খাগড়াছড়িতে শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির তীব্র সংকট
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
শুষ্ক মৌসুম এলে পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট। গেলো কয়েক বছর ধরে পানির সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়। এবারও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট।
মূলত দুর্গম এলাকায় নলকূপ না থাকায় স্থানীয়রা ঝরনা, ঝিরি, ছড়া, কুয়াসহ প্রাকৃতিক পানির উৎস খাওয়া থেকে ঘরের দৈনদিন কাজে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যায়। এতে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাও পর্যাপ্ত নয়। খাগড়াছড়ির কমবেশি সবখানে পানির সংকট থাকলেও মহালছড়ি, গুইমারা, লক্ষ্মীছড়ি, মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতিক খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এমনই চিত্র। এলাকার বাসিন্দা সাগরিকা ত্রিপুরা (৪৫) র দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়। তার বাড়ির কাছে জলের কোনও উৎস না থাকায়, তাকে প্রতিদিন পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়।
সাগরিকা বলেন, পানি সংগ্রহ করতে আধাঘণ্টা হাঁটতে হয় এবং বাড়ি ফিরতেও একই সময় লাগে। তার বাড়ির পাশের ঝর্ণা ও স্রোতে পানি পাওয়া যেত। তবে মৌসুমের জন্য উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। কলেজ শিক্ষার্থী কজিতা ত্রিপুরা এই প্রতিবেদককে জানান, শুষ্ক মৌসুম এলে পানির জন্য চিন্তা করতে হয়। অনেকে বিদ্যুৎ সাহায্যে পানি নিলেও তা ৯৯ভাগই পানি পান করে ঝরণা ও কূয়ার পানি। তাও পর্যাপ্ত নয়। পানছড়ির কলেজ শিক্ষার্থী হমেন ত্রিপুরা জানান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের জড়িত থাকার সুবাদে বিভিন্ন ত্রিপুরা পাড়ায় যাওয়ার সুযোগ হয়। সেসময়ে দেখা যায় মা-বোনেরা কষ্ট করছে পানির জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে পানির ব্যবস্থা করতে গেলেও পাথুরে হওয়ায় সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত তারা। তাদের জন্য
মূলত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো ঝিরি, ছড়ার পানির উপর নির্ভরশীল। ছড়ায় কূপ খনন করে কিংবা পাহাড় থেকে চুইয়ে পড়া পানির মুখে বাঁশ বসিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করতো। যা দিয়ে খাওয়া, রান্নাবান্নাসহ সংসারের দৈনদিন কাজ চলতো। তবে এখন প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে পানি নেই। উৎসগুলো অনেকটা মৃত। বর্তমানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোঁটা ফোঁটা পড়া পানিগুলো সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা।
খাগড়াছড়ির জনস্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গভীর নলকূপ ও চাপা নলকূপের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। জেলার জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে পানি সরবরাহ করা সম্ভব। দেশের তিন পার্বত্য জেলা- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি-দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পানীয় জলের সংকটে ভুগছে। অনেক এলাকায় নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আইয়ুব আলী আনসারি বলেন, আলুটিলা পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় নলকূপ স্থাপনের জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। ১২-১৩শ ফুট খনন করেও পানি খুঁজে পাইনি। শীঘ্রই পাহাড়ের মানুষের জন্য একটি প্রকল্প চালু করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।