একসঙ্গে এতগুলো পদ খালি থাকায় প্রতিনিয়ত রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। আর গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুইহলাঅং মারমা জানান, রাজস্থলী উপজেলা সহ আশে পাশের এলাকার রোগির চাপ ও চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবকাঠামো ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনবলসংকট ও সরঞ্জামাদি না থাকায় এখনো ৩১শয্যার জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। সরকারিভাবে ৫০ শয্যা হাসপাতাল এ উদ্বোধন করা হয়লেও জনবল ও চিকিৎসা-সরঞ্জামাদি পাওয়ার পর ৫০ শয্যার উন্নীত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গুরত্বপূর্ণ খালি পদে ডাক্তার ও চতুর্থ শ্রণী কর্মচারী নিয়োগ ও শূন্য পদগুলো পূরনের জন্য রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন অফিসে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।