শিরোনাম
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শুরুদীঘিনালায় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপনকৃষিজমিতে পোকা দমনে যুগান্তকারী উদ্যোগ হলুদ ফেরোমন ফাঁদজেলা পরিষদের উদ্যোগে মাটিরাঙ্গায় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তাখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দোকানের কর্মচারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্বাররাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিতম্রোদের জায়গায় রিসোর্ট করতে উইচারা ভান্তে ও হেডম্যান মংক্যনু’র নেতৃত্বে সন্ত্রাসী তান্ডবও চালায়যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রোয়াংছড়ি হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার বিতরণভালোবাসার টানে রুরাম ম্রো বিয়ে করলো লামার টনি ত্রিপুরাকেখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সেনা অভিযানে চোলাই মদ উদ্ধার

কৃষিজমিতে পোকা দমনে যুগান্তকারী উদ্যোগ হলুদ ফেরোমন ফাঁদ

॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
হলুদ ফেরোমন ফাঁদ কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড় দমনে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসল সুরক্ষার এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে সবজি ও ফল চাষে এটি দিচ্ছে চমৎকার ফলাফল ফসলের উৎপাদন বাড়ছে, বিষমুক্ত সবজি নিশ্চিত হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার কৃষকরা এই ফাঁদ ব্যবহার করে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদনে সফল হয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন ফলে উৎপাদন খরচ কমে মুনাফা বাড়ছে।

মাটিরাঙ্গার চড়পাড়া গিয়ে দেখা মিলে, এ হলুদ ফাঁদের। কৃষক আব্দুর রব নিজের সবজি জমিতে স্থাপন করেছেন হলুদ ফেরোমন ফাঁদ। বিশেষ আঠাযুক্ত এই হলুদ ফাঁদগুলোতে আটকে আছে সাদা মাছি, ফল মাছি, ছোট মথজাতীয় পোকা, পাতামোড়ানো পোকার মতো বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড়। তিনি জানান, আগের মতো এখন আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এসব ফাঁদ ব্যবহার করে খুব সহজে জমির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। এতে একদিকে ফসল ভালো থাকছে, অন্যদিকে খরচও কমছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগে অংশ নিয়ে কৃষকরা পেয়েছেন নতুন আশার আলো। মাঠে ফাঁদ স্থাপন করতেই এর কার্যকারিতা চোখে পড়ে বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে ধরা পড়ছে, ফলে ফসল থাকছে নিরাপদ ও কীটনাশকমুক্ত।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফাঁদ ফলের মাছি, বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, সাদা মাছি, পাতামোড়ানো পোকার মতো বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। একই সঙ্গে এটি উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি করে না, ফলে কৃষিক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে।

কৃষক সোলাইমান বলেন, আগে পোকা দমন করতে বারবার কীটনাশক দিতে হতো। এখন ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা অনেক কমেছে, ফসলও ভালো হচ্ছে। এতে খরচ কমে গেছে। রমিজ মিয়া বলেন, হলুদ ফাঁদ সম্পর্কে তিনি বলেন, হলুদ রংয়ে আকৃষ্ট হয়ে পোকাগুলো বসলেই আটকে যায়। পোকা দমনে হলুদ ফাঁদ পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। চাষি জমিন উদ্দিন বলেন, আগে মাছি পোকার আক্রমণে আমার ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেত। এখন হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করার পর ক্ষেতে পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে, আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, সাধারণত ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করলে ক্ষতিকর এবং উপকারী দুই ধরনের পোকা মারা যায়। হলুদ ফাঁদ ব্যবহারে শুধু ক্ষতিকর পোকা মারা যায়। এ পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত সহজ এবং খরচও অনেক কম। সবজি ক্ষেতের জন্য এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সবুজ আলী বলেন, ফেরোমন ফাঁদ পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তি। এতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে আসে, ফলে কৃষকরা নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে পারছেন। আমরা কৃষকদের এ প্রযুক্তিতে আরও উদ্বুদ্ধ করছি। তিনি আরো বলেন, কীটনাশাক ব্যবহার করে উৎপাদিত সবজি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একারণে আমরা কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে উৎসাহিত করছি।