॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটিতে দিন দিন বাড়ছে বিষাক্ত তামাক চাষ। দেশ-বিদেশি সিগারেট কোম্পানিগুলোর বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী করছে চাষিদের। চাষের জন্য অগ্রিম খরচ দেওয়ায় তামাক চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন চাষিরা। জেলার বাঘাইছড়ি,বরকল,লংগদু ও জুরাছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ বাড়ছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও এ চাষ করছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি চারটি জেলায় প্রায় ২২৫ হেক্টর আবাদি জমিতে বিষাক্ত তামাক চাষ হয়েছে। এরমধ্যে জেলার বৃহত্তর উপজেলা বাঘাইছড়িতে ৭৫ হেক্টর,বরকলে ৫০ হেক্টর,লংগদুতে ৫০ হেক্টর এবং জুরাছড়িতে ৫০ হেক্টর আবাদি জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম এলাকায় কিছু সংখ্যক তামাক করা হয়েছে। এসব উপজেলা গুলোতে সিগারেট কোম্পানি আবুল খায়ের টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে চাষিদের দিয়ে এ চাষ করানো হচ্ছে।
বরকল উপজেলার তামাক চাষি মিলন জানান, জমিতে খাদ্যশস্য রোপন করে খুব বেশি লাভবান হতে পারেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় যোগাযোগের কারণে বেশিভাই খাদ্যশস্য বেচা-বিক্রি হয়। ফলে তিনি লোকসানে থাকেন বলে জানান।
বাঘাইছড়ি উপজেলার আরেক তামাক আব্দুল খালেক চাষি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে বীজ,সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ মোট ব্যয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা সহজ শর্তে ব্যয় করেন সিগারেট কোম্পানীগুলো। এ কারণে চাষিরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
তিনি আরো জানান, তামাক বিক্রি করতে আমাদের কোন হাট-বাজারে যেতে হয়। সিগারেট কোম্পানিগুলো এসে আমাদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় করে নিয়ে যান। ফলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তাদের ৫০ ভাগের ও বেশি লাভ থাকে বলে তিনি জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও উপজেলা গুলোতে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এতে তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অপরদেরও ক্ষতি করছে। এছাড়াও ফসলী জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে রাঙ্গামাটিতে পরিবেশ সংকটের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি-কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ না থাকায় তামাক চাষ ব্যাপক হারে বাড়ছে বলে তাঁরা জানান।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, তামাক চাষ ক্ষতিকর কম-বেশি সবাই জানে। তবুও চাষিরা বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানির সহযোগিতার কারণে তামাক চাষ করে যাচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে তামাক চাষ কমে আসছে। গত বছরে তামাক চাষ হয়েছিল ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার ২২৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। কারণ, তামাকের বিকল্প ফসল হিসেবে কিছু ফসল বাঁচায় করা হয়েছে। বিশেষ করে, লংগদুতে তরমুজ চাষ,বাঘাইছড়িতে বাদাম চাষ এবং জুরাছড়িতে শাক-সবজির পাশাপাশি বাদাম চাষও করা হচ্ছে। আমরা বিকল্প ফসল হিসেবে চাষিদের এসব চাষ করতে আগ্রহী করছি এবং তারাও আস্তে আস্তে এসব ফসলের চাষের দিকে ঝুঁকছে। এভাবে যদি চাষিদের তামাকের বিকল্প ফসলের চাষে আগ্রহী করা যায়,তাহলে রাঙ্গামাটিতে যে তামাকের আগ্রাসন তা অনেকাংশে কমে আসবে।