[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

আমি যৌবনে ফিরেছি বলছে যেন চিরচেনা রাঙ্গামাটির শুভলং ঝর্ণা

॥ মোঃ নুরুল আমিন ॥
রাঙ্গামাটির শুভলং যেন ভালোবাসার এক নাম। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমিতে দন্ডায়মান শুভলং ঝর্ণা। শুষ্ক মৌসুমে এ জেলায় একটু খরা দেখা দিলেও বর্ষায় আবার পরিপূর্ণ হয়। বর্ষা এলে যেন প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়। প্রবল জলধারা আছড়ে পড়ে পাহাড়ের বুক চিরে। শুষ্ক মৌসুমে ঝর্ণার জলধারা শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় চিরচেনা যৌবন ফিরে পেয়েছে রাঙ্গামাটির ছোট-বড় অসংখ্য ঝিড়ি ঝর্ণা। এরমধ্যে অন্যতম জেলার বরকল উপজেলার শুভলং ঝর্ণাটি। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের নয়নাভিরাম এক বিস্ময়কর এই ঝর্ণাটি খুবই দৃশ্যমান। যা দেখে মানুষের হৃদয়ে-মনে শিহরণ সৃষ্টি করে। আকর্ষণ করে তোলে পর্যটকদের।

চট্টগ্রাম থেকে শুভলং বেড়াতে আসা পর্যটক মিলি জানান, “শুভলং ঝরনায় এবারই প্রথম এসেছি। আগে টিভি, ফেসবুকে দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলাম, বাস্তবে এসে দেখলাম এর সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেশি। একেবারে মন ছুঁয়ে যায়। ঝর্ণার পানি যেভাবে নেমে আসছে, আর পাশের সবুজ পাহাড় মনে হলো যেন ছবির ফ্রেমে বন্দি হয়ে গেছি।”

রাঙ্গামাটি শহর থেকে পরিবার নিয়ে আসা মৌসুমী বণিক জানান, অনেক ভালো লাগছে এখানে এসে। ঝর্ণার অঝর ধারা দেখে মনটা জুড়িয়ে গেছে। প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য এতদিন কেন দেখি নাই নিজেকেই প্রশ্ন করেছি।
ঢাকা থেকে আগত শিলা আহমেদ জানান, “আমি প্রতি বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাই, কিন্তু এই শুভলংয়ের রূপ একেবারেই আলাদা। বর্ষায় পাহাড়ের প্রকৃতি জেগে ওঠে, আর এই ঝর্ণার রূপ তখন যেন হৃদয়ের সুর হয়ে বাজে। আজকে এখানে এসে আমি সত্যিই মুগ্ধ। চট্টগ্রাম থেকে আগত আরেক পর্যটক সায়েম জানান, এই ঝর্ণার পরিবেশটা একদমই মনোরম। আমার মন প্রফুল্ল হয়ে গেছে। বন্ধুদের বলবো জীবনে একবার হলেও এখানে ঘুরে আসা উচিত। এটা যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক ধরনের আত্মিক সংযোগ তৈরি করে দেয়। শুধু বাইরের পর্যটকরাই নন, স্থানীয়দের কাছেও শুভলং ঝর্ণা এক বিশাল অহংকার।

রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী মিলন ধর, যিনি পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন, জানালেন “জীবনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে প্রশান্তির খোঁজ করি আমরা সবাই। রাঙ্গামাটির এই ঝর্ণাটি তার জন্য এক আদর্শ স্থান। পর্যটকদের বলবো আসুন, ঘুরে যান, তবে দয়া করে সাবধান থাকবেন, কারণ ঝর্ণার উপরে ওঠা নিষেধ রয়েছে। ঝর্ণার পানিতে পাহাড়ের মাটির প্রতিটা ধাপ অনেক পিচ্ছিল হয়ে পড়ে।

শুভলং ইউনিয়ন যেন ঝর্ণার রাজ্য শুভলং ঝরনাটি অবস্থিত রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়নে। শুধু একটি নয়, এখানে রয়েছে প্রায় ৭-৮টি ছোট-বড় ঝর্ণা। প্রতিটি ঝর্ণার রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে এসব জলধারা রূপের যেন রূপের রাণী হয়ে। এছাড়াও পার্বত্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, কাউখালী, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও লংগদু উপজেলায় ছড়িয়ে আছে অনেক ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। এই প্রাকৃতিক উৎসবই রাঙ্গামাটিকে পরিণত করেছে বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন জোনে।

রাঙ্গামাটি সদর হতে শুভলং ঝর্ণার দুরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার বলে অনেকে জানিয়েছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিক সৃষ্টি রাঙ্গামাটির শুভলং এর ঝর্ণাটি। পাহাড়ের বুক চিরে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে অবিরাম প্রবল জলধারা আছড়ে পড়ছে। নিমিষেই মিশে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের বুকে। যেন গুঁড়ি গুঁড়ি জলকণা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি হচ্ছে কুয়াশার আভা। স্রোতধারার শীতল কলতানে নিক্কন ধ্বনির উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে চারপাশ। যেন সবুজ অরণ্যের প্রাণের ছোয়ার পরশ এঁকেছে কেউ।

শুভলং ঝর্ণায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, সকাল থেকে বিকেল অবধি চলছে ইঞ্জিনচালিত বোটে পর্যটকদের যাওয়া-আসার ধারা। কেউ পরিবার নিয়ে এসেছেন, কেউ বন্ধুবান্ধব মিলে। কারো হাতে সেলফি স্টিক, কেউ ড্রোন উড়াচ্ছেন, কেউ আবার পাহাড়ি খাদ্য আস্বাদন করছেন ঝর্ণার পাশে বসে। বেশিরভাগ পর্যটকই জানিয়েছেন, আমরা চাই এই সুন্দর জায়গাগুলো টিকে থাকুক। আমরা যারা ঘুরতে আসি, তাদের সবার দায়িত্ব জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখা, গাছপালা নষ্ট না করা, ঝর্ণায় অযথা নেমে বিপদ ডেকে না আনা। এগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ, এগুলো রক্ষা করা আমাদেরই কাজ। পর্যটনের সম্ভাবনা, কিন্তু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে-পর্যটন শিল্প রাঙ্গামাটির অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। শুভলং ঝরনা এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি প্রত্যাশা রইল পর্যটকদের সুবিধার্থে সঠিক অবকাঠামো গড়ে তুলে একে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পটে রূপান্তর করা হোক। তাতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি পাহাড়ের যুব সমাজও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। ঝর্ণার ধারায় বয়ে যায় পাহাড়ি জীবনের গীতি। শুভলং সেই সুরেরই এক অনন্য রূপ। বর্ষার দিনে রোদ-বৃষ্টির খেলা, ঝর্ণার ছলছলে ধারা আর সবুজে মোড়ানো পাহাড় সব মিলিয়ে এটি যেন জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তির এক স্বপ্নদ্বার। তাই প্রকৃতিকে ভালোবাসলে, হৃদয়ের গভীরতা অনুভব করতে চাইলে একবার ঘুরে যান শুভলং ঝর্ণায়। ফিরবেন এক নতুন প্রশান্তি নিয়ে।