বান্দরবানের থানচিতে নিজ গ্রামে ফিরলেন বম জনগোষ্ঠীর আরো এক পরিবার
॥ চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি ॥
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ভয়ে পালিয়ে থাকা অনেকের মধ্যে বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের আরো একটি পরিবার নিজ গ্রামে ফিরলেন। আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়ার প্রায় ২ বছর পরে বান্দরবানের থানচিতে প্রাতা পাড়ার বাসিন্দা বম জনগোষ্ঠীর পরিবার দুপুরে নিজ গ্রামে ফিরেছেন। বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড এর অধীনস্থ ১৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা এসময় তাদের পাশে থেকে খাদ্য সামগ্রী ও ঔষধপত্রসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাকলাই পাড়া সাব-জোনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার (৮মে) দুপুরে দিকে উপজেলা সদর ইউনিয়নের সীমান্তে প্রাতা পাড়া বাসিন্দা ৫ সদস্যদের নিয়ে ১টি পরিবার নিজ গ্রামে প্রবেশ করেছেন। ওখানকার বাসিন্দাদের মাঝে সেনাবাহিনীর বাকলাই পাড়া সাব জোন ক্যাম্পের সেনাসদস্যদের কর্তৃক খাবার খাওয়ানো হয়। দীর্ঘ ২ বছর পরে ফিরে আসা পরিবারের সদস্যদের মেডিকেল সহায়তাসহ ঔষুধপত্র প্রদান এবং চাল ৫ কেজি, আটা ২ কেজি, চিনি ২ কেজি, তেল ২লিটার, ডাল ২ কেজি, লবণ ১ কেজি, চা-পাতা ১ কেজি ও মসলা জাতীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যরা থানচি সদরে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের ডাকাতি ঘটনার পরে বম জনগোষ্ঠীর প্রাতা পাড়াবাসিন্দারা নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্নস্থানে পালিয়ে যায়। ওখানকার এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গত ২০২৪ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১২টি পরিবার ফিরেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ২ বছর পরে আরো ১টি পরিবার ফিরেছেন নিজ গ্রামে। তাঁরা আরো জানান, বান্দরবান রিজিয়নের উদ্যোগে চলতি সপ্তাহের গত বৃহস্পতিবার ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক এর পক্ষ থেকে বাকলাই পাড়া সাব-জোনের অন্তর্গত রেমাক্রী সীমান্তের দোলাচরণ পাড়া বাসিন্দাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে আর্থিক অনুদানসহ ব্যাটারী, সোলার প্যানেল, লাইট বিতরণ করা হয়েছে। বাকলাই পাড়া সাব-জোনের সাবজোন কমান্ডার এর নেতৃত্বে সেখানে মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন কর্মসূচির পরিচালনা করা হয়। এ পর্যন্ত ১৩টি পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে এসেছেন বলে জানান।
প্রাতা পাড়ার বাসিন্দা পারক্যালিং বম (৬৮) বলেন, কেএনএফ এর সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সমস্যার কারণে তারা দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ গ্রাম ছেড়ে বনজঙ্গলে, বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে নিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর আশ্বাসে তাঁরাও নিজ বাড়িতে ফিরে আসছেন। নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পরিবারের সদস্য রোয়াল বম, রুইশিং বম বলেন, জীবন বাঁচানোর জন্যে বহু মাস ধরে বনজঙ্গলে ও আত্নীয়স্বজনের ঘরে খেয়ে না খেয়ে খুবই কষ্টেদিন কাটাচ্ছি। প্রায় ২ বছর পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রামের বসতভিটায় ফিরে এসেছি, সেনাবাহিনীর মেডিকেল সহায়তাসহ ঔষুধপত্র ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। বনজঙ্গল কিংবা অন্যত্রস্থান থেকে নিজ বসতবাড়িতে ফিরতে পেরে খুশি এবং সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁরা।
বাকলাই সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আসিফ জুবায়ের জানান, বম জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন ও ফেরত আসা জনগোষ্ঠীর চাকুরীর ব্যবস্থা, আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় খাবারের রসদ সরবরাহ ইত্যাদি ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। এলাকায় শান্তি সম্প্রীতি ও জনগণের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে সবসময়ই সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে আসছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।