[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় সমলয় চাষাবাদের বোরো ধান কর্তন কার্যক্রম উদ্বোধনরাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ২৫০০ পরিবারের মাঝে বিজিবি ’র খাদ্যশস্য বিতরণলংগদুতে ট্রলি দূর্ঘটনায় এবার চালকেরও মৃত্যু হয়েছেখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মৎস্য চাষীদের মাঝে মৎস্য খাদ্য বিতরণবান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বেহাল দশা, মাত্র ২ জন চিকিৎসকবাঘাইছড়িতে বায়তুশ শরফ মাদ্রাসায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণগৌতম বুদ্ধ ২৫৬০ বছর আগে জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেনহৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জসিম মারা গেছেনখাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ (মূল) দলের সদস্য আটকখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২৪ উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে সনাকের আলোচনা সভা

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে হামলা তারুণ্যের অর্জন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে

২৭

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের আশা-আকাক্সক্ষার কার্যকর প্রতিফলন চাই প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২৪ কে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে যুবদের সাথে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে (১২ আগস্ট) আশিকা কনভেনশন পার্ক, রাঙ্গামাটিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। টিআইবি ইন্টার্ন ফাইজুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি প্রফেসর বাঞ্ছিতা চাকমা। সভায় রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত যুবরা অংশগ্রহণ করেন। শুরুতেই পরিচয় পর্ব, জাতীয় সঙ্গীত পরিবশেনা এবং যুব দিবসের তাৎপর্য নিয়ে ধারণা পত্র পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সনাক সদস্য মুজিবুল হক বুলবুল।

বক্তারা বলেন, চলমান আন্দোলন প্রমাণ করেছে তরুণরা অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। তারুণ্যকে উপেক্ষা বা নিপীড়নের মাধ্যমে টিকে থাকা যায় না। তরুণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলোÑ দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও সর্বোপরি সুশাসনের প্রকট ঘাটতিতে সৃষ্ট স্বৈরাচারকে চরম মূল্য দিতে হয়। জনগণের সত্যিকারের সমর্থন ও ম্যান্ডেট ছাড়া অপশাসন ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলসহ সকল পক্ষকে এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে হবেÑতারুণ্যের শক্তিকে দমন নয়, বরং তাদের প্রাপ্য অধিকার, মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং তরুণরা তাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণে, দাবি আদায়ের আন্দোলনে যাতে নির্ভার থাকতে পারেÑরাষ্ট্রকে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। একইসঙ্গে ‘‘স্বৈরাচার-পতন’’ উদ্যাপনের নামে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানে হামলা; মন্দির ও উপসনালয় ধ্বংসসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ, গণমাধ্যম, পুলিশবাহিনী ও পেশাজীবিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ আচরণের মাধ্যমে তারুণ্যের এই অর্জন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেতে পারেÑএ জাতীয় আত্মঘাতী গর্হিত অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ সমাজ স্বপ্রণোদিত হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

যে নতুন দিনের শুভসূচনা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার আলোকে রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে এদেশের সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চয়তাসহ একটি বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সুশাসিত স্বদেশ বিনির্মাণে দুর্জয় তারুণ্য অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের তরুণদের এই দৃষ্টান্ত অনাগত দিনে বৈশি^ক পর্যায়ের যে কোনো ন্যায়ভিত্তিক আন্দোলনের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। একইসঙ্গে ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে তারুণ্যের এই জয়রথ যেন সংকীর্ণ কোনো চোরাবালিতে আটকে না যায়, সেই লক্ষ্যে তাদের বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা সর্বোপরি তাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। তরুণদের আশা-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন, সাম্য ও মেধাভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণই হোক এ বছর ‘‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’’ পালনের মূলমন্ত্র।

সভা শেষে অংশগ্রহণকারী যুবরা দুর্নীতিবিরোধী শপথ গ্রহণ করেন। সভায় স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষে ভিএসও প্রতিনিধি- শহীদুল ইসলাম, বিএনসিসি পক্ষে প্লাটুন সার্জেন্ট-সাইসুন ইসলাম, রেড ক্রিসেন্ট প্রতিনিধি আল মাহমুদ, রোটারেক্ট ক্লাব প্রতিনিধি নাজমা আক্তার, এসিজি সদস্য দিদার গণি এবং সনাক সদস্য রেজাউর রশীদ পাপ্পু, গৈরিকা চাকমা, মোহাম্মদ আলী, অঞ্জুলিকা খীসা, সুস্মিতা চাকমা, নিরূপা দেওয়ান প্রমুখ। সভায় তারুণ্যের দাবি সম্ভাবনাময় যুব জনগোষ্ঠীকে জাতীয় অর্জনের মূল চালিকাশক্তি বিবেচনা করে নিম্নোক্ত সুপারিশ উত্থাপন করা হয়Ñ তরুণদের আশা-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন, সাম্য ও মেধাভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে অঙ্গীকারবদ্ধ ও উদ্যোগী হতে হবে।

যেমন, এমন রাষ্ট্রকাঠামো গড়তে হবে, যা দীর্ঘকাল লালিত কলুষিত ও দুবৃর্ত্তায়িত রাজনীতির পরাজয়ের শিক্ষা অনুসরণে বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমসহ মানবাধিকারভিত্তিক, জনকল্যাণমূলক, অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক “নতুন বাংলাদেশ” বিনির্মাণে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজনীতিকরণ বন্ধ করে পুরো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে এই সংস্থাসমূহ কখনোই সরকারের ক্ষমতালিপ্সা চরিতার্থের হাতিয়ারে পরিণত না হয়। বহুমাত্রিক ও বহুপর্যায়ের নজিরবিহীন ও নির্মম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তদন্ত নিশ্চিতে জাতিসংঘের উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বাধীন কমিশন গঠন করার মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবাদের অধিকার, সমাবেশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারি পদ-পদবী ও জনপ্রতিনিধিত্বকে দুর্নীতির লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জন ও বিস্তারের পথ চিরতরে রূদ্ধ করতে হবে। তথ্য, বাক ও মত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করার ফ্যাসিস্ট-পদ্ধতি চিরতরে বন্ধ করার কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসহ আইনের শাসনের সঙ্গে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠান তথা সার্বিক রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাতে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সকল ধরনের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে তারুণ্য যাতে নির্ভয়ে মতামত ব্যক্ত করতে পারে তার টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল-কাঠামোতে দক্ষতার আলোকে প্রযোজ্য পরিবর্তন আনতে হবে এবং সকল চাকুরিতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সাম্যমূলক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে ও তথ্য-প্রযুক্তিতে সমাজের সর্বস্তরের তারুণ্যকে অভিগম্যতা প্রদান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি ইন্টারনেট সহজলভ্য করা, ডিজিটাল ডিভাইস, ডেটাসহ তথ্যপ্রযুক্তিকে বৈষম্যমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, নীতিমালা প্রণয়নসহ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।