॥ মোঃ কবির হোসেন, কাপ্তাই ॥
রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার প্রশান্তি পার্ক সংলগ্ন বালুচর এলাকার এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোঃ সোহেল রানা ওরফে সোহেল গুপ্তধন স্বর্ণালংকারের লোভ দেখিয়ে সাধারণ লোকজনের নিকট হতে ২৪ লাখ ২৫হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা বলেন, এই প্রতারক সোহেল রানা প্রথমে কারও সাথে পরিচয় হলে যদি মুসলিম হয় তাহলে মুসলামনের ধর্মীয় বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলে। আর হিন্দু হলে হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে কথা বলে মানুষকে ফাঁদে ফেলতো। সাধারণ লোকজনকে নানান প্রলোভন দেখায়। পরে গুপ্তধন সোনা গয়নার লোভে ফেলে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। এমনই ঘটনা ঘটেছে কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকার জাহানারা বেগমের সাথে।
ভুক্তভোগি জাহানারা বেগম জানান, সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সাথে ৮বছর পূর্বে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাকে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উপদেশ মূলক কথাবার্তা বলে তার সাথে মায়ের মত সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রায় সময় তার বাড়িতে আসা যাওয়া করে তারাও তার বাড়িতে বেড়াতে যেত। এক পর্যায়ে আমাকে ৭টি গুপ্তধন স্বর্ণের হাড়ি দেবে বলে বিশ্বাস স্থাপন করে। এভাবে ধাপে-ধাপে তার কাছ থেকে ৮লক্ষ টাকা গ্রহন করে গুপ্তধন দিব দিচ্ছি কালক্ষেপন করে। প্রতারক সোহেল রানান নানান প্রলোভন দেখিয়ে নতুন বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী তরুন দে ৬ লাখ টাকা, শয়ন দাশ থেকে ৫লাখ, রাজু মিয়া ৩ লাখ, কালাছোগা তনচংগ্যার নিকট হতে ২লাখ ২৫হাজার এভাবে আরো কয়েকজন থেকে মিলে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী তরুণ কুমার দে বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু টাকা চুরি হয়ে গেছে তখন তিনি সোহেলের কাছে যান। সোহেল তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেন। টাকা নিয়ে বলে ৩-৫ দিনের মধ্যে টাকা আপনার ঘরে এসে দিয়ে যাবে। ৫দিন পরে সোহেলকে ফোন করলে সোহেল বলে তার ঘরে যেতে। পরে তার সোহেলের ঘরে যাই। তিনি তাকে বলেন ভাই এই সামান্য টাকার জন্য এগুলো করে লাভ কি। তোমার ভাগ্যে অনেক কিছু আছে। তোমার ছোট মেয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আছে তুমি আসার সময় ১০টা বস্তা নিয়ে আসবে। পরে কোটি টাকা আনার জন্য ১০টি বস্তাও নিয়ে যাই। এভাবে জানতে পারি সোহেল রানা এভাবে তন্দ্র মন্ত্র করে বহু মানুষকে সে ঠকিয়ে যাচ্ছে।
অপর দিকে মোঃ রাজু বলেন, তিনি একজন গাড়ি চালাক। এই সূত্র ধরে সোহেল এর সাথে পরিচয়। এক দিন সোহেল তাকেও বলে ভাই আমি তো আল্লাহর দান স্বর্ণের কলসি পেয়েছি। তবে এই গায়েবি ধন স্বর্ণের কলসি নিতে হলে ২জন মুসলিম ও ২জন হিন্দু লোক মিলে টাকা পয়সা খরচ করে এ স্বর্ণের কলসি নিতে হবে। এভাবে সে তার নাম দিয়ে ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট ও ভুয়া ক্রেডিট কার্ড বানিয়েছে বলে দেখায়। ওই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নাকি ওই স্বর্ণ বিক্রির টাকা তুলতে হবে। এছাড়া সে আমার কাছ থেকে ২লক্ষ টাকার চেক নিয়েছে। কিন্তু শেষে বুঝতে পারি সে একজন প্রতারক আমি এই প্রতারকের সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্থানীয়রা বলেন, সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম তেমন সুবিধা জনক লোক নয়। সমাজের কারও সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নাই। তার প্রয়াত বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেও হুমকি ধামকি দেয়। তারা স্বামী ও স্ত্রী মিলে এলাকায় গুপ্তধন, স্বর্ণালংকার পাইয়ে দেবে বলে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে জাহানারা বেগম এ প্রতারকের সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক বিচার চেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থানা একটি অভিযোগ করে।
এদিকে রবিবার (৭এপ্রিল) যোগাযোগ করা হলে, সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, রাজু, শয়ন, জাহানারা ও তরুণ কুমার দে আমাদের বিরুদ্ধে যে সকল কথাবার্তা বলছে তার কোন সত্যতা ও প্রমান নাই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। তারা আমার পরিবারবর্গের মানসম্মান হানি করতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে কাপ্তাই থানার এসআই মোঃ হাবিবুর রহমান (তদন্ত কর্মকর্তা) জানান, সোহেলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। প্রমান পাওয়া গেলে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।