আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় দেশি গরুর চাহিদা বেশি তবে সংকট নেই
॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানির সময় যত ঘনিয়ে আসছে উপজেলার পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে। এদিকে উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩শত ৮৮টি গবাদি পশু।
এদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পরও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তাছাড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় মাটিরাঙ্গার পশু। মাটিরাঙ্গা গরু বাজার গুওে দেখা যায়, বড় জাতের গরুগুলো নির্দিষ্ট খুটিতে বাঁধা রয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে পানি দিয়ে বার বার গা ভিজিয়ে দেয়া হচ্ছে। দর্শনার্থীর অনেকে ছবি তুলে তৃপ্তি মিটাচ্ছেন। এছাড়াও মাঝারী ও ছোট আকারের অনেক গরু বাজারে আনেন খামারি ও গ্রহস্থরা। অত্র উপজেলায় ছোট বড় বেশ কয়েকটা খামার রয়েছে। অন্যগুলো গৃহস্থের। এদের দাম আকার অনুযায়ী ৫লাখ থেকে শুরু হয়ে মাঝারী আকারের গরুর দাম হাকা হচ্ছে ৯০ থেকে দেড় লাখ টাকা।
অপর দিকে বড় বড় ছাগলও বাজাওে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। অনেকে খাসি ছাগল দিয়েও কোরবানি দিয়ে থাকেন। বড় আকারের এক একটি খাসি ছাগল ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাকাচ্ছেন মালিকরা। মাটিরাঙ্গা সদর সহ অত্র উপজেলার বেলছড়ি, গোমতী, শান্তিপুর, রামশিরা, বড়নাল, তবলছড়ি,ও তাইন্দং বাজারে নিজেদের সুবিধাজনক দিনে কোরবানির পশুর হাট বসে। স্থানীয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু ব্যাবসায়ী ও কোরবানিদাতা গণ এসব বাজার থেকে গরু, ছাগল ক্রয় করে থাকেন। দেশী গরুর কদও বেশী হওয়ায় এসব স্থান থেকে পশু ক্রয় বিক্রয়ে আগ্রহ বেশী। তবে কোরবানির ঠিক কাছাকাছি সময়ে দাম থাকে চড়া, আর তখন পশুর সংকটও দেখা দেয়। অবশ্য গত বছরের তুলনায় এ বছরের কোরবানির চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনবল কম থাকার দরুন অত্র উপজেলার ৮টি বাজারে ৪টি মেডিকেল টিম কাজ করবে, তারা সুস্থ্য ও অসুস্থ পশু চিহ্নিতকরনের কাজে নিয়োজিত থাকবে। এবার প্রায় দুই হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ বছর কোরবানিদাতার সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমবেশি হতে পারে বলে কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি বিধায় গরু পালনের খরচ বেড়ে গেছে জানিয়ে স্থানীয় গরু ব্যাবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর যথেষ্ট পরিমান গরু ছাগলের সমাগম হলেও এবার পশুর দাম বেশী উপযুক্ত দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
গ্রামের পশুগুলো শহওে বেশ জনপ্রিয় মন্তব্য করে চট্রগ্রামের গরু ব্যাবসায়ী জামাল জানান, উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে গরু ক্রয় করে থাকি। গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি বলে মনে হলেও আমরা নিজেদের চাহিদা মোতাবেক ক্রয় করবো। বাজারে গরু ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই আছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা সিএনজি ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুস সোবহান বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কোরবানি দিতে গরু কিনছি দাম বড় কথা নয়। তবে এই বাজারে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই আছে বলে তিনি মনে করেন। মাটিরাঙ্গা বাজারের ইজারাদার আলাউদ্দিন লিটন বলেন, মাটিরাঙ্গায় কোরবানির পশু মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। আমরা সরকারি শিডিউল থেকে কম টাকা হাসিল নিচ্চি। তাছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাটিরাঙ্গা থানার পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। একই সাথে জাল টাকা শনাক্ত করতে ব্যাংক কর্মকর্তারা নিয়োজিত রয়েছেনে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার পশু দিয়েই নিজেদেও কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুমেন চাকমা জানান, কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে উপজেলায় প্রায়৪৩৮৮ টি পশু মজুদ রয়েছে। পশুর হাটে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মেডিক্যাল টিম ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন।
মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃঞ্চ ধর জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে কোরবানির হাটে ক্রেতা বিক্রেতা নির্বিঘ্নে ক্রয় বিক্রয় করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী জানান, কোরবানির হাটে কোনোভাবেই সরকার নির্ধারিত রেটের চেয়ে অতিরিক্ত হারে খাজনা আদায় করা যাবে না। এ বিষয়ে প্রমাণসহ কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।