পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নিন্দা
বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মনগড়া, বাস্তব বিবর্জিত সংবাদ সম্মেলন
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
গত ২২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বুকে ম্রো আদিবাসীদের জায়গা দখল ও উচ্ছেদ করে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ ও পর্যটন স্থাপনা নিয়ে নিজের দায় এড়াতে “চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন হোটেল স্থাপনের বিষয়ে”বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা সংবাদ সম্মেল মনগড়া ও বাস্তব বিবর্জিত। এ ঘটনায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নিন্দা জানিয়েছে বলে উল্লেখ করে। বুধবার (২৫নভেম্বর) ছাত্র পরিদের দপ্তর সম্পাদক মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা এর প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার উক্ত বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে সরাসরি প্রতারণা করেছে। কেননা কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে আলাপ-আলোচনাক্রমে উক্ত তর্কিত জমিটি পরিষদের দখলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে কাজে না লাগিয়ে পরিষদ হীনস্বার্থে ‘পর্যটনের জন্য’ সেনাবাহিনীর নিকট ৪০ বছরের মেয়াদে লীজ দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জমিটি দখলে নেয়ার পর পার্বত্য জেলা পরিষদ কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে, আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য ক্ষতিকারক, আদিবাসী জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও সংস্কৃতির জন্য ধ্বংসাত্মক, জুম্ম জনগণের প্রথাগত ভূমি অধিকার পরিপন্থী তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও চুক্তি মোতাবেক প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পর্যটনের জন্য লীজ দেয়া নি:সন্দেহে ম্র্রো জনগোষ্ঠীর সাথে প্রতারণার সামিল। আদিবাসী ম্র্রো জনগোষ্ঠী, জুম্ম জনগণ ও দেশের মানবতাবাদী ব্যক্তিবর্গসহ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তা কখনোই মেনে নিতে পারে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হর্টিকালচারের নামে ২০ একর লীজ নেয়া জমি কোন সামরিক বাহিনী কিংবা কর্পোরেট কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার আগে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ স্থানীয় ম্রো আদিবাসীদের সাথে আলোচনা করেনি। পার্বত্য জেলা পরিষদ, সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপের মধ্যেকার ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরের একটি খবর প্রকাশিত হয়
(কক্সবাজারকণ্ঠ, ৮ জুন ২০১৫)। সেসময় এর বিরুদ্ধে স্থানীয় ম্রো আদিবাসীরা পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ না করার দাবি জানালেও তাদের সে দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু ২২ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিকদার গ্রুপের সাথে চুক্তিপত্র করার কথাটি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা’র এই বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে জনস্বার্থ পরিপন্থী এবং স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও জীবনাচার বিরোধী। কেননা উক্ত লীজকৃত নাইতং পাহাড়সহ চিম্বুক ভ্যালী ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রথাগত জুম ভূমি এবং মৌজা ভূমি। এসব ভূমি ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। তাই তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে বাস্তব-বিবর্জিত ও সত্যের অপলাপ। ১৯৯০-এর দশকে সুয়ালকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের নামে সাড়ে ১১ হাজার একর এবং রুমায় সেনানিবাস সম্প্রসারণের নামে ৯ হাজার একর জায়গা জোরর্পূবক অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যে জমিগুলো ছিল ম্রোদের, যেখান থেকে ইতিমধ্যেই শত শত ম্রো পরিবার উচ্ছেদ হয়ে পড়েছিল বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তাই বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার মনগড়া ও বাস্তব বির্বজিত সংবাদ সম্মেলন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তীব্র নিন্দা জানান। একই সাথে চিম্বুকের বুকে ম্রো আদিবাসীদের জায়গা দখল করে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের লিজ বাতিল ও সকল প্রকার পর্যটন স্থাপনা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি-