॥ মোঃ সোহেল রানা, দীঘিনালা ॥
খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় তরুণ উদ্যেক্তা সজিব চাকমা কাঁচা মাছ থেকে শুটকি তৈরি করে মাসে আয় করছে ৮০হাজার টাকা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা বাবুছড়া ইউনিয়নে সজিব চাকমা গড়ে তুলেছে শুটকি তৈরির কারখানা। প্রায় এক একর জমি লিজ নিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে কাঁচা মাছ নিয়ে এসে সম্পূর্ন প্রাকৃতিক ভাবে রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করছে। স্থানীয় ভাবে ও অনলাইনে বিক্রি করছে এসব শুটকি। প্রতিদিন স্থানীয় লোকজন সজিবে শুটকি তৈরি করা প্রক্রিয়া দেখতে আসে এবং শুটকি কিনে নিয়ে যায়। শুটকির মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছুরি মাছ, শাপলা পাতা মাছ ও হাঙ্গর মাছ এছাড়াও আরো না ধরনে মাছের শুকটি রয়েছে। ছুরি মাছের শুটকি ৬শত-১৪শত টাকা কেজি, শাপলা পাতা মাছের শুটকি কেজি ৮শত-১৪শত টাকা ও হাঙ্গার মাছের শুটকি কেজি ৪শত-১৮শত টাকা বিক্রিয় করা হচ্ছে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুটকি বিভিন্ন দামে বিক্রয় করা হচ্ছে।
সজিব চাকমা বলেন, আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর টাকা পয়সার সমস্যার কারনে পড়ালেখা করতে পারি নাই। ভাড়ায় মোটরসাইকলে চালাতাম। আমি প্রথমে স্থানীয় ভাবে বিষ ও কেমিক্যাল মুক্ত সিদল(নাপ্পি) তৈরি করে বিক্রি করি এতে অনেক সাড়া পেয়েছি। সিদল(নাপ্পি) শুধু স্থানীয় সম্প্রদায়ে লোকজন খায়। পাড়াহি ও বাঙ্গালিদের মাঝে শুটককি একটি জনপ্রিয় খাবার তাই আমি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সামুদ্রিক কাঁচা মাছ কিনে এনে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে প্রাকৃতিক ভাবে রৌদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করে বিক্রি করছি। স্থানীয় লোকজন এসে কিনে নিয়ে যায় এবং অনলাইনেও অর্ডার আসে এবং আমার মোবাইলেও ফোনে শুটককি জন্য কল দেয়। এখন পাইকারি ভাবে শুটকি বিক্রি করি নাই। গত মাসে প্রথম বারে বিক্রি করে প্রায় ৭০/৮০হাজার টাকা লাভ হয়েছে। সরকারি ভাবে সহযোগীতা পেলে আরো ভাল কিছু করতে পারব।
বাবুছড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রত্যন্ত এলাকায় সজিব চাকমা মত উদ্যোক্তা নিজের প্রচেষ্ঠায় সিদল(নাপ্পি) ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অর্গানিক ভবে শুটকি তৈরি করছে। সজিব চাকমা শুটকি তৈরিতে এলাকার ৮-১০জন বেকার‘র কর্মসংস্থান হয়েছে। স্থানীয় ভাবে সজিব চাকমা শুটকির চাহিদা বেশি থাকায় তার বাড়ি থেকে অনেকে এসে শুটকি নিয়ে যায়। আমি আশা করি তাকে দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার ছেলেরা নতুন নতুন কিছু নিয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
দীঘিনালা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর (নিরাপদ খাদ্য) তুজিম চাকমা বলেন, সজিব চাকমা সম্পূর্ন অর্গানিক ভাবে শুটকি তৈরি করছে। স্বাস্থ্য সম্মত কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছে না। তারপরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ এর জন্য তিন ধরনে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। কারণ সজিব চাকমা কাঁচা মাছগুলো কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসে সেখানে কোন ধরনে কেমিক্যাল মিশানো হয় কিনা পরীক্ষা করার জন্য।
দীঘিনালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অর্বনা চাকমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সম্প্রদায়ের মাঝে সামুদ্রিক মাছের শুটকি খুব জনপ্রিয় খাবার। সজিব চাকমা সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রকার কাচাঁ মাছ এনে প্রকৃতিকভাবে রৌদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করছে। সকল ধরনের পুষ্টির গুনগতমান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আড়তদার অথবা জেলেদের কাছে থেকে মাছ আনতে পারত তবে শুটকির স্বাদগুণ অনেক বৃদ্ধি পেত।