রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে নয়-ছয়’র অভিযোগ
॥ তুফান চাকমা, নানিয়ারচর ॥
রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অসহায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের ঘর তৈরীতে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভুমিহীন ও দরিদ্ররা যে ঘর পাবেন, তা দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা-দূর্নীতির কারণে প্রশ্ন তুলছে অসহায়রা। তাই দায়িত্বপ্রাপ্তদের দোষারোপও করছেন তারা। ভুক্তভোগীরা এর তদন্তও দাবি করেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, নানিয়ারচর সদর উপজেলার ২নং ইউনিয়নের বগাছড়ি এলাকায় রাস্তার পাশেই ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কোন তত্ত্বাবধান ছাড়াই চলছে নির্মান কাজ। প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পথে। এমন অবস্থায় নির্মাণকাজে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ করছে সুবিধাভোগীরা। এই তথ্য ধরে অনুসন্ধানকালে অভিযোগের সত্যতা কিছু বেরিয়ে আসছে। ৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়নে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানের ১ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা জানান, তার জন্য নির্মাণাধীন ঘরে দুটি রড দিয়ে লিংটন ঢালাই দেওয়া হয়েছে। কোথাও তিনটি রড এবং কিছু অংশে রড ছাড়াই ঢালাই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়াও রয়েছে সুবিধাভোগীর পরিবার দিয়ে গাছ ক্রয়, শ্রমিক জোগান এবং পানি সংগ্রহের অভিযোগ। প্রকল্পের নকশায় দেখা গেছে, প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় যে টাকা ধরা হয়েছে তার থেকেও কম মূল্যে এবং অধিক লাভের আশায় ঘর নির্মাণের প্রতিটি ধাপে নয় ছয় করা হচ্ছে। রড, বালি ও সিমেন্ট কম দেওয়ায় হয়েছে বলে অনেকে জানান।
অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র নিয়ে প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন মিস্ত্রির সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য তৈরি করা এই প্রকল্পটি খুবই স্পর্শকাতর। কারণ প্রধানমš গরিবের মূখে হাসি ফোটাতে ¿ীর ইচ্ছায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কারো কোনো মতামত নেয়নি বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ঘর নির্মাণের সব চেয়ে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে কোনো মজবুত ভিত্তি নেই। এতে অল্পমাত্রার ভূমিকম্প কিংবা টানা বৃষ্টিতেও বিপদের শঙ্কা রয়েছে। দেওয়াল ধরে রাখার জন্য লিংটেল অপরিহার্য। অথচ ঘরের জানালার ওপর যে ছোট লিংটেল দেওয়া হয়েছে, তা-ও রড কম দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন গরিবের জন্য কান্দে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের মন পাথরের মতো শক্ত। তাই তারা এমন খারাপ কাজ করতে পারছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এই স্বপ্নপূরণের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু এ কাজের বহু স্থানেও নানান অভিযাগ উঠে আসে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের এই প্রকল্পের কাজের যা মান তা মেনে নিতে পারছেন না সুশীল সমাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নির্মাণ শ্রমিক জানান, নির্মাণ সামগ্রী কম দিলে আমরা কিভাবে কাজ করব। আমাদের কে যে সামগ্রী দিয়েছে তা দিয়েই কাজ করছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী শাহা বলেন, প্রাক্কলনে ৮এম এম রড ধরা আছে। অথচ আমি ১০এম এম রড দিয়ে কাজ করছি। ঘর গুলো ঝুঁকিপূর্ণ এক্ষেত্রে কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়, কোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও নেই।
এবিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া বলেন, ঘর নির্মাণে দূর্নীতির সঠিক তথ্য পেলে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায়কে ছাড় দেয়া হবে না।