[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সদস্য আলীম বহিষ্কারখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নানান আয়োজনে নববর্ষ উদযাপনবাঘাইছড়িতে উপজেলা প্রশাসনের নববর্ষ উদযাপনরাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিএনপির শোভাযাত্রামাটিরাঙ্গায় বর্ণিল আয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ শোভাযাত্রাখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ করেছে বিএনপিবান্দরবানের থানচিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে সাংগ্রাই উৎসবখাগড়াছড়ির রামগড়ে গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্থিনে গণহত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটিতে ওয়ার্ল্ড পীস্’র মানববন্ধনঢাকা রমনা লেকে ফুল ভাসিয়ে ফুলবিঝু উৎসব পালন করলেন পার্বত্য উপদেষ্টা
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

“মুক্তিযুদ্ধে অবিভক্ত বৃহত্তর জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম-(০৩)”

১৪৭

॥ মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ) ॥

১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের পর বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হলেন, হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে তৎকালীন ভারতবর্ষ বিভক্ত হলে পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি অসম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি লগ্ন থেকেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি বাঙালী জাতির উপর নানাভাবে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬ শতাংশ জনগণ বাঙালী হলেও রাষ্ট্রের রাজধানী থেকে শুরু করে সামরিক-বেসামরিক, শিল্প ও কল-কারখানা, সেবাখাতসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র স্থাপন করা হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সেনা বাহিনীতে প্রায় চার লক্ষাধিক সৈন্য ছিল। তবে এ সেনাবাহিনীতে বাঙালীর সংখ্যা ছিল বিশ হাজারের সামন্য কিছু বেশী। নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীতে ও বাঙালীর সংখ্যা ছিল অতি সামান্য। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মাত্র ০১ জন বাঙালী ব্রিগেডিয়ার, একজন বাঙালী কর্নেল ও হাতে গোনা এমন কয়েকজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। উচ্চ পদের সব অফিসারই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানী পাঞ্জাবী। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানী অসংখ্য মেজর ও ক্যাপ্টেন ছিল। কিন্তু এই সেনাবাহিনীর বিশাল ব্যয়ভার বহন করতে হতো, পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে। পাকিস্তানের বার্ষিক বাজেটের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই ব্যয় করা হতো সামরিক খাতে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে তাঁদের পুঁজির এবং ব্যয়ের বিরাট উৎস হিসাবে চিহ্নিত করে নিষ্ঠুর, অমানবিকভাবে শোষন করতে থাকে। দিনের পর দিন পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তর করে সেখানেই ধন-সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে তোলা হয়। শুধু তাই নয়, তাঁরা সুচনাতেই আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা কেঁড়ে নিতে চেয়েছিল। ফলতঃ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে মুক্তির আখাঙ্কায় উজ্জীবিত করে, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন,১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ,১৯৫৬ সালে সংবিধান প্রনয়নের আন্দোলন,১৯৫৮ সালে মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন,১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে বাঙালীর মুক্তির সনদ ০৬ দফা, ১৯৬৯ সালে ১১ দফা রক্তঝরা গণ-অভ্যত্থান এবং ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন ইত্যাদি জাতিকে ১৯৭১ এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে অধিক মাত্রায় ধাবিত করেছিল। অতঃপর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীজাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু সংখ্যক মীর জাফর, অ-মানুষ ছাড়া বলতে গেলে সর্বস্থরের মানুষই কোন না কোনভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও লাল সবুজের পতাকা এবং রক্তভেজা মানচিত্র এনে দিয়েছেন। সারাদেশের মত মহান মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের বীর সেনানীদেরও রয়েছে জানা-অজানা অজশ্র গৌরবোজ্জল ইতিহাস। যে গৌরভ গাঁথাগুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমাদের অনুসন্ধানে এখন বেরিয়ে এসেছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পশ্চিম কাঁঠালতলী গ্রামের স্বীকৃতিহীন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার করুন কাহিনী। যার নাম স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া, পিতা- মৃত বিশ্ব নাথ বড়ুয়া, মাতা- মৃত সুপ্রভা বড়ুয়া। পাহাড়ের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার পূর্বপুরুষদের বসতবাড়ীর এবং মুক্তিযুদ্ধ কালীন ঠিকানা গ্রাম: মহামুনি পাহাড়তলী, ডাক+উপজেলা: রাউজান, জেলা: চট্টগ্রাম। তিনি তৎকালীন অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গামাটি মহকুমার বরকল থানায় ম্যালেরিয়া অধিদপ্তরের সুপার ভাইজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালো রাত্রে দখলদার হিংস্র-বর্বর পাক-বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তাঁরা। সম্রমহারা মা-বোনদের করুন আর্তনাদে যখন বাংলার আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে গিয়েছিল, তখন ২২ বছরের তরুন মুক্তিযোদ্ধা স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়ার দেহ-মন এ-বাংলার রাখাল রাজার “মুক্তির মহাকাব্যের” আহ্বানে জেগে উঠে। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার। কবি’র কবিতার এই চিরন্তন বানীর মতো সময়ের প্রয়োজনে তিনিও প্রস্তুত হলেন। ১নং সেক্টরের আওতাধীন বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি এই পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে এ অঞ্চলের মানুষগুলোও সে সময় স্বাধীনতার সু-মহান চেতনায় উজ্জিবিত হয়েছিল। সে সময় পাহাড়ের এক তরুন বীর সেনানী স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়’ার রক্তে ও স্বাধীনতার চেতনার অনল জ্বলে উঠে। পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন, ২৩ বছর ব্যাপী বাংলার মানুষের উপর নির্মম, নিষ্ঠুর, অমানবিক নির্যাতন আর শোষণের বিরুদ্ধে এবার তিনি যুদ্ধে যাবেন। পাকিস্তান সরকারের চাকরী ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য কিছু সংখ্যক মুক্তিবাহিনীর সাথে তিনি বরকল থেকে প্রথমে টেগামুখ পৌঁছান। অতঃপর টেগামুখ পাহাড় পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল তাঁরা দেমাগ্রী যুব ক্যাম্পে পৌঁছালেন। তৎকালীন সময়ে আসাম রাজ্যের মিজো জেলার দেমাগ্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী ডেপুটি কমিশনার ছিলেন সি.নাগ। এই সহকারী ডেপুটি কমিশনারের কাছেই অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাসহ স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া রিপোর্ট করেন। এ ভয়ানক কঠিন সময়ে দুর্গম পথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য বরকল থেকে যারা ভারতে গিয়েছিলেন। তারমধ্যে বরকল থানার তৎকালীন সার্কেল অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তা, ফরেষ্ট রেঞ্জার, পুলিশ কনেস্টবল জবরদস্ত খাঁন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনীল বড়ুয়াসহ আরও অনেকে। পাহাড়ের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়ার ভারতের রেজিঃ নং- ১৫০৮৫০। তাঁর সঙ্গীদের মতো তিনিও সশস্ত্র ট্রেনিং গ্রহণে সংকল্প করলেন এবং এ কথা কর্তৃপক্ষকেও জানালেন। কিন্তু না, উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ তাঁকে বুঝালেন যে, একজন সশস্ত্র মুক্তিসেনার রনাঙ্গনের সংগ্রামের চেয়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন স্বাস্থ্য কর্মীর সংগ্রামকে ছোট করে দেখার কিছুই নেই। জাতির কাছে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাই গৌরবের এবং বিনম্র শ্রদ্ধার।

ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশী শরনার্থী ও যুদ্ধাহত সূর্য্য সন্তানদের সু-চিকিৎসা যারা নিশ্চিত করে, তাঁরাও তো বাংলার অহংকার-বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারপর- অদম্য এই বীর যোদ্ধা স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশী শরনার্থী ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য কর্মী হিসাবে আত্ম নিয়োগ করলেন। তিনি দেমাগ্রী ইয়থ ট্রানজিট ক্যাম্প ও সহকারী ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশক্রমে দেমাগ্রী চিকিৎসা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী সার্জন ড.কে.এন শর্মার অধীনে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের চিকিৎসা ক্যাম্পে দায়িত্বরত অবস্থায় দীঘিনালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হারুন অর রশিদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলন বড়ুয়া’র সাথে প্রায় সময় তাঁর দেখা স্বাক্ষাত এবং কথা হতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলায় বঙ্গবন্ধু সরকারের নির্দেশনায় পুনঃরায় তৎকালীন রাঙ্গামাটি মহকুমার ম্যালেরিয়া অধিদপ্তরে পূর্বের কর্মস্থলে যোগদান করেন। অতঃপর বঙ্গবন্ধু সরকারের বিশেষ নির্দেশনা মোতাবেক, তিনি সহ সরকারি চাকরীজীবীদের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের সকলেই যুদ্ধকালীন ০৯ মাসের বেতন গ্রহণ করেন। তারপর এক সময় এ বীরযোদ্ধা রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বদলী হন। অবশেষে বহু বছর যাবৎ সরকারি চাকরীতে নিযুক্ত থাকার পর, দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০০২ সালে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। দুঃখজনক হলেও নির্মম সত্যি যে, পাহাড়ের স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কোন সনদ এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা কোন দিনও পাননি। তবুও একদিন তিনি উল্লাসিত হলেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই পূর্বক “শেখ হাসিনা সরকারের স্বীকৃত দেওয়ার ঘোষনায়” তাঁর ম্লান মুখে হাঁসি ফুঁটে উঠে। তিনি আশার আলোয় বুক বেঁধেছিলেন।

অতঃপর ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী (যাচাই-বাছাই পূর্বক) মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার একবুক আশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছিলেন- অবহেলিত এ বীর সেনানী। তারপর —– দিন যায় —– রাত যায়, এক সময় আশায়-আশায় জীবনের শেষ দিনটিও অতিবাহিত হয়ে যায়, অতঃপর —– ২০১৮ সালের ২৬ মে তাঁর জীবন প্রদীপও নিভে যায়। তাঁর অতৃপ্ত বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই-বিনম্র শ্রদ্ধা। তিনি যেন নির্বান লাভ করেন- এ কামনাই করি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধ সংঘটিত করেছেন, প্রশাসনিক ও কুটনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, তাঁরা সুচনাতেই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বাংলার মানুষের কাছে সম্মানীত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। ১৯৭১ সালে রনাঙ্গনে যারা অস্ত্র হাতে সরাসরি পাক-বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছেন, কেবলমাত্র তাঁদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য করা হয় তা নয়। সেই সাথে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রাণ বিতরনসহ যারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ গ্রহণ করেছেন, যারা কলকাতায় স্থাপিত বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালক মন্ডলী, সাংবাদিক, ভাষ্যকার এবং সকল ধরণের শিল্পীদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে, নানা প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মাঝে ও হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হাজার রকম কর্ম ও কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ করেছেন। এ দেশের বীর সূর্য সন্তানদের অসীম ত্যাগের ও জীবনের বিনিময়ে বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন-মহান স্বাধীনতা। হাজার বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রকৃত বীর সেনানীদের খুঁজে বের করে স্বীকৃতিসহ তাদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করছে আওয়ামীলীগ সরকার। যা অন্য কোন সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং অদূর ভবিষ্যতে হবেও না। তবে পাহাড়ের একজন স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া’র যাচাই-বাছাই পূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেও যখন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি, তখন কষ্টে- বেদনায় বুকটা ভারী হয়ে যায়। তাঁর ছেলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া। এ সাংবাদিকের সাথে কথা বলার পর দূঃখ ভরাক্রান্ত ভারী বুকে তুষের অনল জ্বলে উঠে। কারণ খবর পেলাম, ১৯৭১-এর রনাঙ্গনের এ বীর সৈনিক আর এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে নেই। আবেদন করেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি-টুকুও দেখে যেতে পারলেন না তিনি। মরনোত্তর হলেও তাঁর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ বাংলায় যেন স্বীকৃতিহীন অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া আর খুঁজে না পাই- সেই আশাই করি। যার নেতৃত্বে- ভয়ানক এক কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জনের বিজয়ে, যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই সোনার বাংলার স্থপতি, স্বাধীনতার মহান-মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিকামী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ)

কবি, কলামিষ্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী