[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫শিক্ষার্থীর মধ্যে লংঙি ম্রো বান্দরবান উপজেলা আলীকদমেরখাগড়াছড়ির রামগড়ে দুই কোচিং সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাখাগড়াছড়ির রামগড়ে দুই বসতবাড়ি আগুনে ভষ্মিভুতদীঘিনালায় গার্ল গাইডস এসোসিয়েশনের ৫দিনব্যাপি বিজ্ঞপাখি মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাড়ির সদস্যদের অজ্ঞান করে দূর্ধষ চুরিগুণগত শিক্ষা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিতে পারবে: রাঙ্গামাটিতে জলখেলি অনুষ্ঠানে সুপ্রদীপনৃ-গোষ্ঠীর আগে ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না: জলকেলীতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপবান্দরবানের আলীকদমে মার্মা সম্প্রদায়ের মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ-২০২৫ উৎসব পালনপুরোনো দিনের গ্লানি মুছে যাক সাংগ্রাইয়ের মৈত্রীময় জলেবান্দরবানের থানচিতে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের গুড ফ্রাইডের উপহার দিলেন সেনাবাহিনী
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

রাঙ্গামাটিতে আদালতের আদেশ অমান্য !

জোরজবরদস্তী অন্যের বসতভিটা দখল চেষ্টার অভিযোগ

৮৬

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

রাঙ্গামাটি শহরের চম্পক নগরস্থ অসহায় এক পরিবারের জায়গাসহ বাসাবাড়ি জোরজবরদস্তী দখলে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জ এলাকার জনৈক নীহার কান্তি দাশ ও তুহিন দাশ এর নির্দেশে তাদের কেয়ারটেকার দাবিদার বিজয় মন্ডল তার স্ত্রী বিনা মন্ডল, ছেলে শুভ মন্ডল ও শান্ত মন্ডল এসব করছেন বলে অসহায় সঞ্জু বড়ুয়া ও তাঁর পুত্রবধু বিথিকা বড়ুয়া জানিয়েছেন। আদালতের আদেশ অমান্য করায় বৃহম্পতিবার (৬মে) তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে তাদের আইনজীবি এড. আবছার আলী নিশ্চিত করেছেন।

আদালতের আদেশের সংক্ষিপ্ত এখানে উল্লেখ করে, দেখা যায় যে বাদীগন জন্মের পর থেকে নালিশী ভুমি ভোগদখলে থাকা অবস্থায় বিগত ১৪/০৭/১১ তারিখে বন্দোবস্থ পাওয়ার আবেদন করেন। সঞ্জু বড়ুয়ার নামে ১৮/০৭/৯৩ তারিখ বিদ্যুৎ মিটার ও পানির লাইন সংযোগ করা হয়। বাদীগনের পিতার নামে বিশ বছর পূর্বে পাঁচ পরিবারকে ভাড়া দেন। ২০১৫ সালে ১নং বিবাদী (বিজয় মন্ডল)কে ১৩৮০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। ১নং বিবাদী ভাড়া দিতে অস্বীকার করে এবং তখন থেকে বিবাদীগন ভাড়া না দিয়ে জবর দখলের চেষ্টা করে। আদালত বিবাদীগনের বিষয়ে আদেশে উল্লেখ করেন, বিবাদীগন নালিশী ভুমি নীহার কান্তি দাশ ও তুহিন দাশ এর মর্মে দাবী করলেও তাদের দাখিলকৃত কাগজপত্রেই নালিশী ভুমি কেবল তুষার কান্তি দাশের নামে দেখা যায়। নালিশী ভুমি ভোগদখলের অধিকার অর্জনের কোন কাগজপত্র বিবাদী পক্ষ দাখিল করেনি। পরে আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ৬/১০/১৯ইং তারিখ মোকদ্দমা চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশী ভুমিতে কোন সংস্কার কাজ করা থেকে অস্থায়ীভাবে বিরতি করা হল অর্থাৎ সেখানে কেউ কোন কাজ করতে পারবেনা বলে আদেশ জারি করেন।

এদিকে সঞ্জু বড়ুয়ার ছোট ছেলে সজীব বড়ুয়া জানিয়েছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ থাকা সত্তেও তাঁদের ভাড়াটিয়া বিজয় মন্ডলের বাসায় গত ২২/৪/২১ইং তারিখ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তুহিন দাশের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। পরে গত ১/৫/২০২১ইং তারিখ জনস্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে পানির লাইনের সংযোগও নিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে নতুন ঘর বাঁধার জন্য নানান সরঞ্জাম এনে জড়ো করেছেন। তিনি জানান, তাঁদের কথা কেউই শুনছেন না। নীহার কান্তি দাশের নামে কোন জায়গা না থাকা সত্তেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে নীহার কান্তি দাশ ও তুহিন দাশ এর কেয়ারটেকার দাবিদার ভাড়াটিয়া বিজয় মন্ডল তার স্ত্রী বিনা মন্ডল, ছেলে শুভ মন্ডল ও শান্ত মন্ডল এসব করছেন। সজীব আরো জানান, সে দিন বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পর তারা সকলে মিলে এলাকার এক ব্যবসায়ীর দোকানে বসে অনেকের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন। সজীব জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কিছু উচ্ছৃংখল ব্যক্তির সহযোগীতা নিয়ে তারা বে-আইনী এসব কাজ করেই যাচ্ছেন। তারা আদালতের আদেশও মানছেন না উল্টো হুমকী প্রদান করছেন। আদেশ অমান্য করায় বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পৌরসভাধীন শহরের ৮নং ওয়ার্ড এর চম্পক নগর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সঞ্জু বড়ুয়া (৫৫) তাঁর পিতা, মাতা ও স্বামী সন্তান সহ দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। সঞ্জু বড়ুয়া’র এ বসতভিটায় তাঁর বাবা, মা এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে স্বামী বাবুল বড়ুয়াও মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে জনৈক নীহার কান্তি দাশ তাঁর ভাই মৃত তুষার কান্তি দাশ এর জায়গা দাবি করে তাদের উপর নানান অত্যাচার, হুমকী ধামকী এবং তাদের ভাড়াটিয়া বিজয় মন্ডলকে নিজের কেয়ারটেকার বানিয়ে তাকে দিয়েই একের পর এক মামলা করাচ্ছেন এবং জোরপূর্বক দখল চেষ্টা চালান। পরে সঞ্জু বড়ুয়ার ছেলে মানিক, রাজীব ও সজীব বড়ুয়া ২০১৭ইং সালে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা দায়ের করেন।

সঞ্জু বড়ুয়ার ভাড়াটিয়ার বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ) মোঃ কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, মামলা ও আপত্তির বিষয়ে আমি পূর্ব থেকে জানতাম না। আদালতের আদেশ থাকলেও সেটা আমাকে জানানো হয় নাই। আমি অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

অপর দিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী (বিতরণ) সবুজ কান্তি মজুমদার এ বিষয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ সংযোগস্থানের জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে তা কেউই জানায় নি। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ অমান্যের কোন সুযোগ নেই। যদি আদেশ থাকে এবং মিথ্যের আশ্রয় নেয়া হয় তাহলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

অন্যদিকে সঞ্জু বড়ুয়ার ভাড়াটিয়ার বাসায় পানির সংযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে, রাঙ্গামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এর নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেছেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। যাঁচাই না করে কেন সংযোগ দেয়া হলো জবাবে তিনি বলেছেন, তুহীন দাশ ও নীহার কান্তি দাশ তথ্য গোপন করেছেন। আদালতের যদি কোন আদেশ থাকে তাহলে আদেশ যথাযথ পালন করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমাকে নথিপত্র দেয়া হলে পানির লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। আদালতের আদেশ আমান্যের কোন সুযোগ নেই।

সঞ্জু বড়ুয়া জানান, চাকমা সার্কেল (রাজা) এর ১০২ নং রাঙ্গাপানি মৌজার অধীন এই ভুমিতে আমরাই থাকতাম সেই সময় পাশের জায়গাগুলোও খালি ছিল। অভাবের সংসার থাকার কারনে ১৯৮১-৮২ইং সনে বন্দোবস্ত নিতে পারিনি, পরে সরকারি আদেশ বলে বন্দোবস্ত বন্ধ হয়ে যায় যা অদ্যবধি চলছে। না হয় তখনই আমার জায়গাটিও বন্দোবস্ত হয়ে যেত। কিন্ত এখনও আমি অসহায়। নীহার কান্তি দাশ তাঁর টাকার জোরে আমার ভাড়াটিয়াকে দিয়ে, আমি ও আমার ছেলে মেয়েদের উপর নানান অত্যাচার করেই আসছে। টাকা দিয়ে সত্যকে মিথ্যা বানাচ্ছেন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দিয়ে আমার সন্তানদের মারধর করাচ্ছেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২৫ মার্চ রাজনৈতিক কর্মী নিয়ে আমার ভাড়াটিয়ার বাসায় জোরপূর্বক বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে এলে মারামারি করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিভাগকে আপত্তি জানানোর পরেও বিদ্যুৎ বিভাগ আমার ভাড়াটিয়ার বাসায় তুহীন দাশের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। অথচ নীহার কান্তি দাশের ভাই মৃত তুষার কান্তি দাশের জায়গায় একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ হয়েছে। নীহার দাশ বলছেন সেটা নাকি তিনি দান করেছেন তাহলে আমার জায়গা নিয়ে কেন টানাটানি করছেন মিথ্যে মামলা করছেন।

এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করায় সঞ্জু বড়ুয়ার ছোট ছেলে সজীব বড়ুয়া বৃহস্পতিবার দুপুরে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা টুকেছেন বলে তাদের বর্তমান সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট আবছার আলী নিশ্চিত করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বলবৎ থাকা সত্তেও বিদ্যুৎ লাইন, পানির সংযোগ কিভাবে দেয়া হলো। আদেশ অমান্যকারীরা আদালত অবমাননা করেছেন। তিনি বলেন, আইনের প্রতি সকলরেই সম্মান থাকা উচিৎ এরকম করা হলে আইনের মর্যাদাও ক্ষুন্ন হয়।

অন্যদিকে তাদের সঞ্জু বড়ুয়ার সাবেক আইনজীবি এড. নুরুল হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আদালত তাদের পক্ষে আছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়ে এ প্রতিবেদকের ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। সঞ্জু বড়ুয়ার মেজ ছেলে রাজীব বড়ুয়া জানিয়েছেন, তার বড় ভাই মানিক বড়ুয়া জেলে থাকায় সকল মামলার ও ভাইয়ের জামিন বিষয়ে তাদের সাবেক আইনজীবি এড. নুরুল হককে ব্যবস্থা নিতে বললে নুরুল হক কোর্টেই বিশ্রি বিশ্রি ভাষায় তাকে গালমন্দ করে বের করে দেন।

আইন আমান্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে নীহার কান্তি দাশ বলেছেন, মামলাতো বিজয় মন্ডল তার স্ত্রী বিনা মন্ডল, ছেলে শুভ মন্ডল ও শান্ত মন্ডল এর বিরুদ্ধে, আমার বিরুদ্ধেতো নয়। আমি জায়গার মালিক হিসেবে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নিয়েছি। তবে আদালতের যে কোন আদেশ মানতে রাজি।

গত ২৫ মার্চ বিদ্যুৎ সংযোগ ঘটনা নিয়ে কোতয়ালী থানায় নীহার কান্তি দাশের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিব জানিয়েছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে বিষয়টি বাদী বিবাদী কোন পক্ষই থানাকে বা তদন্ত কর্মকতাকে জানানো হয়নি।