॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
লামা ও আলীকদম উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক। ১৯৮১ থেকে ৮৪ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ইসিবি শাখা এই সড়কটি নির্মাণ করে। সে সময় মিরিঞ্জা দুর্গম পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজে অংশ নেয়া সেনাবাহিনীর ২৯ জন সেনা অফিসার ও সদস্য মৃত্যুবরণ করে। ১৯৯০ সালের দিকে সেনাবাহিনী সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হস্তান্তর করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ বান্দরবানের কাছে। সেই থেকে চকরিয়া মহাসড়কের হাঁসেরদিঘি হতে লামা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ও লামা হতে আলীকদম পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশুনা করে আসছে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের লামা অফিস।
সম্প্রতি ২০১৯ সালে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের হাঁসেরদিঘি হতে লামার লাইনঝিরি পর্যন্ত ২টি প্যাকেজে ২১ কিলোমিটার সড়ক মেরামতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করে বান্দরবান সওজ বিভাগ। দুই লাইনের চমৎকার একটি সড়ক পেয়ে লামা উপজেলায় যোগাযোগে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয়। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে চকরিয়া মহাসড়কের হাঁসেরদিঘি হতে লামা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কের ২১টি স্থানে বড় ধরনের ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু স্থানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে এবং বৃষ্টির পানিতে দু’পাশের ড্রেন ভেঙ্গে গেছে। অতিদ্রুত এই ভাঙ্গন রোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে সচল এই সড়কটি অচল হয়ে পড়বে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের কুমারীস্থ ৫ মাইল ও ইয়াংছা বদুরঝিরিস্থ ৮ মাইল নামক স্থানে বড় ধরনের ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে। ঝুঁকি প্রদর্শনে লাল পতাকা উত্তোলন করে বালির বস্তার মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে সড়কটি সচল রাখার চেষ্টা করছে সওজ বিভাগ। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন, গাড়ির ড্রাইভার ও যাত্রী সাধারণ। লামা-ফাঁসিয়াখালী ২৪ কিলোমিটার সড়কে বড়-ছোট মিলে মোট ২১টি স্থানে বড় ধরনের ও ১০ থেকে ১৫ স্থানে ছোট ধরনের ভাঙ্গনের চিত্র দেখা যায়। এছাড়া সড়কের কুমারী ও ইয়াংছাস্থ ২টি বেইলী সেতু (স্টিলের ব্রিজ) একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্রিজ গুলো অতি পুরাতন হওয়ায় পাটাতন খুলে যাচ্ছে ও নিচের বেইজে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যে কোন সময় ব্রিজ ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সড়কের কুমারী বাজার এলাকার মোঃ আলমগীর চৌধুরী, আবু বক্কর ও আব্দুল কাদের জানান, সড়কটি চমৎকার হলেও বিভিন্ন স্থানে রোডের দুইপাশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মেরামত করা জরুরী। সড়কের ড্রেইনেজ ব্যবস্থা ভালো না।
ইয়াংছা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, কয়েকদিন আগে প্রচুর বৃষ্টিতে ইয়াংছা বাজারস্থ স্টিল ব্রিজের পশ্চিম পাশে বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয়। পরে বালি ও কংকর দিয়ে জোড়াতালি দেয়া হয়েছে। ব্রিজটি খুবই নড়বড়ে। যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে।
বাস ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন ও জীপ চালক কামাল উদ্দিন বলেন, স্টিলের ২টি ব্রিজ দিয়ে গাড়ি পারাপারের সময় খুব ভয় লাগে। ৫ মাইল ও ৮ মাইল মোড়ে ভাঙ্গন গুলো জরুরী মেরামত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সওজ বিভাগের লামা স্টক ইয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী পুণেন্দু বিকাশ চাকমা জানান, বরাদ্দ না আসলে কাজ করা সম্ভব নয়। এখন জোড়াতালি দিয়ে চালানো চেষ্টা করছি। কুমারীতে নতুন ব্রিজের কাজ চলছে এবং ইয়াংছা ব্রিজটি করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
সওজ বিভাগ বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ্ আরেফিন জানান, এই বিষয়ে বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশীদ বলেন, সড়কটি অনেক সুন্দর। ভাঙ্গন মেরামতে সওজ বিভাগের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।