কালেকশন পয়েন্টের মাধ্যমে ভালো দামে বিক্রি করছেন কৃষকরা
মানিকছড়ির অর্ধশত কৃষকের পেঁপে চাষে ভাগ্য বদল
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলা প্রত্যন্ত গ্রাম বাটনাতলী ইউনিয়নের সেম্প্রুপাড়া। সেখানকার প্রতিটি কৃষকই কম-বেশি কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে পেঁপে চাষের উপর বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। কেননা একটা সময় পেঁপের আবাদ কম হলেও বর্তমানে তা অনেক বেশি। দিনদিন পেঁপে চাষীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁপে’র লাভ তিনগুন কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। পেঁপের চারা রোপন, বীজ উৎপাদন থেকে শুরু করে বাগান পরিচর্যায় কৃষককে সহায়তা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ ও এসআইডি-সিএইচটি, ইউএনডিপির মাধ্যমে যৌথভাবে বাস্তবায়িত কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের বাজার সংযোগ কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের সুবিধার্থে দলগতভাবে পণ্য একত্রিত করে বিক্রিয় করার জন্য এলাকায় একটি মার্কেট কালেকশন পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া এই এলাকার কৃষকরা শাক-সবজি, আম, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন ধরণের কৃষি পণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত। কিন্তু একটা সময় একক ভাবে বিক্রি করার ফলে পণ্যের বাজার মূল্য সম্পর্কে যেমন বাজার মূল্য পেত না, তেমনি পরিবহন খরব ও অন্যান্য খরব বাবদ টাকা বেশি ব্যয় হওয়ার ফলে কৃষকরা লাভবান হতে পারতেন না। বর্তমানে কালেকশন পয়েন্টের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিক পণ্য সরাসরি আরোদদারদের নিকট বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের আরোদদার ও ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদানুযায়ী কালেকশন পয়েন্ট থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিচ্ছেন। যা কিনা ঐ এলাকার অর্থনীতিেিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উপজেলার সেম্প্রুপাড়া এলাকায় প্রথমে যৌথভাবে পেঁপে আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ঐ এলাকার যুবক মোঃ সাইফুল ও শামিম। তারা দুজন গত দুবছর পূর্বে ৪০ শতক জমিতে পেঁপের চাষ করেন। এতে তাদের ২ লাখ টাকা খরচ হয় এবং ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেন। এতে তাদের প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। পরের বছর আবার একই বাগান থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেন। তাদের এমন সফলতা দেখে বর্তমানে সেখানের প্রতিটি পরিবারে কমবেশি পেঁপের আবাদ হচ্ছে। সেখানে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের বাড়িতে পেঁপে গাছ নেই।
মোঃ আবু তাহের জানান, এবার তিনি প্রায় ১৩ কানি জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। পেঁপে উঠা পর্যন্ত কানি প্রতি খরচ হবে প্রায় ২-৩ লাখ টাকা আর বিক্রি হবে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা। এলাকার মোঃ জমির খান জানিয়েছেন, গত বছর প্রায় ৬০ শতক জমিতে তিনি পেঁপে লাগিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন। এবারও তিনি প্রায় ১২০ শতক জমিতে চাষ করেছেন। আরেক কৃষক দ্বীন ইসলাম বলেন, আমি গত বছর ৬০ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করতে ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছে। এতে আমি প্রায় তিন লাখ টাকা লাভবান হয়েছি। তাদের দেখে এলাকার অনেকেই এখন আগ্রহী হয়েছেন পেঁপে আবাদে। পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছেন অনেকে ।
কালেকশন পয়েন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফোরকান আলী জানান, শীজনে প্রতি সাপ্তাহে প্রায় ১০-১২টন পেঁপে কেনাবেচা হয় এখানে। এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিদিনই প্রায় ১০টনেরও অধিক পেঁপে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকা। সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেঁপে আবাদে বড় প্রতিবন্দকতাই হলো পানি। তাছাড়া কালেকশান পয়েন্টিও অনেক ছোট। ভরা মৌসুমে পেঁপেসহ উৎপাদিক পণ্য মজুদ রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই কালেকশান পয়েন্টি বৃহতাকারে নির্মাণ করা ও সেঁচে ব্যবস্থা সহজতর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এই এলাকার কৃষকরা আরো উদ্বুদ্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসিনুর রহমান জানান, একবার চারা লাগালে ৩ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। যার ফলে দিন দিন পেঁপে চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়াও বাজারে পেঁপের ব্যাপক চাহিদা থাকার পাশাপাশি ভাল দামও পাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার পেঁপে সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন।