ঠান্ডা মাথায় স্ত্রীকে খুন, অভিনয় করেও শেষ রক্ষা হয়নি স্বামীর
॥ মোঃ আজগর আলী, রাজস্থলী ॥
ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী রূপা আক্তারকে খুন করেন স্বামী হায়দার আলী। স্ত্রীকে খুন করার পর নীরবে নীরবে কেঁদেছিলেন তিনি। এমনকি জল ভরা চোখ নিয়ে স্ত্রীর দাফন-কাফনের কাজও শেষ করে। এরপর এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন, স্ত্রীর প্রেমিক কাজল নামের এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে খুন করে। কাজল গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরচ্ছেন হায়দার আলী।
হায়দার আলীর বক্তব্য ও পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইল নিউজ পোর্টালের মধ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়, প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকা হত্যা শিরোনামে । ফলে ঘটনার ২৮দিনের মাথায় (৮সেপ্টেম্বর) বুধবার পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হায়দার আলী নিজেই। শুধু পরিকল্পনা নয়, তিনি নিজেই ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী রূপাকে হত্যা করেছেন। এতো অভিনয় করেও শেষ রক্ষা হয়নি হায়দার আলীর। অবশেষে পুলিশের জালে আটকে গেল সেই। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া এলাকায়।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিহত রূপার প্রেমিক কাজল এ ঘটনায় জড়িত- এমন অভিযোগের ভিত্তিতেতদন্তে নেমেছে পুলিশ। রহস্য উদঘাটনে নেমে পুলিশ জানতে পারে রুপার প্রেমিক কাজল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। তবে ঘটনার পরে তার স্বামী হায়দার আলীর অতিমাত্রায় শোক পুলিশকে ভাবিয়ে তুলে। একপর্যায়ে তার গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ। অবশেষে তার আচার আচরণে রুপা হত্যার রহস্যের কিনারা উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তার স্বামী হায়দার নিজেই পরিকল্পিত ভাবে রিজিয়া আক্তার রুপাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছে গহীণ পাহাড়ের ঝোঁপে। বিভিন্ন গোয়ান্দা খবরের ভিত্তিতে রুপা হত্যার ঘাতক স্বামী হায়দার আলীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হয়েই ঘটনার ২৮ দিনের মাথায় বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে বান্দরবান সদর থানার পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী বান্দরবান সদর থানার সহকারি পুলিশ পরিদর্শক এস আই গোবিন্দ জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুপা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন হায়দার আলী। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে বান্দরবান কোর্টে পাঠানো হয়েছে ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসাইনের আদালত ১৬৪ ধারায় হায়দার আলীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এতে স্ত্রীকে গলা কেটে খুনের বিবরণ দিয়েছেন হায়দার। তবে চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে কি কারণে হায়দার আলী তার চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুন করেছে সেটা জানাতে পারেননি তদন্তকারী অফিসার ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১ আগস্ট ধলিয়া মুসলিম পাড়ার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন রুপা আক্তার। ৭ আগস্ট বিকাল সাড়ে চারটায় বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় চাচীর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় রুপা। সন্ধ্যার পরেও বাড়িতে ফিরে না আসায় রুপার চাচীর মুঠোফোনে কল করেন রুপার বাবা। চাচী জানান, রুপা তার বাড়িতে যায়নি। কোথায় গেছে খবর পাওয়া যাচ্ছে না। পরে জানা যায় রুপার লাশ পড়ে আছে বান্দরবান- রাঙ্গামাটি সড়কের গলাচিপা মুসলিম পাড়ার ঝোঁপ ঝাড়ে। এ ঘটনার পুলিশ রহস্য উদঘাটন করে মূল হত্যাকারী রুপার স্বামী।
রুপার বড় ভাই উবাইদুল্লাহ জানান, আমার বোন কে হত্যা করছে হায়দার আলী, আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবী করছি। ফলে ন্যাক্বারজনক ঘটনার জন্য এলাকাবাসী রুপা হত্যাকারী হায়দার আলীকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী।
উল্লেখ্য, গত ৭আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের গলাচিপা মুসলিম পাড়া এলাকা থেকে রুপা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । নিহত রুপা আক্তার পাশ্ববর্তী রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ধলিয়া মুসলিম পাড়ার নুরুল ইসলামের মেয়ে। প্রায় ৮ মাস আগে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন বড়খোলা পাড়া খন্থাকাটা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে হায়দার আলীর সাথে বিয়ে হয় রুপার। রুপা ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রুপা হত্যার পরের দিন ৮আগস্ট চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় বান্দরবান সদর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত রুপার বাবা নুরুল ইসলাম ও স্বামী হায়দার আলী । মামলার এজাহারে আসামি করা হয় রুপার কথিত প্রেমিক রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ডাকবাংলা বৌদ্ধ বিহার পাড়ার রকির প্রকাশ (রক্যার) ছেলে মোহাম্মদ কাজল হোসেন (২০) কে।