রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে গড়েউঠা করাতকলে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চলের গাছ
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে নিয়ম-নীতি না মেনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু করাত কল। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশের এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা এসব করাতকলে হরহামেশা চিরাই করা হচ্ছে বনের গাছ। গজিয়ে উঠছে একেরপর এক করাত কল। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে জনমনে। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র, মানা হচ্ছেনা নির্দিষ্ট বিধিমালা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ‘মাসোহারা’ দিয়ে এসব করাতকল পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে যত্রতত্র অবৈধ করাতকল স্থাপনের বিষয়টি স্বীকার করলেও মাসোহারা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রশাসনের ও বনবিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তবে শিগগির যৌথ অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে বিলাইছড়ি উপজেলায় কেংড়াছড়ি, বিলাইছড়ি সদর এলাকায় ঘুরে যত্রতত্র অবৈধ করাতকল স্থাপন করতে দেখা গেছে। ২ নম্বও কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে কবির হোসেন, আব্দুল বারেক, গোলাম মোস্তফা, মিনজারুল চারজনের একটি, মহল আলীর দুটি, ভূবনজয় তঞ্চঙ্গ্যার একটি, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অমর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার একটি, মন্তু চাকমার দুটি, সুনিল কান্তি দেওয়ানের একটিসহ ৮টি করাতকল দেখা গেছে এসব করাত কল আদো অনুমোদিত ন এবং এগুলোর মধ্যে কোনোটিরই নেই কোন লাইসেন্স।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে এসব করাতকল গড়ে ওঠায় সহজেই বনের গাছ এসব করাতকলে আসে। এরপর কাঠ চেরাই হয়। সেই কাঠ দিয়ে ফার্নিচারসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হয়ে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বেশিরভাগ সময় রাতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ আসে। অবৈধ হওয়ায় এসব করাতকলে হিসাব হয় না যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কী পরিমাণ কাঠ আসে। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ এসব করাতকলে এসে কাঠ আটক করে। তবে বেশিরভাগ সময় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই বনাঞ্চল থেকে কাঠ এসে অবৈধ করাতকলে চেরাই হচ্ছে।
জানতে চাইলে‘ স মিল’ মালিক ২ং কেংড়াছড়ি ইউপি সদস্য মহল আলী ও এলাকার মোঃ কবির হোসেন বলেন, সবাই যেভাবে পরিচালনা করছে, আমরাও সেভাবে করছি। এখানে তো কারই করাতকলের লাইসেন্স নেই। আমরা গরিব মানুষ, এখানে আয়-রোজগারের তেমন কিছু নেই। তাই প্রশাসন এ বিষয়ে আমাদেরকে ছাড় দেয়। লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, মাঝে মধ্যে প্রশাসন ও বনবিভাগ এসে অভিযান চালালেও প্রশাসন আসার আগেই আমরা জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলি। এছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক আছে। তাই তেমন সমস্যা হয় না। আমরা লাইসেন্সের জন্য কাগজপত্র সব জমা দিয়েছি কিন্তু লাইসেন্স এখনো পায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ‘স মিলের মালিক বলেন, দশ-বার বছর আগে থেকে অনেকেই লাইসেন্সবিহীন করাতকল চালাচ্ছে। তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমার মিলটি মাত্র তিন বছর হয়েছে। লাইসেন্সের জন্য আমি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি।
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক বন কর্মকর্তা বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কোনো করাতকল চালাতে দেওয়া হবে না। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত করে অবৈধ সব করাতকল উচ্ছেদ করা হবে।