গৌতম বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত প্রধান ঘটনাই হলো ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’
॥ দেবদত্ত মুৎসুদ্দী গোপাল ॥
বুদ্ধ পূর্ণীমার তাৎপর্য্য সারাবিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা পবিত্রতম ধর্মীয় উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মহাপ্রয়াণ ও বোধিলাভ এই ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত ও ঘটনাবহুল দিবস এটি।
গৌতম বুদ্ধের তিনটি প্রধান ঘটনাকে ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়া গৌতমবুদ্ধের জন্ম, মহাপ্রয়াণ ও বোধিলাভ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর অপর নাম বৈশাখী পূর্ণিমা। জাতিসংঘ আজকের দিবসটিকে ‘ডে অব বৈশাখ’ হিসেবে পালন করেন।
এই দিনে, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী, ভক্ত বৃন্দরা ধ্যান, ধর্মগ্রন্থের জপ এবং মন্দির এবং বৌদ্ধ জাদী গুলিতে ফুল ও ধূপ নিবেদন সংঘ দান, বুদ্ধ প্রতিবিম্বদান, শিশু, কিশোর কিশোরী দের জন্য নানান প্রতিয়োগীতা,শিক্ষা মূল্যক অনুষ্ঠান, র্যালীর মতো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ভক্তিমূলক কাজে নিযুক্ত হন। এটি গভীর আত্মদর্শনের সময়, যেহেতু বৌদ্ধরা বুদ্ধের শেখানো সহানুভূতি, অহিংসা এবং মননশীলতার অসংখ্য গুণাবলী অনুকরণ, অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা শান্তি সম্প্রীতি প্রচারের একটি উপলক্ষ কারণ অনুসারীরা অন্যদের প্রতি দয়া ও করুণা, কুশল কাজ প্রসারিত করে। এটি প্রেম, সহানুভূতি এবং বোঝাপড়ার সার্বজনীন মূল্যবোধের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে, বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং পটভূমির লোকেদের মধ্যে একতা এবং সদিচ্ছার বোধ জাগিয়ে তোলে।
মহামানব গৌতম বুদ্ধ, যিশু খ্রিষ্টের জন্মের ৬০০ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। ৬২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নেপালের কপিলাবস্তু এলাকার লুম্বিনী নামক স্থানে জন্ম নিয়েছিলেন। তিন রাজঐসয্য ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর ৫৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন ভারতের বিহার প্রদেশে গয়ার বোধিবৃক্ষমূলে নৈরঞ্জনা নদীর পাশে যাহা বর্তমানে বুদ্ধগয়া নামে বিশ^পরিচিত। এরপর গৌতম বুদ্ধ সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। ৫৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কুশিনগরের শালবন নামক স্থানে ৮০ বছর বয়সে তিনি (প্রয়াণ) মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের জন্মের হিসাবকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বুদ্ধাব্দ বা বছর হিসাব করেন। সে হিসাবে বৈশাখী পূর্ণীমা তিথি থেকে ২৫৬৯ বুদ্ধাব্দ গণনা শুরু হবে। দেশ বিদেশের প্রতিটি বুদ্ধ, বিহারে, জাদীতে পেগোডায়, অনেকে যারা অসুস্থ, যারা কারণে বিহারে যেতে পারেন না তারা নিজ বাসায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ধর্মীয়ভাবগাম্ভির্য্যে পালন করেন। এছাড়াও জাতি সংঘ এ দিনটিকে ‘ডে অব বৈশাখ নামে অভিহিত করেছেন।
এদিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এর ন্যায় তিন পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্বিয্যে দিবসটি পালন করে আসছে।
“জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ মুক্ত হোক”