গুণগত শিক্ষা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিতে পারবে: রাঙ্গামাটিতে জলখেলি অনুষ্ঠানে সুপ্রদীপ
॥ মোঃ নুরুল আমিন ॥
পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তম সামাজিক অনুষ্ঠান বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষেরচলমান অনুষ্ঠানের অংশ রাঙ্গামাটিতে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব বা রিলংপোয়ে (জলখেলি) অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব:) সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, গুণগত শিক্ষা পাহাড়ের মানুষকে সবদিক থেকে মুক্ত করতে পারবে, জাতিগত ভেদাভেদকে এবং অর্থনীতি ভেদাভেদকেও ভুলিয়ে দিতে পারবে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারি স্টেডিয়ামে মারমা সাংস্কৃতি সংস্থা (মাসাস) এর উদ্যোগে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহি সামাজিক উৎসব এই ‘জলখেলি বা জল উৎসব অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈসাবি ও বাংলা নতুন বৎসরে মারমা সম্প্রদায়ের এ উৎসব জলখেলি উৎসব বা ওয়াটার ফেস্টিভাল নামে পরিচিত। পানিকে পবিত্রতার প্রতীক মেনে রঙ-বেরঙের ঐতিহ্যবাহি পোশাক পরিধান করে মারমা তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে ছিটান একে অপরের গায়ে। উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে চলছে এখন পানির উৎসব বা জলকেলি উৎসব। রাঙ্গামাটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকল উপজেলা থেকে মারমা জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতোই। সেই সাথে অন্যান্য সকল সম্পদায়ের সব বয়সের নারী-পুরুষের উপস্থিতিকে বাড়িয়ে দেয় অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব:) সুপ্রদীপ চাকমা। উদ্বোধক ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী। গেস্ট অব অনার ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.)অনুপ কুমার চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ,রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপি’র সভাপতি দীপন তালুকদার দিপু, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন। এসময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) এর সভাপতি থোয়াই সুই খই মারমা।
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোন ভেদাভেদ থাকুক না কেন আমাদেরকে মুক্ত করবে একমাত্র গুণগত শিক্ষা। আমি যতদিন দায়িত্বে আছি আমার প্রচেষ্ঠা থাকবে সকল সম্প্রদায়ের প্রতি সমদৃষ্টি। উন্নয়ন আর সম্প্রীতিতে যাহাতে বৈষম্যের সৃষ্টি না হয়। তিনি আরো বলেন, আজকের আনন্দ কোন এক জাতিগোষ্ঠীর নয় এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকলের উৎসব। পুরনো বছরের সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে জল উৎসব করবো। আজকের এ আনন্দ উৎসব সকলের মধ্যে ভালবাসার সম্প্রীতি সৃষ্টি করবে।
সভা শেষে অতিথিরা ‘জলখেলি’ উৎসব উদ্ধোধন করেন। এর পর পরেই এক পাশে তরুণ অন্য পাশে তরুণীরা অবস্থান নিয়ে একে অপরকে জল ছিটাতে শুরু করে। তাদের ধারণা, এতে পুরনো বছরের সমস্ত জরাজীর্ণ ধুয়ে মুছে যায়। একটি সুন্দর আগামী দিনের প্রত্যাশায় এ জল ছিটানো হয়। জল খেলায় কোন বিবাহিত নারী-পুরুষ অংশ নিতে পারেন না। এ খেলায় শুধুমাত্র অবিবাহিত তরুণ-তরুণীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। জল খেলার পাশাপাশি চলে তরুণ-তরুণীদের একে অপরকে পছন্দ করার বিষয়টিও। পছন্দ হলে সে তরুণ-তরুণীরা আগামী দিনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার একটি রীতিও প্রচলিত আছে এ উৎসবে। জল খেলা শেষে স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠির শিল্পীরা তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে বিভিন্ন সংগীত পরিবেশন করেন। ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জল উৎসব পালনে সকল সম্প্রদায়ের হাজার,হাজার দর্শকের সরগম ছিল দেখার মত। মারমা সম্প্রদায়ের এ জলকেলি উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব।