লামায় নিরাপত্তা চেয়ে ৫ পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
বান্দরবানের লামায় পারিবারিক নিরাপত্তা দাবী, দফায় দফায় হামলা, জমির ফসল ও বসতবাড়ির মালামাল লুট এবং প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সস্মেলন করেছে অসহায় নিঃস্ব ৫ পরিবারের নারী ও শিশুরা। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সকালে লামা রিপোর্টার্স ক্লাবের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় লামায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সকলের পক্ষে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন, মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ছলেমা খাতুন (৬০)। তিনি বলেন, গত ৫ মার্চ শুক্রবার সকালে লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৈল্ল্যারচর এলাকায় টোল আদায়ের বিষয়ে নুর হোসেন ভেন্ডি ও বশির কারবারী পরিবারের মাঝে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। উক্ত ঘটনার দু’পক্ষের প্রায় ১২ জন আহত হয়ে লামা হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঘটনার অনেকক্ষণ পর দুপুরে বুক ব্যথা নিয়ে লামা হাসপাতালে ভর্তি হয় বশির আহমদ কারবারী। লামা হাসপাতাল তাকে কক্সবাজার হাসপাতালে রেফার করে। পরে রাত ১১টায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। বশির আহমদের গায়ে কেউ হাত দেয়নি। সে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। তারপরেও এই বিষয়ে বশির আহমদ পরিবারের লোকজন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের ৫ পরিবারের ১২ জনকে আসামী করে মামলা করে। ইতিমধ্যে আসামী ২ জন আটক ও ১০ জন পলাতক রয়েছে। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করি। যেহেতু মামলা হয়েছে আইন দোষীদের বিচার করবে।
কিন্তু বাদী পক্ষ উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের পাঁচ পরিবারের কাউকে বসতবাড়িতে থাকতে দিচ্ছেনা। আমাদের ১০/১২ কানি জমিতে তামাক চাষ রয়েছে। এখন তামাক পুড়ানোর সময়, তারা আমাদের কাউকে তামাক ক্ষেতে যেতে দেয়না। পাহাড়ে উলফুল (ঝাড়ু) কেটে নিয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় আমাদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। বাড়ির পুরুষরা মামলার আসামী হয়ে কেউ জেলহাজতে আবার কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে আমরা বয়স্ক নারী ও ছোট ছোট শিশুদের প্রাণের ভয়ে ও বাদীপক্ষের হুমকিতে বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছি। খেয়ে না খেয়ে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চারা তাদের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেনা। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বলেও কোন প্রতিকার পায়নি। আমরা আইনের সহায়তা কামনা করি।
নুর হোসেন ভেন্ডির স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, বশির আহমদ কারবারী পরিবারের লোকজন হুমকি দিচ্ছে যে, তারা আমাদের পরিবারের কমপক্ষে ২/৩ জনের লাশ ফেলে দিবে। আমাদের কাউকে বাড়িঘরের আশপাশে দেখলে দা নিয়ে তাড়িয়ে আসে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে এলাকার কেউ আমাদের পাশে নেই এবং আশ্রয় পর্যন্ত দিচ্ছেনা। আমরা কি করবো, কোথায় যাবো জানিনা। আমাদের আপনারা বাঁচান ! তারা আমাদের বাড়ির গাছগাছালির ফল কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
মোঃ রফিকের নবম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে রোকসানা আক্তার (১৪) বলেন, স্কুলে এসাইনমেন্ট জমা দিতে বাড়িতে স্কুল ড্রেসের জন্য গেলে আমাদের দা দিয়ে দৌঁড়ায় বশির আহমদের পরিবারের লোকজন। আমি মা-বাবা ছাড়া ছোট ভাই-বোন গুলোকে নিয়ে তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
নব্বই উর্ধ্ব বয়স্ক মহিলা ফজেরুন নেছা কান্না করে বলেন, বাবারে আমাদের বাঁচান। হাঁটতে চলতে পারিনা। কিভাবে বনে জঙ্গলে থাকবো? কয়েকদিন যাবৎ নাতি নাতনিরা না খেয়ে আছে। তাদের মুখে খাবার দিতে পারছিনা। যারা ইনকাম করতো তারা তো জেলে। জমিনে ফসল নষ্ট হচ্ছে। আমাদের পাঁচ পরিবারের মানুষ গুলোকে একটু বাঁচান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আলীর স্ত্রী, ছলেমা খাতুন (৬০), নুর হোসেন ভেন্ডির স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫৫), মৃত শামসুল হকের স্ত্রী ফজেরুন নেছা (৯২), শিশু রোকসানা আক্তার (১৪), ইমন (৮), সাথী আক্তার (৬), আখিঁ (৩), পাখি (২), ফারহান (৯) এবং তানিয়া আক্তার (১৩)।