[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
আলীকদমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিনব্যাপী পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস প্রশিক্ষণখাগড়াছড়ির রামগড়ে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালিতরাঙ্গামাটির লংগদুতে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ আটকবান্দরবানের থানচিতে পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিতরাঙ্গামাটির লংগদুতে ট্রলি উল্টে নিহত হেলপারসীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবেনা খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ৭বিজিবি’র সভাখাগড়াছড়ির গুইমারায় সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা আস্থার সেতুবন্ধনচিকিৎসক-জনবল সংকটে ব্যাহত খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাবান্দরবানের রোয়াংছড়িতে খিয়াং নারীকে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিজিবি’র অভিযানে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রয়োজন ভালো উদ্যোগ

পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ফুঁ কার্লং, ফুলবারেং

৭৫

॥ সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যঁ, আলীকদম ॥

ফুঁ কার্লং বা ফুলবারেং আর বাংলায় বলে নতুন বিবাহ বন্ধনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ছেলে মেয়েদের যুগলবন্ধীর জন্য কারুকাজ সম্বলিত বস্ত্রলংকারের বেতের ঝুড়ি। আধুনিক সভ্যতার যুগে এসে ঐতির্হ্যের এই ফুঁ কার্লং বা ফুলবারেং এখন অনেকটা হারিয়েই যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের ছেলে মেয়েদের বিয়েতে তেমন দেখা যায় না। কোথাও কোথা এটি সো-পিস হিসেবে আলমিরায় উঠে গেছে।

জানা গেছে পুরানে বলা হতো, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধদের ব্যবহায্য জিনিস পত্র রাখার বাক্স বা ঝুড়ি হিসেবে অন্যতম হল এই ফুঁ কালং বা ফুলবারেং। এই ঝুড়িটি হচ্ছে, পাহাড়ীদের হারিয়ে যাওয়া, লুকায়িত ও বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’র একটি অংশ। চাকমা ভাষায় বলা হয় ফুলবারেং, এর সাথে থাকা নকঁশাতৈরি কাপড়সহ ফ্রেমটি হচ্ছে আলাম। অন্য দিকে তঞ্চঙ্গ্যা ভায়ায় বলা হয় ফুঁ কালং ও আলাম। ভিন্ন সম্প্রদয়ের ভিন্ন রকমের নাম ও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

বয়োবৃদ্ধরা জানিয়েছেন, ফুল বারেং পরম ধৈর্য্য নিঁপুণভাবে হাতে বুননের একটি বেতের তৈরি ঝুড়ি। তাই এই ঝুড়ি কে বলা হয় ফুলবারেং। এক একটি ঝুড়ি যেন এক একটি শিল্প কর্ম ও কারুকাজ সম্বলিত। মূলতঃ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ছেলে মেয়েদের শুভ বিবাহের সময় ব্যবহার করা হয় ফুলবারেংটি। বিয়ের দিনই এই ফুলবারেং দিয়ে বরের পক্ষ থেকে কনের অলংকার, পোশাক পরিচ্ছদ ও যাবতীয় সাঁজ সরঞ্জামাদী নেওয়া হতো কনের বাড়ীতে। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমানেও এই রীতি প্রচলন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ রকম তৈরি করা ঝুড়ি পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। তাই বর্তমানে বিবাহ সম্পন্ন করে সাধারণ ফুল বারেং দিয়ে। সে ধনী হোক কিংবা গরীব হোক। পাহাড়ী মেয়েদের পোশাকের উপরে একটি অংশ থাকে সেটাকে বলা হয় হাদি বা বাংলায় ওড়না। এই হাদিতে বিভিন্ন ধরনের নকঁশা বোনা হয়, নকঁশাগুলো এক সাথে সংরক্ষণ করে তৈরি হওয়া কাপড়কে আলাম বলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের নকঁশা তুলে হাদি বুনানো হয়। তাই আলমের নকঁশাগুলো কে ফুল বলা হয়। এগুলো আলামে উল্লেখযোগ্য ফুল বা জু বলা হয়। স্থানীয় ভাষায় জু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন বেগুন বিচি ফুল, কুয়া চুগ ফুল, জুনিপুগ ফুল, গুমচগলা ফুল, সাবকাঙাল ফুল ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে যত রকমের ফুল আছে ঐ ফুলগুলো আলামে তুলা হয়। হাদি বুনানোর সময়ে কোন ফুলের পরে কোন ফুলটা সাজিয়ে দিলে হাদি আরো বেশী সুন্দর ও আকর্শনীয় দেখাবে।

আবার অনেকে বলেছেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুড়ি তৈরি করা নিয়ে শ্রম ও শিল্পী বা কারিগর না থাকার কারনে এ-ই ফুলবারেংটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যাক্তির সাথে কথা হলে তারা জানান, আদি প্রাচীন যুগে আমরা এত কিছু চিনতাম না জানতাম না। আমাদের সময়ে আমরা মেয়ে বিয়ে দেওয়া ও ছেলের বউ আনার সময় ফুঁ কালং বা ফুলবারেং দেওয়া বাদ্যগত ছিলো, কারণ মেয়ের কাপড় রাখা বা ছেলের নতুন বউ আনার সময় এগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়। এখন বর্তমান যুগে এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, এই যুগের ছেলে মেয়েরা এইগুলো আর চিনতেও পারছে না। আধুনিক সভ্যতার যুগে এসে ঐতির্হ্যের এই ফুঁ কার্লং বা ফুলবারেং এখন অনেকটা হারিয়েই যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের ছেলে মেয়েদের বিয়েতে তেমন দেখা যায় না। কোথাও কোথা এটি সো-পিস হিসেবে আলমিরায় উঠে গেছে। তাই সম্মিলিত উদ্যোগে সংস্কৃতির এ বিলুপ্ত ফুঁ কালং বা ফুলবারেং সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।