সন্ত্রাসীদের চাঁদা পরিশোধ না করায় কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ
॥ কাপ্তাই উপজেলা প্রতিনিধি ॥
সন্ত্রাসীর দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ না করায় রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীর মাছ আহরণ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছে কাপ্তাই লেকে সংশ্লিষ্ট খুচরা ও পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী, মাঝি, শ্রমিক সহ পেশাজীবী হাজারও মানুষ।
কাপ্তাই মৎস্য ব্যবসায় সমিতির নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, পাহাড়ের একটি সশস্ত্র গ্রুপ আমাদের কাছে ৮ লক্ষ টাকার চাঁদা দাবি করে। ওই গ্রুপ ছাড়াও আরও মোট ৪টি গ্রুপের জন্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবি উঠে। বুধবার (২৬ই আগস্ট) পর্যন্ত ছিল এই চাঁদা প্রদানের আলটিমেটাম দেওয়া সময়। এই সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় তারা জেলেদের মোবাইলের মাধ্যমে বলে তোমরা আর জাল মারিওনা। যার ফলে বৃহস্পতিবার (২৭আগষ্ট) হতে জেলেরা মাছ,আহরণ ও বিপণন বন্ধ রেখেছে।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মাঝি এই প্রতিনিধিকে বলেন, সন্ত্রাসী কয়েক গ্রুপ মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দেওয়ায় হুমকি প্রদান করে মাছ শিকার বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি আরও জানান, তার মাধ্যমে দেড় শতাধিক শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের কাজ করতে এসেছে। এখন যেহেতু মাছ মারা বন্ধ করতে হচ্ছে তাই এদের সবাইকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই লেকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দীর্ঘ ৩’মাস ১০’দিন মাছ আহরণ থেকে বিরত ছিল রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা তোলায় স্বস্থি মিললেও সন্ত্রাসী দাবিকৃত চাঁদা যেন এখন আবার মরার উপর খড়ার ঘাঁ এ পরিণত হয়েছে।
কাপ্তাইয়ে মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, কাপ্তাইয়ের মাছ ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, চট্টগ্রাম সহ দেশের বাহিরে পর্যন্ত যায়। এ খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পেয়ে থাকে।
আরেক ব্যবসায়ী নেতা এই প্রতিনিধিকে বলেন,কাপ্তাই লেকে জাল থেকে মাছ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত হাজারও লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে চাঁদার ভারে কাপ্তাই লেকে যদি মাছ আহরণ চিরতরে বন্ধ হয় তাহলে দেশের আমিষের চাহিদায় বড় প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হারাবে এই পেশায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং হাজারো জেলে।
মৎস্য শ্রমিক আলাউদ্দিন, নাদির মিয়া, তোফাজ্জল, জয়নাল আবেদীন সহ আরও অনেকে এই প্রতিনিধিকে বলেন, জীবনে মাছ সংশ্লিষ্ট ছাড়া আর কোন কাজই শিখিনি। গত ৩মাছ মাছ ধরা বন্ধ থাকা ও লকডাউনের প্রভাবে কষ্টে কেটেছে তাদের দিন। এখন আবার মাছ ধরা বন্ধ করছে ব্যবসায়ীরা। তাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জানা বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ওনাকে কেউই এই বিষয়ে অবহিত করেননি।
এদিকে কাপ্তাই থানার ওসি নাছির উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ই-এন/আর