এবার বরকলে নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টা
গ্রাম্য সালিশে দশ হাজার টাকা জরিমানা সহ মুচলেখায় ছাড়
॥ নিরত বরন চাকমা, বরকল ॥
এবার রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে দুই যুবককে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ মুচলেখা নিয়ে ছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের গেত্যা মহাজন পাড়ায় এ সালিশ বৈঠক হয় বলে স্থানীয় সুত্র এবং গন্যমান্য ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সুত্র এবং গন্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনার বিষয়ে জানান, গত বুধবার সকাল ১০ টার দিকে ভূষণছড়া ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ড গেত্যা মহাজন পাড়া গ্রামের বামপ্লেন নামক এলাকার দুই যুবক মোঃ সূনু মিয়া (২৯) ও মোঃ রবিউল হোসেন (২৫) পানি খাওয়ার কথা বলে ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠির জনৈকা নারীর বাসায় প্রবেশ করে। এসময় দুই যুবক পানি খেতে চাইলে তিনি তাদেরকে পানি দিতে আসেন। পরে দুই যুবক বাড়িতে কাউকে না দেখে ঐ নারীকে প্রথমে শ্লীলতাহানি এবং পরে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। এসময় ঐ নারী তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে দুজনকে লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাদেরকে বরে করে দেয় এবং তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। ঐ নারীর স্বামী তখন ঔষুধ আনতে বাজারে গিয়েছিলেন বলে ঘটনার শিকার নারী জানিয়েছেন। পরে ঘটনায় জড়িত মোঃ সুনু মিয়া (২৯), পিতা মোঃ সোরাব আলীর ও মোঃ রবিউল হোসেন (২৫), পিতা মোঃ রোহিদকে স্থানীয়রা আটক করে। ঐ নারীর পরিবার ঘটনাটি স্থানীয় কার্বারীকে অবগত করলে কার্বারী, স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করে সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে থানায় মামলা না করে বাঙালি মুরব্বিদের বিষয়টি জানান। পরে উভয়ের সম্মতিক্রমে সুষ্ঠু বিচারের জন্য ১১জন সদস্য বিশিষ্ট বিচার কমিটি গঠন করা হয়। বিচার কমিটিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ডাঃ নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়।
পরে তারই নেতৃত্বে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে গ্রাম্য সালিশে পাহাড়ি বাঙালীর উপস্থিতিতে সাক্ষ্য প্রমাণে মোঃ রবিউল হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ঘটনার দিন তারা স্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট গাছ কিনতে সেখানে গিয়েছিল বলে জানান। আর রবিউল হোসেনও সালিশের মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনার শিকার ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠির নারীটির পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। কিন্তু রবিউল হোসেন গরীব হওয়ায় বাঙালি মুরব্বিদের অনুরোধে ডাঃ নজরুল ইসলাম ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং এ ধরনের ঘটনা পূনঃরাবৃত্তি করবে না বলে তার থেকে মুচলেখা আদায় করেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কার্বারী বলেন, গ্রামে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থাকায় ঘটনাটির তারা বাড়িতে ছিল না। ঘটনাটি বিকালে জানার পরে বিষয়টির ব্যাপারে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করেন। তারপর ডাঃ নজরুলের সাথে কথা বলে বিচার কমিটি গঠন করে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে বলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান। ঘটনার শিকার হওয়া নারীর স্বামী জানান, তিনি অসুস্থ হওয়ায় বাজারে ঔষধ আনতে গিয়েছিলেন। পরে বাড়িতে এসে বিষয়টি জানতে পারি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনায় জড়িত দুজন গাছ দেখতে গিয়েছিল। পানি খাওয়ার নাম করে এ ঘটনা ঘটালে মেয়েটা লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাদেরকে বের করে দেয়। পরে সকলে মতামতের ভিত্তিতে গ্রাম্য সালিশে জরিমানা ও মুচলেখা নেয়া হয়েছে। গ্রাম্য সালিশের কারনে পুলিশকে জানানো হয় নি।
এর আগে গত ৩১ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার স্কুল পড়ুয়া ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠির এক কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে থলিপাড়া এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ ও শ্লিলতাহানির ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা বিষয়টি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে ঐ কিশোরীর পিতা আল আমিনসহ অজ্ঞাত তিন জনকে আসামী করে মামলা করেন।
ই-পিসি/আর