রাঙ্গামাটিতে বিল্ডিং কোড মানছে না, নাগরিকরা সেবাবঞ্চিত, জন্ম নিবন্ধনে নাজেহাল অবস্থা
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর হলেও নাগরিকরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিতই ছিল। হ্রদের জায়গাতো বেদখল হচ্ছেই। পাকাভবন তৈরীতে বিল্ডিং কোডও মানা হচ্ছেনা। নগরবাসী সামাজিক অনুষ্ঠান মেঠাতে পৌরসভার টাউন হল থেকে বঞ্চিত বহু বছর। অটোরিক্সা চালক মালিকদের কাছে একপ্রকার জিম্মি অথচ টাউন সার্ভিস এর মূখ আর দেখা হচ্ছে না। রাজনৈতিক গেড়াকলে বন্দি ছিল সেবা, ট্রেড লাইসেন্স পেতে অনিশ্চয়তা আর জন্ম নিবন্ধন পেতে চড়কারমতোই ঘুরতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৩মার্চ) রাঙ্গামাটি পৌরসভার নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত পৌর প্রশাসকের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ উঠে এসেছে।
পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে বিকাল ২.৩০ ঘটিকায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রশাসক মোঃ মোবারক হোসেন (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) সহ উপস্থিত ছিলেন, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াছিন খন্দকার (সিনিয়র সহকারি কমিশনার) পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র, হিসাব রক্ষক মোঃ ফারুখ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাংবাদিকদের মধ্যে প্রেস ক্লাব সভাপতি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক রাঙামাটি এর সম্পাদক আনোয়ার আল হক, সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময় সম্পাদক ও পার্বত্য সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মিলটন বড়ুয়া, জার্নালিষ্ট নেট ওয়ার্ক সভাপতি শান্তিময় চাকমা, সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি নন্দন দেব নাথ, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকরা বলেন, জনপ্রতিনিধিরা গনমাধ্যমকে এড়িয়ে চললেও বলা যায় দীর্ঘ বছর পর কোন পৌর প্রশাসকের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এটাই ছিল মতবিনিময় সভা। লুটেরা টাউটদের খপ্পরে পরে পৌরসভা কর্মকর্তারাও তোয়াক্কা করেনি গণমাধ্যমকে। তাই বর্তমান পৌর প্রশাসকের সাথে বৃহস্পতিবারের মতবিনিময় সভায় পরামর্শ আর নানান অভিযোগের যেন শেষ হতেই চায়নি। টানা অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভার বিগত দুইটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী মেয়র এর দায়িত্ব নিলেও নাগরিকদের অধিকারের প্রতি কোন সম্মানই ছিল না। নাগরিক সেবা আর প্রশাসনিক দায়-দক্ষতা না থাকায় নিজেরই স্বার্থের প্রতি অবিচল ছিল। লুটপাট আর দুর্নীতিতে মগ্ন থাকায় নাগরিকরা অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল আর বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। অবশেষে দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও গণআন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটলে দীর্ঘ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ গুলো সেদিন আন্দোলনকারীদের বাধারমুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় মেয়র আকবরকে।
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, বিগত সময়ের মেয়রগুলোর কারনে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা বেদখল হয়ে আসছিল। শহরের পাকা ভবন নির্মাণ হলেও মানা হয়নি কোন বিল্ডিং কোড। সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের সময় পৌরসভার টাউন হলটি ভাঙ্গা হলেও নাগরিকদের সুবিধার জন্য সেটি আর নতুন তৈরী আদো করা হয়নি। টাউন হলটি দ্রুত নির্মানের আহ্বান করেছেন সাংবাদিকরা। আটোরিক্সা চালক মালিকদের কাছে নাগরিকরা জিম্মি থাকলেও রাজনৈতিক ফায়দা লুটের জন্য টাউন সার্ভিস চালু সহ জিম্মিদশা থেকে উত্তোরণের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। বিগত ১৫বছরের অধিক সময় থেকেই পৌরসভায় দায়সারা গোছের নেতৃত্ব থাকাতে থমকে যায় পৌরসভা সাথে নাগরিকসেবা সম্পর্ক। প্রশাসক নিয়োগ হলেও এবার ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহনে নথিপত্রের যে নিয়ম আরোপ করা হয়েছে তাতে নতুন ট্রেড লাইসেন্স করা বা নবায়ন করা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে চরকারমতোই ঘুরতে হচ্ছে নাগরিকদের। এছাড়াও আরো নানান অভিযোগ উঠে আসলেও নতুন প্রশাসকও কোনটা রেখে কোনটা সামাল দিবেন সেটিও যেন ভেসে উঠেছে মতবিনিময়সভায়। এভাবেই পৌরসভা নাগরিকরা তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত থাকার বিষয়গুলো সাংবাদিকরা টানা উত্তাপন করেছেন।
পরে প্রশাসকের বক্তব্যে মোঃ মোবারক হোসেন বলেছেন, নাগরিক সেবার উন্নয়নে সাংবাদিকদের পরামর্শ এবং অভিযোগগুলো থেকে উত্তোরনে চেষ্টার কমতি থাকবে না। দায়িত্ব পালনে সহযোগীতার জন্য সাংবাদিকদের পাশে থাকারও আশা প্রকাশ করেছেন নতুন প্রশাসক।