[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি দিচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার

৫৮

॥ শাহ আলম ॥ করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) একদিকে যেমন মানব জীবনের জন্য হুমকি অন্যদিকে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। কেউ দায়-দেনার ভয়ে কেউ বা সংক্রমনের ভয়ে শহর ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছেন। লকডাউনের সময় মানুষ কোন রকম জীবন যাপন করে আসলেও ৩১ মে এর পর কেউ পড়েছে আয়ের চাপে কেউ বা দেনার চাপে। এই দুই চাপের কারনে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যখন কঠোর নিরাপত্তা অবস্থানে জেলা প্রশাসন ঠিক সে সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে শত শত শিক্ষার্থী, নি¤œবৃত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার। তাদের ভাবনা গ্রামের বাড়ি পারি দিলে আর যাই হোক বাসাভাড়া লাগবে না। এই উদ্দেশ্যই দেনা বাঁচানোর তাগিদে শহর থেকে গ্রামের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন শিক্ষার্থী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারসহ নানা পেশা-জীবির মানুষ।

দেখা যায়, রাঙ্গামাটি শহরের বানিজ্যিক এলাকা বনরূপায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন হোটেল শ্রমিক শরীফ উদ্দিন। মাস শেষে বেতন আর বকশিশের উপরি আয়ে ভালোই চলছিলো তার সংসার। প্রতিমাসে ব্যাংকেও কিছু টাকা জমাতেন তিনি। এটি ছিলো তার জীবনের স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে শরীফ উদ্দিনের সংসারের চিত্র পুরোটাই উল্টো। টানা তিন মাস চাকরি নেই, সেই থেকে ঘরভাড়াও বাকি। সন্তানদের জন্য ঘরে খাবার নেই। অবশেষে ব্যাংকে যা জমানো ছিল তা বাড়িওয়ালাকে দিয়ে বগুড়া জেলার নিজ গ্রামে ফিরলো শরীফ ও তার পরিবার।

এমন গল্প একটি, দু’টি নয়, রয়েছে অহরহ। যার ফলশ্রুতিতে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহরের বাসাবাড়ি। এসব বাড়ির সামনে এখন ঝুলছে টু-লেট। শহরের বাসা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়াদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, বেসরকারি চাকরীজীবী, হোটেল শ্রমিক ও বিভিন্ন বিপণীবিতানের দোকান কর্মচারীরাও। কারন মাস শেষে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেট বিল, ক্যাবল নেটওয়ার্ক (ডিস) বিলসহ নানা খরচে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে এসব পরিবারের জীবন যাত্রা।

বাসা ভাড়া নিয়ে কলেজে পড়াশোনা করা মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শাকিলা আক্তার ও অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী চৈতী খন্দকার জানায়, করোনা ভাইরাস পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। একদিকে সংক্রমণের আতঙ্ক অন্যদিকে প্রতিমাসে বাড়িওয়ালাদের হাজার হাজার টাকা দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠে। বাবা-মা প্রতিমাসে খরচ পাঠাতে পারেন না। যার কারণে প্রতিমাসে ঘড় ভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে জিনিসপত্র নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি দিয়েছেন। পরিস্থিতি ভালো হলে আবার পিরে আসবো। তাদের অভিভাবকের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানায়, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ এর হোষ্টেলটি সচল হলে জেলার অনেক নি¤œবৃত্ত ও মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় কষ্ট অনেক কমে যেত। এ পরিস্থিতিতে হোষ্টেলটি চালু করার দাবি জানান।

শহরের বনরুপা এলাকার বাড়ির মালিক আজিজ কোম্পানি বলেন, তার ভবন ছেড়ে গত দুই মাস আগে বাড়ি চলে গেছে দুই পরিবার। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ না করেই, কোন কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। পৌরসভার প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন জানান, তার ওয়ার্ড কাঠালতলী শহরের অন্যতম আবাসিক এলাকা। এখানেও এখন বাড়ির সামনে ঝুলছে টু-লেট।

রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মজীবিদের আয় কমে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাও এসব পরিবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার অন্যতম কারণ। শহরে ভাড়া বাসাতে থাকে তাদের সবাইকে ত্রাণের আওয়াতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এমন কি এখনো খুজে খুজে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কারো ত্রাণের প্রয়োজন হলে পৌর পরিষদের সাথে যোগাযোগ করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা করা হবে। বাড়িওয়ালারা যদি মানবিক হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি ভাড়া না নেয় তাহলে পৌরসভা পুরো একবছরের পৌর কর নেবে না। এই মহামারির সময়ে সকলকে মানবিক হওয়ার আহব্বান জানান।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার কিংবা কোনো শিক্ষার্থী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে এই ধরনের কোনো তথ্য প্রশাসনকে কেউ অবগত করেন নি। তবে রাঙ্গামাটিতে সবাইকে ত্রাণের আওয়াতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে শহরের কেউ বাদ পড়েনি। যারা পায়নি এমন কেউ থাকলে তারা যোগাযোগ করলে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী ব্যবস্থা করা হবে।