মরার ওপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা
লামায় এক কৃষিপণ্য হতে ৪ বার টোল আদায়, প্রতিকার চেয়েছে কৃষকরা
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
বান্দরবানের লামা উপজেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য, বিভিন্ন মৌসুমী ফলফলাদি, গরু-ছাগল ও রপ্তানিযোগ্য মালামাল অন্যত্র পরিবহনে একই পণ্য হতে তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ (আজিজনগর, ফাইতং, গজালিয়া) ও বান্দরবান জেলা পরিষদ ৪ বার টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব টোল আদায়কারী ইজারাদার সিন্ডিকেটভুক্ত দালাল চক্রের হাতে ব্যবসায়ী কৃষকদের প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও অশোভন আচরণের মুখোমুখি হতে হয় বলে জানিয়েছেন, লামার গজালিয়া হতে ছিউততলী হয়ে আজিজনগর সড়কের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, কৃষিপণ্য যে ইউনিয়নে উৎপাদিত হবে সে ইউনিয়ন পরিষদ টোল নিবেন। পরিবহনের ক্ষেত্রে অন্য ইউনিয়নের উপরে দিয়ে গেলে তাদের পূর্বের দেয়া টোল আদায়ের রশিদ দেখালে তারা আর টোল নেয়ার কথা না। যদি নিয়ে থাকে সেটা অনিয়ম। একটি পণ্য হতে এক ইউনিয়ন পরিষদ ১ বার ও জেলা পরিষদ ১ বার টোল আদায় করার কথা।
গজালিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কৃষক ক্যাচিমং মার্মা, রেমং মেম্বার পাড়ার কৃষক হ্লায়নু মার্মা, ৮ মাইল মুসলিম পাড়ার কৃষক মোঃ হানিফ ও আজিজনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ার কৃষক রিহ্লা মার্মা বলেন, একটি পণ্য হতে ৩ বার ইউনিয়ন পরিষদ ও ১ বার জেলা পরিষদে টোল দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে ব্যবসায়ী না আসলে কেউ চাষাবাদ করবে না। চাষাবাদ না করলে আমরা কিভাবে জীবন জীবিকা চালাবো ?
তারা আরো জানায়, গজালিয়া ও ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের টোল আদায় করে ছিয়ততলী বাজারে। গজালিয়া ইউনিয়নের টোল আদায় করে শাহজাহান পিসি ও ফাইতং ইউনিয়নের টোল আদায় করে ইজারাদার মোঃ এমলাক হোসেন। আজিজনগর ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদের টোল আদায় করা হয় আজিজনগর চাম্বী মফিজ বাজারের ইস্টিল ব্রিজের পাশে। আজিজনগর পরিষদের টোল আদায় করে মোঃ ওসমান ও জেলা পরিষদের টোল আদায় করে আবুল হোসেন বদন। একই পণ্য থেকে ৪ সংস্থার টোল আদায় বৈশ্বিক মহামারি করোনা কালে যখন পণ্যসামগ্রী বিপণনে ব্যবসায়ীরা প্রচন্ড সমস্যায় পড়েছেন তখন অতিরিক্ত টোল আদায় তাঁদের কাছে যেন,‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা।
কৃষকরা দুঃখ করে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে বললে ইজারাদার ও তাদের দায়িত্বরত লোকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও অশোভন আচরণ করে। ব্যবসায়ীরা অতীষ্ট হয়ে পড়েছেন। বাইরের ব্যবসায়ীরা এখন পার্বত্য এলাকায় আসতেই চান না। বিভিন্ন সময়ে সিভিল প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। একাধিকবার টোল আদায়ের এই সমস্যা লামার অন্যান্য সড়কেও রয়েছে বলে জানা গেছে।
লামার গজালিয়া হতে ছিউততলী হয়ে আজিজনগর সড়কের কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী মোঃ বেলাল, মোঃ হেলাল, রেজাউল করিম বলেন, আমরা এক আটি পানের লতা ২৫ টাকা, প্রতি ছড়া কলা ২টাকা, প্রতি বস্তা (পেঁপে, লেবু, বেগুন, ঝিংগা, ঢেঁড়স, পটল, মূলা, বরবটি, চিচিংগা, মরিচ, কমলা) কৃষিপণ্য ১০ টাকা, পান ১ টুরি (৩০ বিরা) ৫ টাকা, প্রতিটি ছাগল ২০ টাকা ও গরু ৫০ টাকা করে ৪টি সংস্থাকে চারবার টোল দিতে হয়। এছাড়া প্রতি বস্তা ধান থেকে ১০ টাকা টোল দিতে হয়। ইজারাদার ও তাদের লোকজন আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
ছিয়ততলী বাজারে ফাইতং ইউনিয়নের টোল আদায় করেন মোঃ এমলাক হোসেন। তিনি বলেন, ইউনিয়নের উপর দিয়ে গেলেই টোল দিতে হবে। গজালিয়া ইউনিয়নের টোল আদায়কারী শাহজাহান পিসি বলেন, টোল নিয়ে রশিদ দেয়া হয়। এদিকে আজিজনগর ইউনিয়নে টোল নিয়ে ব্যবসায়ীদের রশিদ না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। আজিজনগর বাজারে জেলা পরিষদের টোল আদায় করে আবুল হোসেন বদন। তিনি বলেন, এইখান দিলে গেলেই টোল দিতে হবে।
গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, একাধিকবার টোল আদায়ের বিষয়টি পরিষদকে কেউ বলেনি। এক ইউনিয়নের পরিষদ টোল আদায়ের পরে যে রশিদ দেয়া হয় তা অন্য ইউনিয়নে দেখালে টোল নেয়ার কথা না। ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, আগে থেকে নেয়া হচ্ছে তাই এখনো নেয়া হয়। আগামী মাসিক মিটিংয়ে (উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা) সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, তিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।