[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
খাগড়াছড়ির রামগড়ে বিএনপির উদ্যোগে পর্যটনের লেক পরিস্কারমাটিরাঙ্গায় বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধনবান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলাস্থ দেবতাখুম পযর্টন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণাদীঘিনালায় ইয়ুথ গ্রুপের অভিজ্ঞতা বিনিময় সভারাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের নামে অপপ্রচারে সচেতন মহলের ক্ষোভকর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রী কলেজে ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ছাত্রদলের বৃক্ষরোপন কর্মসূচী পালনঅবশেষে বাঘাইছড়ির বাঘাইহাট বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে, ২২ জুন বসছে হাটমাটিরাঙ্গায় বিজিবি জব্দ করলো প্রায় ১৬লক্ষ টাকার ভারতীয় শাড়িরামগড়ে ঈদের ছুটিতেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা অব্যাহত
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

সুকৌশলে অর্থ আয় করাই তাদের উদ্দেশ্যে

মানিকছড়িতে সক্রিয় পাহাড় কাটা ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্র

৫০

॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥

মানিকছড়ি উপজেলাধীন প্রত্যন্তঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় রাতের আধাঁরে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার কাজে জড়িত রয়েছেন একাধিক চক্র। তারা জমির মালিককে পুকুর কেটে দেয়ার কথা বলে কিংবা ঘরের জায়গা করে দেয়াসহ নানা প্রলভন দেখিয়ে রাতারাতি লাখ লাখ টাকার মাটি কেনাবেচার কাজে লিপ্ত রয়েছেন। সেই সাথে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবাধে মেশিন দিয়ে চলছে অবৈধ উত্তোলনের মহোৎসব। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে নেই তাদের কর্মতৎপরতা। অভিযানের পর তারা যেন আরো তৎপর হয়ে উঠে। আর এসব কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত থাকলেও তারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যায়।

সরেজমিনে বিভিন্ন প্রত্যন্ত জনপদ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়ের ডেপুয়াপাড়া, নামার তিনটহরী, মধ্যম তিনটহরী, গোদারপাড়, হেডকোয়াটার ও বড়ডলু এলাকার পাহাড়ি জনপদে রাঁতের আধাঁরে যেমনি চলছে পাহাড় কাটা, তেমনি মেশিনের সাহায্যে চাষাবাদের জমি থেকে উত্তোলন চলছে।

এছাড়াও বাটনাতলী ইউনিয়ের বড়বিল, তুলাবিল, গোরখানা ও ছুদুরখীল এবং যোগ্যাছোলা ইউনিয়ের আসাদতলী, কালাপানি এলাকার হালদা খালের উপ-শাখার একাধিক স্থানে চলছে বালু উত্তোলন। এসব এলাকাতেও সক্রিয় রয়েছে পাহাড় কেটে জমি ভরাট কিংবা জমি থেকে মাটি বিক্রির কাজে জড়িত চক্র। তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি মাটি ও অবৈধ বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকায় আয় করছেন। প্রভাবশালী এসব সক্রিয় সদস্যদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। অথচ চোখের সামনে বালু ভর্তি বড় বড় ট্রাকের চাপে ভেঙ্গে যাচ্ছে সড়ক ও ছোটখাটো কালভার্ট! নষ্ট হচ্ছে সড়কপথ। অথচ এসব প্রত্যন্ত জনপদের সড়ক গুলো করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার। যা সরেজমিন না দেখলে বুঝার উপায় নেই। যার ফলে বহু সড়কে পথচারী ও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে এতো কিছুর পরেও এ ব্যাপারে স্থানীয়দের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাতের আধাঁরে পাহাড় কাটার ফলে যেমনি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে কমছে কৃষি জমির পরিমান ও হালদা খারের পানিও ঘোলাটে হতে শুরু করছে। বাধাগ্রহস্থ হচ্ছে হালদা নদীতে মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কার্যক্রম! পাহাড় ও বালু খেকোদের লাগাম টানা না গেলে অচিরেই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি জনপদের প্রাকৃতিক বৈচিত্র যেমনি ভাবে নষ্ট হবে, তেমনি ভাবে কমে যাবে ফসলি জমির পরিমান।

এ ব্যাপারে তিনটহরী এলাকার বালু ব্যাবসায়ী মো. হেলাল জানান, যেসকল ফসলি জমিতে সফলাদি ভালো হয় না, সে সকল জমির মালিকরা সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তাদের সেই চাষাবাদের জমিতে পুকুর করে দিতে গিয়ে সেখান থেকে উত্তোলিত বালু স্থানীয় কিংবা শহরের বিভিন্ন স্থানে চাহিদানুযায়ী বিক্রি করে উত্তোলনের খরচ বহণ করি। যাবতিয় খরচ শেষে যা থাকে তাই আমাদের লাভ।

অবৈধ বালু ও মাটি কাটার সাথে জড়িত তিনটহরী এলাকার আব্দুর রশিদ জানান, একদিকে পাহাড়ের পদদেশে স্থানীয় অনেকেই ঘর করতে চান। আইনী বাধ্য বাধকতা ও অর্থ সংকটের কারণে তারা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করতে পারেন না। অন্যদিকে দোকানের প্লট কিংবা নিচু জমি ভরাট করে ঘর করতে চান অনেকেই। যার ফলে কারো মাটি কাটতে হয় আবার কারো মাটির দরকার হয়। সেক্ষেত্রে যেখান থেকে মাটি কাটার দরকার হয়, সেখান থেকে মাটি এনে দোকানের প্লট ভরাট কিংবা নিচু জমি ভারাট করছি। এ ক্ষেত্রে পাহাড়ের মালিকরা কোনো টাকা না দিলেও যাদের দোকান ভরাট করছি তারা মাটি কিনে নিচ্ছে। সেই সাথে যারা নিচু জমি ভরাট করে ঘর করতে চায় তারাও টাকা দিচ্ছে। এই টাকা দিয়ে পরিবহণ খরচসহ যাবতিয় খরচ বহণ করি।

জমি ও খালের পাড় বিক্রি করা গোলখানা এলাকার আব্দুস ছালাম, মাহফুজ, তৌহিদ ও নাছির জানান, খালের পাড়ে পড়ে থাকা জমিন সামান্য অর্থে বিক্রি করে দিয়েছি। যেহেতু সেখানে চাষাবাদে ভালো ফসল হয় না। অথচ সেখান থেকেই মেশিনের দিয়ে বালু উত্তোলন করে ট্রাক হিসেবে বিক্রয় করে থাকেন বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত চক্রটি। বর্তমান মৌসুমে প্রচুর চাহিদা থাকায়ু ৬শ ফুট ধারণ ক্ষমতার ট্রাক ৯ হাজার টাকা ও ৪০০ ফুট ধারণ ক্ষমতার ট্রাক ৬ হাজার টাকা ধরে বিক্রি করছেন তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বালুর ট্রাক সমতলে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে!

যোগ্যাছোলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্যয়জরী মহাজন জানান, , ট্রাক ভর্তি অবৈধ বালু ও মাটি বহণ করার ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বহু কালভার্ট ভেঙ্গে পড়েছে। যার ফলে ছোটখাটো যানবাহন ও পথচারী চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যার ফলে সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে হালদা খালের উজানে একাধিক স্থান থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে পানির রং ও স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর এসব অপকর্ম করছেন এলাকার স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী চক্র। তাছাড়া রাতের আধারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির কাজেও জড়িত রয়েছে চক্রটি। তারা সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও হালদা নদী ও আন্তঃসড়ক গুলো রক্ষার্থে প্রভাবশালী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবী জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী জানান, একাধিকবার পাহাড় ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ব্যবসায়ীদেরকে জেল জরিমানা করা হলেও তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতের আধাঁরে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে। অনেক সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের পাওয়াও যায় না। তাছাড়া উপজেলার চেংগুছড়া, গোরখানা ও তুলাবিল এলাকায় তিনটি বৈধ বালুর পয়েন্ট রয়েছে। তবে এর বাইরে থাকা বেশি কিছু অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও যদি নতুন করে পাহাড় কাটা ও অবৈধ বালু উত্তোলন কিংবা ফসলি জমি থেকে মাটি বা বালু উত্তোলনের খবর পাই। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সচেনত মহল বলছেন, প্রত্যন্তঞ্চলের অসহায় মানুষকে বোঁকাবানিয়ে পুকুর করে দেয়া, জমি ভরাট করে ঘর নির্মাণ ও পাহাড়ে কেটে ঘর তৈরি করার পরামর্শ দিয়ে সুকৌশলে অর্থ উপার্জন করাই হলো পাহাড় খেকো ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রের মূল উদ্দেশ্যে। অথচ এসব কারণে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি, নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ জনপদে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সকড়। হুমকির মুখে পড়ছে হালদা খালের উৎপাদনশীলতা।