[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
জাতীয়তাবাদী দলে দালাল, ভুঁইফোড় কিংবা সুবিধাবাদী দোসরদের ঠাঁই দেয়া যাবে নাশান্তি ও উন্নয়নে রাজস্থলীকে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হবে:ক্যাম্প কমান্ডাররাঙ্গামাটি ২৯৯ আসন তারেক জিয়াকে উপহার দেবে জেলা বিএনপি: দীপন তালুকদারকাপ্তাই হ্রদের পানিতে তিন তরুণের স্বপ্নের ১৫ লক্ষ টাকার মাশরুমরাঙ্গামাটি পৌরসভাকে নাগরিক বান্ধব ও জবাবদিহিমূলক হতে হবেটাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইন উপলক্ষে বাঘাইছড়িতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিতবাঘাইহাট জোনের উদ্যোগে হতদরিদ্র অর্ধশতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রান বিতরণলংগদুতে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাথানচিতে জেন্ডার সমতায় সাফল্যের কাজ করে যাচ্ছে বিএনকেএসরাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তিন তরুণের স্বপ্নের ১৫ লক্ষ টাকার মাশরুম

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিন তরুণ। অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে রাঙ্গামাটির আসামবস্তি-রাঙ্গাপানি এলাকায় ভাড়া বাসায় শুরু করেন মাশরুম চাষ। মাশরুম চাষে স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তারা এ চাষ শুরু করে গত তিন মাস আগে। নিজেদের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মাশরুম নিয়ে শুরু হয় তাদের জীবিকা নির্বাহের কাজ। পরিকল্পনা আর মনেবলে প্রায় দশ হাজার মাশরুম নিয়ে জেলার সব থেকে বড় মাশরুম খামার শুরুও করে। শুরুর দুই মাস বেশ ভালই চলছিল তাদের খামার। কিন্তু ভাগ্য আর নিয়তি তাদের সংঘ ছাড়ে গত মাসে। টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে হুহু করে বেড়ে যায় কাপ্তাই হ্রদের পানি। এই অস্বাভাবিক পানিতেই তলিয়ে যায় তিন তরুণের স্বপ্নের মাশরুম খামার, সেই সাথে তলিয়ে যায় তাদের স্বপ্ন আর আশা।

মাশরুম খামারি মনু মারমা এই প্রতিবেদকের কাছে দুঃখ আর হতাশা নিয়ে বলেন, আমার খামারটি দেখলেই মন খারাপ হয়ে যায়। অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে শুরু করা মাশরুম খামারটি বর্তমানে হ্রদের পানিতে ভেসে আছে। খামারটি চোখের সামনে এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে কখনো কল্পনাই করিনি। সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে শুরু করেছিলাম আমি আর আমার দুই বড়ভাইকে নিয়ে। আমরা সবাই এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। কত টাকা ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দশ হাজার মাশরুম কিনেছি স্থানীয় বাজার থেকে। প্রতি পিচ মাশরুমের বীজে খরচ হয়েছে আশি টাকা। পরিবহণে খরচ হয়েছে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার। স্টাফ ছিল দুইজন, ঘর ভাড়া, মাশরুম রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি, বিদ্যুৎ বিল, মেশিনারি ক্রয়, অন্যান্য আনুসাঙ্গিকসহ প্রায় ১৪-১৫ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

মনু মারমা বলেন, প্রথম মাসে আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৩০ কেজি করে মাশরুম উদপাদন হয়েছে। তা দিয়ে স্টাফ বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও ঘর ভাড়া দিয়ে কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছি। কিন্তু নিজেরা যে টাকা খরচ করেছি সেটা লাভের মুখ একটুও দেখিনি। সবে মাত্র উদপাদন শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই হ্রদের পানি খামারে ঢুকে সব মাশরুম নষ্ট হয়ে গেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা আয় করতে পারতাম। কিন্তু হ্রদের পানি অতিমাত্রায় বাড়ার কারণে আমাদের আশা, স্বপ্ন সব শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমরা আবারও ঘুরে দাড়াতে চায়। আমাদেরকে যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আবার ঘুরে দাড়াতে পারবো। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আমাদের ঘুরে দাড়ানো সম্ভব নয়।

মাশরুম ক্রেতা বিনয় চাকমা জানান, আমি ওদের খামার থেকে প্রতিদিন মাশরুম কিনেছি। আমারও কিছুটা লাভ থাকতো। এখন আমিও আর মাশরুম কিনতে পারছিনা। এতে আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে এবার রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, ফলের বাগান, ফসলের জমি ও বিভিন্ন খামারিরা। ক্ষেত-খামারে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির ফলে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি ও খামারিরা।

এদিকে সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটি জেলার বেশ কিছু উপজেলায় কৃষক পরিবার এবং উদ্যাক্তাদের খুব ক্ষতি হয়েগেছে। শিক্ষিত বেকার যুবকযুবতিরা তাদেও স্ব-স্ব উদ্যোগে কৃষিজাত পন্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিলেও কোথাও কোথাও পানিতে তলিয়ে গেছে ফলে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতি হয়েছে এসব নতুন উদ্যোক্তাদেরও। দুর্গম জুরাছড়ি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৪৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বায়েজিদ বিন আখন্দ। এছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) এসএম মান্না জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের পানিবৃদ্ধির কারণে ৭৬৬টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৩৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেগ পেতে হবে।

উল্লেখ্য, কাপ্তাই হ্রদের পানি এবার সবোর্চ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমার নিকটবর্তী হওয়ায় গত ৪ আগষ্ট কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (বিউবো) ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান স্মাক্ষরিত একটি পত্রে ঘোষণা আসে ৫ তারিখ ৯টায় কাপ্তাইয়ের স্পিলওয়ের গেট খুলে দেয়া হবে। পরবর্তীতে ১৬টি গেইট দিয়ে প্রথমে ৬ইঞ্চি করে এবং পরে সাড়ে ৩ফুট করে খুলে দেওয়া হয় কাপ্তাই বাঁধের গেইট।