[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

একটি শ্মশানের জন্য কাপ্তাইয়ের ৫শত হিন্দু পরিবারের দুঃখ

৩৬

॥ মোঃ কবির হোসেন, কাপ্তাই ॥

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা মনি রবি দাশ। গত এক মাস আগে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৩০টি বছর তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে কাপ্তাইয়ের লকগেইট এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। কাপ্তাই উপজেলা সদর হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। কিন্ত জীবনের শেষ অন্ত্যিম যাত্রায় তাঁর দেহটি কাপ্তাইয়ে সৎকার করা সম্ভব হয় নাই। অবশেষে তাঁর দেহটি স্বামীর আদিবাড়ী রংপুরের পীরগঞ্জের চারিয়া গ্রামে নিয়ে গিয়ে সৎকার করতে হয়েছে। এসময় তাঁর স্বামী বিষ্ণু রবি দাশ (মুসি)’র টাকা পয়সা কিছু ছিল না। এলাকার লোকজন টাকা পয়সা দিয়ে তাঁর দেহটি রংপুরে পাঠিয়েছিলেন।

এইরকম কাপ্তাই জেটিঘাট এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক ডাঃ প্রিয়লাল মুহুরী। ৪০ বছর ধরে তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছিলেন। গত মাসে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কাপ্তাইবাসীর ইচ্ছে ছিলো এই মানবিক ডাক্তারকে এইখানে সৎকার করবে। কিন্তু একটি মাত্র শশ্মানের অভাবে তাঁকেও রাউজান নিয়ে সৎকার করতে হয়।

এইভাবে কাপ্তাই উপজেলার ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এবং ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন এর অনেক সনাতন পরিবারের সদস্যদের শেষ যাত্রা কোথায় হয় কেউ জানে না। ফলে মৃত্যুর পর যার যার গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে সৎকার করতে হচ্ছে তাদের বছরের পর বছর। অথচ কারো কারো বাড়ী এখান হতে গড়ে ১০ হতে ২শ কিমি দূরে।

কাপ্তাই উপজেলার ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নের নতুন বাজার, শিল্প এলাকা এবং ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন মিলে ৫শ হিন্দু পরিবারের বসবাস। এদের অনেকেই পিতার ব্যবসাযয়িক বা চাকরির কারনে এই এলাকায় বসবাস করে আসছেন বছরের পর বছর। ফলে জায়গা জমি ক্রয় করে এইখানে অনেকে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। কিন্ত শেষ যাত্রাও তাদের ঠাঁই নেই এই এলাকায়। এইসব সনাতন পরিবারের জন্য নেই কোন মহাশ্মশান।

কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ ও কাপ্তাই লকগেইট জয়কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ ধর পিন্টু জানান, আমাদের দুই ইউনিয়নের ৫শত হিন্দু পরিবারের জন্য একটি শশ্মান নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। ইতিমধ্যে আমরা জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিকট আবেদন করেছি এবং কাপ্তাই ইউনিয়নের ব্যাঙছড়ি এলাকায় কর্ণফুলি নদীর তীরে একটি প্রস্তাবিত শশ্মানের জায়গা নির্ধারন করেছি। কিন্ত এখনোও পর্যন্ত আমরা সেই জায়গার অনুমোদন পাই নাই।

কাপ্তাই লকগেইট জয়কালী মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা ইউপি সদস্য সমলেন্দু বিকাশ দাশ ও মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সমীর প্রসাদ ধর জানান, শশ্মানের দাবিতে আমরা ২০১৪ সালের মে মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে একটি আবেদন করি। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৯ জুন বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্হাপনের মাধ্যমে ঐ প্রস্তাবিত জায়গার বিপরীতে ব্যাঙছড়ির কর্নফুলি নদীর তীরে খাস জায়গায় একটি শশ্মান করার জন্য রেজুলেশন পাস করা হয়। সেই রেজুলেশনে কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বলা হলেও এখনোও সেই জায়গা আমরা পাই নাই।

কাপ্তাই জয়কালী মন্দিরের উপদেষ্টা প্রশান্ত ধর, মন্দিরের পুরোহিত পিন্টু চক্রবর্তী, অর্থ সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দে, চিৎমরম এলাকার বাসিন্দা রতন কান্তি বিশ্বাস, নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা, দীপংকর দেবনাথ পন্কজ, আশীষ দাশ মিন্টু সহ অনেকে এই এলাকায় একটি মহাশ্মশানের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, আমরা এই এলাকার সনাতনি সম্প্রদায়ের মহাশ্মশান করার জন্য অনেক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছি। কিন্ত জায়গায় অভাবে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। যেই প্রস্তাবিত জায়গাটা নির্ধারন করা হয়েছে, সেটা বন বিভাগের। তাই বিষয়টি উচ্চ মহলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা সমাধান করা হবে।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, বিষয়টি আমাকে ঐখানকার সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন এবং তাঁদের প্রস্তাবিত জায়গা আমি পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী জানান, আমি কাপ্তাইয়ের লকগেইট জয়কালী মন্দিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের এই সমস্যার কথা শুনেছি এবং আমি নিজে এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলাম। অচিরেই এর একটি সমস্যার সমাধান করবো।