লামায় ভূমি হস্তান্তরে এলআর ফান্ডের নামে বিধি বহির্ভুত ৩ শতাংশ টাকা আদায়
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
বান্দরবানের লামা উপজেলায় ভূমি হস্তান্তরে প্রথম কিস্তিতে বায়না নামায় ১.৫% এবং ২য় কিস্তিতে সাফ কবলা দলিল সম্পাদনের সময় ১.৫% মোট ৩ শতাংশ টাকা এলআর ফান্ডের নামে বিধি বহির্ভুতভাবে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে জমি ক্রেতা বিক্রেতারা হয়রানিে শিকার হচ্ছেন বলে জানা যায়।
লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়ায় স্থানীয় জনসাধারন নিজেরা আর্থিক অনুদান দিয়ে কবরস্থানের জন্য কিছু জায়গা ক্রয় করেছেন। কবরস্থানের জন্য ক্রয়কৃত এই জায়গার দলিল সম্পাদনের জন্য লামা ভূমি রেজিষ্ট্রেশন শাখায় গেলে কর্মরত রেজিষ্ট্রেশন সহকারী সুমন কর্মকার জানান, দলিল সম্পাদনে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত দলিল মূল্যের ৩% টাকা দিতে হবে। তার মধ্যে প্রথম কিস্তিতে বায়না নামায় ১.৫% এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে সাফ কবলা দলিল সম্পাদনের সময় ১.৫% টাকা। এছাড়া দলিল প্রতি আরো এক হাজার টাকা অফিস খরচ হিসেবে দিতে হবে।
অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ার জন্য কবরস্থান কমিটি অনুরোধ করলে সুমন কর্মকার আরো জানান, আমরা জেলা অফিসে এরকম প্রেক্টিস করি। ৩% টাকা দিতেই হবে। সে জানায় জনতা ব্যাংক বান্দরবান শাখার হিসাব নং- ০৬৩৩০০২০৩৩০৯৪ নম্বরে টাকা জমা দিয়ে জমার স্লিপ রেজিষ্ট্রি আবেদনের সাথে দিলেই কেবল বায়না নামা বা সাফ কবলা দলিল সম্পাদন করা হবে। সে আরো জানায়, আপনাদের কোন কথা থাকলে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানান। একই ভাবে লামা পৌর সদরের একটি মসজিদের জায়গার দলিল সম্পাদন করতে গেলে মসজিদ কমিটিকে ও সে একই কথা জানায়।
বান্দরবান জেলার সর্বাধিক জনবহুল উপজেলা লামা। এই উপজেলায় প্রতিবছর কম বেশি এক হাজার অধিক ভূমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন হয়। দলিল লিখক সুমধু বড়ুয়া জানান, গত ১০ আগষ্ট রেজিষ্ট্রেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মোঃ কায়েসুর রহমান দলিল লিখকদের নিয়ে মিটিং করে জানিয়েছেন প্রতি সপ্তাহে দুই দিন দলিল রেজিষ্টেশন করা হবে। দলিল রেজিষ্ট্রি কার্যক্রমে বায়না নামায় ১.৫% এবং সাফ কবলায় ১.৫% টাকা অবশ্যই দিতে হবে বলে তিনি পিটিশন রাইটারদের জানিয়েছেন। লামা উপজেলায় দলিলের টাকা জমা দেওয়ার জন্য জনতা ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বার ০৬৩৩০০২০৩৩০৯৪ কম্পিউটারের টাইপ করে রেজিষ্ট্রি অফিসের দরজায় ও দেওয়ালে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আলীকদম উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি ও দলিল লিখক জানিয়েছেন সেখানে ও বায়না নামায় ১% এবং সাফ কবলা ১% টাকা নগদ আদায় করা হয়।
নারী নেত্রী ও সমাজ কর্মী জাহানারা আরজু ও সার্ক মানবাধিকার ফাউডেশন বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক এম. রুহুল আমিন জানান, সরকারি বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে দলিল মূল্যের ৩% টাকা আদায় করায় ভূমি ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্থ এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাছাড়া লামার মত একটি জনবহুল উপজেলায় সপ্তাহে মাত্র দুই দিন রেজিষ্ট্রি করলে জন দূর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। লামা উপজেলায় সরকারি নিয়মের বাহিরে গিয়ে একটি ব্যাংক হিসাব নম্বার দিয়ে আদায়কৃত ৩% টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয় না এবং এই টাকা সরকারি কোন অডিট হয় না বলে তারা জানান। বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে ভূমি হস্তান্তেরে এই টাকা আদায়ের বিষয়ে তাঁহারা ভূমি মন্ত্রনালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এ্যাডভোকেট মোঃ মামুন মিয়া জানান, সরকার নিধারিত নিয়মের বাহিরে গিয়ে চাপ প্রয়োগ ও বাধ্য করে যে কোন নামে টাকা আদায় দূনীর্তি এবং অনিয়মের পর্যায় ভুক্ত। এই বিষয়ে জনভোগান্তি যাতে না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সচেতন হওয়া জরুরি।
লামা উপজেলায় ভূমি রেজিষ্ট্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মোঃ কায়েসুর রহমান জিজ্ঞাসায় বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমি এই টাকা নিচ্ছি। শুধু মাত্র জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে কাজ করছি। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশিদ জানান, ভূমি রেজিষ্ট্রেশন অফিসে কি হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল এই বিষয়ে এই প্রতিবেদক বলেন, সরকারি বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে কি কারণে এত বিপুল পরিমান টাকা আদায় করা হচ্ছে তা আমি জানি না। বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ শফিউল আলম জিজ্ঞাসায় জানান, লামায় ভূমি হস্তান্তর রেজিষ্ট্রেশনে এইভাবে টাকা আদায়ের বিষটি তিনি অবগত নন।
বান্দরবান জেলা প্রসাশক মোঃ দাউদুল ইসলাম গত ১৩ আগষ্ট দুপুরে সাংবাদিককে লামার ভূমি রেজিষ্ট্রেশন অফিস কর্তৃক এইভাবে টাকা আদায়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।