বাসায় পিড়িতে বসে লেখালেখিই করতেন
লেখক, সুরকার, গীতিকার সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন
॥ দেবদত্ত মুৎসুদ্দী গোপাল ॥
প্রয়াত সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের নয় মানুষের সার্বিক জীবনের এবং সমাজের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। চাকুরি জীবনে অফিস ছুটির পর বাসার পিড়িতে বসে শুধু লেখালেখিতেই ব্যস্ত ছিলেন। জীবনের শেষ অবধি তিনি মানব সমাজের উন্নয়নেই কাজ করে গেছেন। সোমবার (১এপ্রিল) বিকালে বরেণ্য লেখক, সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এর ৮৬তম জন্ম বার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন ইনষ্টিটিউট এর পরিচালক রুনেল চাকমা। এতে অতিথি বক্তা ছিলেন, সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, বিশিষ্ট শিক্ষিকা অঞ্জুলিকা খীসা, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, প্রকৌশলী জীবন রোয়াজা, ও সঙ্গীত শিল্পি মনোজ বাহাদুর প্রমুখ।
সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এর ৮৬তম জন্ম বার্ষিকী পালনে বক্তরা বলেন, তাঁকে চিনতে আমাদের বর্তমান সমাজের শিল্পীরা অনেক দেরী করেছেন। অথচ তিনি একাধারে লেখক, সুরকার, গীতিকার এবং শিল্পীও। সমাজের উন্নয়নে তাঁর অবদান ছিল বলেই আজকে অনাড়ম্বরভাবে জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। তিনি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কামাকুটছড়া ত্রিপুরা গ্রামে ১এপ্রিল ১৯৩৮ সালে জন্ম গ্রহন করেন। রাতে বাঘের ভয়ে জীবন যায় যায় অবস্থা ছিল সেখানেই দিন কাটালেও ঠিকই সব ভয়কে জয় করে তিনি সমাজে আলো ছড়িয়েছেন।
বক্তারা বলেন, সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সঙ্গীতাঙ্গনেও আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছেন। সরকারি চাকুরি জীবনে যখন যেখানে ছিলেন সমাজের জন্যই বেশী সময় দিয়েছেন। রাঙ্গামাটি শহরের গর্জনতলী গ্রামে বাড়িঘর করে একসময়ে এ গ্রামকে আলোকিত করেছেন। আজকের গর্জনতলী গ্রামেরও অনেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুনাম রেখে যাচ্ছেন। তিনি গান, বই লিখে সমাজের অন্ধকার দুর করতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
বক্তারা আরো বলেন, সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে বহু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। যারা এসব করিয়েছেন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ নন। তাঁকে চিনত এখানকার সাংস্কৃতিক মনা মানুষগুলো। আজকে এই গুণী ব্যক্তির জন্ম দিন পালন অনুষ্ঠানে আরো অনেক গুণীজনের উপস্থিতির দরকার ছিল। তাঁর গুণের বিষয়গুলো অনেক। সমাজের তাঁর মাতো আরো অনেক গুণীজন রয়েছেন তাঁদেরও সম্মান জানানো দরকার।
পরে সভাপতির বক্তব্যে, ইনষ্টিটিউট এর পরিচালক রুনেল চাকমা বলেন, সরকারি বরাদ্দ সংকুলান থাকায় এ ধরনের অনুষ্ঠান করা সম্বব হয় না। তবে প্রতিবছর এ ধরনের গুণীজনদের সম্মানে সাদামাঠা করে অনুষ্ঠান পালন করা হয় ইনষ্টিটিউট এর পক্ষ থেকে।
এর আগে লেখক, সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এর ৮৬তম জন্ম বার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে বিকাল ৪ঘটিকায় শিশু শিল্পীদের নিয়ে চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। পরে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ সহ শিশু শিল্পীরা তাঁর জন্ম দিনের কেক কাটেন। সন্ধ্যায় প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।