অকুস্থল মহালছড়ি উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
অব্যবস্থাপনা-অযত্নে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার ঔষধ, চিকিৎসা সামগ্রী
॥ চাইথোয়াই মারমা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অযত্নে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি ঔষধ। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা স্থানীয়রা নানান অসুবিধার সম্মুক্ষিণ হচ্ছেন। এসব নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীও অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্লোরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি ঔষুধ ও গুরুত্বপুর্ন চিকিৎসা সামগ্রী এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল্যাবান অন্যান্য সরঞ্জাম। এসবের বেশ কিছু বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রমও হয়েছে। আরো জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা রীতিমতো কর্মস্থলেও আসেন না, মাঝেমধ্যে আসলেও দুপুর ১২টায় প্রস্থান করেন। একাধিকবার স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও তাকে না পেয়ে ফেরত আসেন। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত এলাকার তথ্য জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে কোন তথ্যের জন্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তার নিয়োজিত মুখপাত্র সুরেশ বাবু ও লুনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
আরো জানা যায়, স্থানীয় উপজেলা পরিষদের মিটিং ও সভায় উপস্থিত থাকাটা যে কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, এটারও তোয়াক্কা করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দাপুটে জনৈক কর্মকর্তা। এক্সরে মেশিন সংস্কার ও মেরামত করার কথা শোনা গেলেও তা করা হয় নি বলে জানা যায়। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের এডভোকেসি, ওরিয়েন্টেশন, ওয়ার্কশপ সভাগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমান্য ব্যক্তি, হেডম্যান, কার্বারী, সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাগণের উপস্থিতি ছাড়াই এসব সভা সমাবেশগুলো তিনি নিজেদের কর্মচারী বা নিজস্ব লোক দিয়ে সম্পন্ন করেন বলেও জানা গেছে।
এছাড়াও এলাকায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা এলাকাবাসীর জানার অধিকার থাকলেও তোয়াক্কা করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তারা। স্যানিটারী ইন্সপেক্টর আছে বলে জানা গেলেও এলাকায় তার কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় বলেও জানা গেছে। জানা গেছে, মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চাকুরীরত তৃতীয় ও চতুর্থী শ্রেণির কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় চাকুরি করার ফলে তারা যথেচ্ছ চলার শিঁকড় গেড়ে বসেছেন। অনেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জায়গা জমি দখল করে বাড়ি স্থাপনা নির্মাণ করে ক্ষমতা ও দাপট দেখিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দায়িত্ব দিতে দেখা যায়। অনভিজ্ঞ ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব পালন করে অজ্ঞ কর্মচারী। টিকেট ও টোকেন দেয়ার বেলায়ও সুইপার-ঝাড়ুদারা দায়িত্ব পালন করে। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কর্মচারি কর্মস্থলে না এসে বাড়িতে বসে বেতন ও টিএডিএ ভোগ করছেন। করোনাকালীন ও বর্তমান সময়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ফ্লু কর্ণার অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাকালীন স্বাস্থ্য বিভাগ হতে প্রদত্ত মহালছড়ি উপজেলার এলাকার দূর্গত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে তিনি পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নেন। অথচ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বেলায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল বলে স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন। এছাড়াও আরো বহূ অনিয়মের বিষয়গুলো তদন্তের মাধ্যমে সনাক্ত করা যাবে বলে স্থানীয় অনেকেও জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা ডাঃ ধনিষ্টা চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হসপিটালে ষ্টোর রুম না থাকায় ঔষুধ পত্র আপাতত বারান্দায় রাখা হয়েছে। অস্থায়ী রুম ব্যবস্থা হলে স্বযত্নে নিরাপদে রাখা হবে। এছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।