বান্দরবানের থানচি হাসপাতালেও দূর করতে হবে চিকিৎসক সংকট
তিন পার্বত্য জেলা নিয়েই আমাদের পার্বত্য অঞ্চল। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল উপজেলার প্রত্যন্ত সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকার শয্যা বাড়িয়ে হাসপাতালে রূপান্তর করেছিল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি অধিকাংশ উজেলার এসব হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি অনেকটাই বেহাল। তেমনি বান্দরবান পার্বত্য জেলার সমান্তবর্তী থানচি উপজেলার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ৫০ শয্যায় উন্নিত হাসপাতাল। অথচ সেখানেই মানুষের চিকিৎসা সেবা নিতে যেন কষ্টের শেষ নেই। তাই এসব কষ্টের কারনে বহু উপজেলায় মানুষের চিকিৎসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি বিগত সরকার। কেননা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো শয্যা বাড়িয়ে হাসপাতাল করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ডাক্তারে স্বয়ংসম্পূর্ন করতে না পারার কারনে। আবার লক্ষ্য করা গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে কোন কোন হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাররা সেচ্ছায় থাকতেন না বা আসতেন না। এর বেশ কিছু কারণও আমরা লক্ষ্য করতে পারি, যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবায় প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র এবং স্বাস্থ্য সেবাসম্পর্কিত নানান সরঞ্জাম, তার মধ্যে আরো একটি সংশয় হলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। তাই এসব বিষয় থেকে আমরা উত্তোরণ হতে পারলে প্রত্যন্ত অঞ্জলের মানুষের চিকিৎসা সেবা যেমন নিশ্চিত করা যাবে তেমন মানুষের মাঝে ঘনিষ্টভাবে আস্থার প্রতিশ্রুতি বাড়বে।
আমরা জানতে পারছি অনেক উপজেলার মধ্যে বান্দরবানের থানচি উপজেলার হাজরো মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট চরমভাবে তৈরী হয়েছে যে, সেখানকার ৫০ শয্যায় উন্নত হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কেননা সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, উন্নত মানের কোনো চিকিৎসা সরঞ্জামও। সংকটে-সংকটের কারণে মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতেও নাকি আগ্রহী নয়। তাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রচারসহ জনবল নিয়োগ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আরো জানা গেছে, ২০১৯ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছিল। হাসপাতালে সরকারিভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ১৩জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন ৩জন। তারমধ্যে বর্তমানে তিন চিকিৎসকের একজন দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যজন জেলা সদর হাসপাতালে প্রেষণে দায়িত্বরত। সেই হিসেবে মাত্র একজন চিকিৎসকের কাঁধেই চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল।
জনবল সংকট থাকায় ৫০ শয্যার নতুন ভবনে চার তলায় ৪টি কেবিন ও ১৪টি ওয়ার্ডেও বেডগুলো অযত্নে পড়ে আছে। পুরোনো ভবনে মহিলা ওয়ার্ডে ১২জন রোগী ভর্তি করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা চলছে। পুরুষ ওয়ার্ডে রোগীও নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন ভবন স্থাপন করা হলেও চিকিৎসাসেবা চলছে পুরোনো ভবনে। কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিত্য রয়েছে হাসপাতালে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার, এক্সরে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি না থাকা। সেজন্য সেখানে জটিল রোগের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসক ও নার্স সংকটের ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে হাজারো মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবছরে সেখানে মে, জুন, জুলাই এই তিন মাস হচ্ছে পাহাড়ে ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সময়। তখন যেন মানুষের মনে চরম ভয় এসে যায় মনে। এভাবেই প্রত্যন্ত আরো অনেক হাসপাতালগুলোর একই দশা যেমন একইভাবে চলছে রাঙ্গামাটির রাজস্থলীস্থ উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমও। সংকট আর অভিযোগের যেন শেষ নেই। এভাবেই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকার কারনে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর মাঝে যেন ধারনা তৈরী হচ্ছে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই চিন্তা বা ভাবনাগুলো আমাদের দুর করতে হবেই। যে কোনভাবেই হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং সেবক, চিকিৎসা সম্পর্কিত টেকনিশিয়ান ও সকল প্রকার সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজনে আইনের কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে প্রশাসনকেই।