॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত খাগড়াছড়ির মনিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে করে মানিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৭৭ হাজার মানুষের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তি লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা ও রামগড় উপজেলাসহ প্রায় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ৮ মে অবকাঠামো উন্নয়নে পাশাপাশি ৩১ শয্যা হাসপাতাল থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতালের অনুমোদন দেয়া হয়। আর অনুমোদনের প্রায় চার বছর অতিবাহিত হলেও ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল নিয়োগের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তাছাড়া ঘাটতি রয়েছে ৩১ শয্যা হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় জনবলেও। ৩১ শয্যা হাসপাতালে ১৩ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র ৪ জন। এর বাইরে একজন গাইনী, একজন ডেন্টাল ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একজন। আর ডা. মইনুল হোসেন নামের এক চিকিৎসক গত তিন মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। সেই সাথে ২৫ জন নার্সের স্থলে রয়েছে ১১ জন, দুজন আয়া থাকার কথা থাকলেও সে পদে নেই একজনও। অন্যদিকে ৩ জন ওয়ার্ড বয়ের স্থলে রয়েছে মাত্র একজন, স্বাস্থ্য সহকারি পদে ১৫ জনের স্থলে রয়েছে তিনজন, সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শকের তিন পদের তিনটিই শূণ্য, দুজন ফার্মাসিস্ট পদে একজনও নেই। পাশাপাশি কুক পদটিও শূণ্য রয়েছে। অথচ ৫০ শয্যা হাসপাতালে সর্বমোট ১২৩ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও সবমিলিয়ে রয়েছে মাত্র ৪৪ জন।
বুধবার সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র একজন ডাক্তার। যিনি রোগি দেখছেন, তিনিই আবার রোগী ভর্তি করছেন এবং ওয়ার্ডে থাকা অন্যান্য রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করছেন। যার ফলে হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে একজন চিকিৎসককেই। অন্যদিকে গত চারদিন যাবৎ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের কোনো ডাক্তার দেখতে না আসার অভিযোগে হট্টগোল বাধে সকালে। এসময় রোগী ও রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও জড় হলে হইচই বাধে পুরো মেডিকেলে। এসময় জরুরী বিভাগেও কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসককে দেখা যায়নি। পরে ভারপ্রাপ্ত মানিকছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম’র নেতৃত্বে বিষয়টি সমাধান করা হয়।
ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন মোঃ শাহ আলম জানান, গত রবিবার রাতে ভর্তি হলেও সোমবার কোনো ডাক্তার আসেনি। এছাড়াও ভর্তিকৃত নুর মোহাম্মদ, সুইলাই মারাম ও নুর নাহার জানান, গত ২৪ ঘন্টায় কোনো ডাক্তার না আসলেও সকালে ঝামেলা হওয়ার পর একজন ডাক্তার এসে দেখে গিয়েছেন। এছাড়াও অব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত তদারকির অভাব, অভ্যান্তরে অপরিচ্ছন্নতা, ঔষধ সংকট ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, নার্সদের দুর্ব্যবহারসহ নানা সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। সেই সাথে গত ২৪ ঘন্টার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. এস এম রেজাউল করিম একবারও ভর্তি রোগীদের দেখতে না আসায় ক্ষিপ্ত হন রোগী ও রোগীর স্বজনেরা।
তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবায় ভোগান্তির কথা স্বীকার করলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম। তিনি জানান, ৩১ শয্যা হাসপাতাল থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতাল উত্বীর্ণ করা হলেও গত চার বছরে কোনো জনবল নিয়োগ করা হয়নি। পাশাপাশি ৩১ শয্যার জনবলেও ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দায়িত্বে থাকা ডাক্তার ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীকে দেখতে যাননি, সেবিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। তবে দায়িত্বে অবহেলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করারও আশ্বাস দেন তিনি।