॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে তিল চাষ। আগে যেখানে শুধুমাত্র জুম চাষ আর শাকসবজির উপর নির্ভর করতেন কৃষকরা, এখন সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে উচ্চমূল্যের এই তেলবীজ ফসল। রোগ বালাই ও খরছ উভয় কম, অল্প পরিচর্যায় দ্বিগুণ লাভজনক হওয়ায় তিল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। তিল চাষ বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি অঞ্চলে তিল চাষ দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন তিল চাষের দিকে। তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভজনক এই চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেছেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিল উৎপাদন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা পৌরসভা ২ হেক্টর, সদর ইউনিয়ন ২ হেক্টর, বেলছড়ি ০.৫ হেক্টর, গোমতি ২ হেক্টর, বড়নাল, তবলছি, তাইন্দং ৩ হেক্টর, করে মোট ১৫.০৫ হেক্টর জমিতে এবার তিলের আবাদ হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রতিজন কৃষক কে ১ কেজি করে ৩০০ জন কৃষক কে ৩০০ কেজি তিলের বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে উপজেলার পৌর এলাকা, গোমতী, বড়নাল এলাকায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থোকায় থোকায় সাদা সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো জমিন। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গ্রীষ্মের ঝিরিঝিরি বাতাসে যেন মিটিমিটি করে সাদা আলো জ্বলজ্বল করছে। কোথাও কোথাও ফুল শেষে গাছ ফলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
কৃষক জাহাঙ্গীর, আব্দুল মালেক আলম বলেন, আমরা ২ বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি।উপজেলা কৃষি অফিস এবং স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে উন্নত জাতের বীজ, সঠিক সময়ে বপন এবং সার ব্যবস্থাপনার ফলে ভালো ফলন মিলবে তেমনটাই আশা করছি। তবে আগামী তে আরো বেশি জমিতে তিলের আবাদ করবো। কৃষক এরশাদ, আজিজ বলেন, তিলের বীজ বপনের পর মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই ফসল তুলতে পারেন তারা। তিল চাষে অন্য ফসলের মতো তেমন ঝামেলা নেই। রোগবালাই কম হয়। তাই খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। দিতে হয় না কোনো রাসায়নিক সার। আমরাও ২ বিঘা জমিতে তির চাষ করেছি আশা করছি ভাল ফলন হবে।
মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা জানান, সরেজমিনে মাঠে গিয়ে তিল চাষে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিল গাছগুলো বেশ পুষ্ট হয়েছে একই সাথে আশানুরূপ ফলন দেখা যাচ্ছে। তবে অতি বৃষ্টি ও আগাম বৃষ্টি হবার দরুন লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সবুজ আলী বলেন, তিল চাষে ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রদর্শনী জমির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। আগামীতে তিল চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তিল চাষ এখন শুধু একটি ফসল নয় এটি হয়ে উঠতে পারে পাহাড়ের কৃষকদের স্বপ্ন বোনার নতুন পথ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তিলে রোগবালাই এবং পানির প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে কম, তাই পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য এটি বেশ উপযোগী পাশাপাশি তিল থেকে উৎপাদিত তেল ও বীজ বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণের সুযোগ আরও বাড়ানো হলে তিল চাষ পাহাড়ি কৃষকদের জন্য হতে পারে টেকসই আয়ের একটি উৎস।