[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

আলীকদমে কলা চাষে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হচ্ছে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর পরিবার

১১০

॥ সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ,আলীকদম ॥

বান্দরবানের আলীকদমে কলা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে পাহাড়ের বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর পরিবার গুলো। দূর্গম পাহাড়ি পথ ও নদী পথ পেরিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ কলা বিক্রির উদ্দেশ্যে শহরে নিয়ে আসেন স্থানীয় ক্ষুদ্র পাইকাররা।

তাদের উৎপাদিত কলা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসছে পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারে মাঝে। পাহাড়ে সব মৌসুমে কলা উৎপাদন হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে এর উৎপাদন বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন কলা চাষিরা।

পাহাড় অধ্যুষিত এলাকা প্রায় ৯০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলা আলীকদম। এর বিশাল অংশের পাহাড় জুড়ে কলা বাগান তৈরি করেছেন চাষিরা। তাদের দাবি,সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হলে কলা চাষ আরও বেশি সম্প্রসারিত হবে।

কলা ব্যবসায়ীরা জানান, আলীকদমে সপ্তাহের শনিবার পানবাজার, রবিবার মাতামুহুরি নদীঘাট, রেপারপাড়া এবং সোমবার আলীকদম বাজারে কলা কেনাবেচার হাট বসে। এসব বাজার থেকে স্থানীয় পাইকারদের হাত ধরে পাহাড়ি কলা ট্রাকে ও পিকআপে করে চকরিয়া কক্সবাজার কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যান বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
মাতামুহুরী ঘাট থেকে সপ্তাহের হাটবারে ১০ থেকে ১২ হাজার ছড়া কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়।

এদিকে আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে পাহাড়ে কলা চাষের উপযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও কলা চাষীরা বরাবরই উপেক্ষিত। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি কলার চাষ বাড়লেও বাড়েনি কলা চাষের সুযোগ-সুবিধা। দুর্গম অঞ্চলে যোগাযোগের কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় উপযুক্ত দাম মেলে না কলা চাষীদের।

উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে পোয়ামুহুরি এলাকায় গিয়ে কলা চাষী কম্পুং ম্রোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার ৮ একর জমিতে জলা চাষ করেছেন তিনি। এবার চাহিদা বাড়ায় জুম খেতে ধান,ভুট্টার সঙ্গে সমন্বিত ফসল হিসেবে কলা চাষ হচ্ছে। সপ্তাহে তিনি ১৫০ থেকে ২০০টি কলার ছড়া কাটেন। প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন এই কলার ছড়া। এই এলাকায় কলা আবাদে কীটনাশক ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কারণ এখান কার পাহাড়ের মাটি খুবই উর্বরতা শক্তি আছে।

কুরুকপাতা বাজার এলাকার কলা চাষি জন ত্রিপুরা, মেনলিও ম্রো, চংপ্ট ম্রো জানান, পাহাড়ে মাটিভেদে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ হয়। এর মধ্যে দুই জাতের কলার আবাদ বেশি হতে দেখা যায়। একটি দেশি জাতের বাংলা কলা। অন্যটি চম্পা কলা। এ ছাড়াও চাপা সরবি ও সাগর কলার আবাদ হয় এখানে। সারা বছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে ফলন মেলে সবচেয়ে বেশি।

চকরিয়া থেকে আসা ব্যবসাযী মোঃ জসিম উদ্দিন সওদাগর বলেন, সারা বছরই মাতামুহুরি নদী ঘাট ও পানবাজার এলাকা থেকে চকরিয়া ও কক্সবাজারের আশেপাশের উপজেলার বাজার গুলোতে কলা নিয়ে যান বিক্রির উদ্দেশ্য। এইসব কলা বিক্রি করে যে টাকা আয় রোজগার হয় সে টাকায় তিনি সংসার চালান বলে জানান।

করিম সওদাগর বলেন, বিগত সময়ে করোনার কারণে কলা ব্যবসায় ধস নামলেও এখন তা অনেকটা কেটে গেছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি বছর ১০০ পিস কলা প্রকার ভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনেছি। সমতলের জেলায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হয় এই কলা।

চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী কলিম উদ্দিন (৪৫) বলেন, সমতল এলাকার কলা আর পাহাড়ের কলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এখানকার কলা আকারে সমতলের কলার চেয়ে অনেক হৃষ্টপুষ্ট। তাই এখানকার কলা নিয়ে বাজারে বসে থাকতে হয় না। এগুলো সমতলের ক্রেতারা লুফে নেই। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের মাটিতে প্রাকৃতিক ভাবেই কলাগাছ বেড়ে ওঠে। শুধু চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে ফেলে দিলেই হয়। সার কীটনাশক ছাড়া চাষের কারণ এ কলার পুষ্টি অটুট থাকে। এর চাহিদাও বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় বলেন,পাহাড়ে যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কলা চাষ হচ্ছে। উপজেলা মোট ৮৮,৫৭৫ হেষ্টর জমির মধ্যে ১০,০০০ হেষ্টর জমিতে কলা চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে কাঠালী কলা (বাংলা কলা), বীজ কলা, চম্পা কলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কলাগুলোতে কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বলে স্বাদে ভরপুর।

কলা চাষে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় কী না জানতে চাইলে বলেন, সরকারে পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো চাষীকে বিশেষ কোনো প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে না। তবে কলা চাষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।